ধূমপান বিষপান– এই স্লোগানের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। তার পরও তামাক চাষ আমাদের দেশে একটি অর্থকরী ফসলের মর্যাদা পাচ্ছে। ফলে দিন দিন এর চাষ বাড়ছে। তামাক চাষের মাধ্যমে আমাদের কৃষক অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা লাভবান হলেও এটি যেভাবে পরিবেশ, জলবায়ু, কৃষি, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছেম তা প্রাপ্ত অর্থনৈতিক মূল্যের সঙ্গে মেলালে দেখা যায় যে, আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। 

২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কৃষি বিপণন আইন প্রণয়ন করে। সেই আইনের তপশিলে বিভিন্ন ধরনের শস্যকে অর্থকরী ফসলের মর্যাদা দেওয়া হয়। সেখানে ক্ষতিকারক পণ্য তামাকও অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এ পণ্যের আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার তামাকবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করা একটি দেশ। তামাকবিরোধী এই আন্তর্জাতিক সনদের প্রধান লক্ষ্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার বন্ধ বা কমানোর উদ্যোগ নেবে।
তামাক চাষ আমাদের জন্য মোটেও লাভজনক নয়– তার একটি বড় উদাহরণ হলো এর পরিবেশগত দিক। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটি প্রমাণিত– যেসব এলাকায় এ ফসলের চাষ করা হয়; সেসব এলাকার মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। টানা চার-পাঁচ বছর তামাক চাষ করলে মাটির উপরিভাগ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তামাক চাষ করার কারণে প্রচুর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। ফলে মাটির অম্লতা নষ্ট হয়। যে জমিতে তামাক চাষ করা হয় শুধু সেই জমিই ক্ষতির শিকার হয় না, আশপাশের জমিরও পুষ্টিমান নষ্ট হয়। ফলে এমন একটা পর্যায়ে চলে যায়, সেখানে আর কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হয় না, যা একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি।

তথ্য বলছে, তামাক উৎপাদনের বৈশ্বিক অবস্থানে বাংলাদেশ ১২তম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২২ ও ২৩ সালে ২৬,৪৭৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়। এত পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে, এতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশে যে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার হেক্টর এলাকায় তামাক চাষ করা হয়েছে; সেখানে যদি ধান চাষ করা হতো, তাহলে বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ৩২ হাজার টন ধান উৎপাদন সম্ভব হতো।

হিসাবের ব্যাখ্যা হলো এ রকম, প্রতি হেক্টর জমিতে পাঁচ টন ধান উৎপাদন হলে ২৬,৪৭৫ হেক্টর জমির উৎপাদনের একটি পরিসংখ্যান। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, প্রতি বছর ১৪ শতাংশ হারে তামাক চাষ বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তামাক চাষের আরেকটি উদ্বেগের কারণ হলো, জলবায়ু বিপর্যয়ে এর অবদান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, একটি সিগারেট ১৪ গ্রাম কার্বন নিঃসরণ করে। প্রতিটি গাছের তামাক ৩০০টি সিগারেট উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। সে পরিসংখ্যান অনুযায়ী একটি তামাক গাছ ৪২০০ গ্রাম কার্বন নিঃসরণ করে, যা আমাদের জলবায়ু বিপর্যয়ে প্রধান ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি তামাক চাষের জন্য অনেক বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি, তামাক চাষের জন্য বাংলাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ হারে বনভূমি ধ্বংস করা হয়। তামাক চাষের জন্য বন উজাড় করার ক্ষেত্রে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এভাবেও তামাক আমাদের জলবায়ু ও অর্থনীতিকে বিনষ্ট করছে।
তামাক চাষের অর্থনৈতিক মর্যাদা বন্ধে অনেক সংগঠন দীর্ঘদিন আন্দোলন করছে। তামাক চাষের তাৎক্ষণিক কিছু লাভ আছে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি অনেক বেশি, যা অর্থনীতি, নৈতিকতা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য প্রভৃতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতি। 

তালুকদার রিফাত পাশা: পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব
ওয়েলবিইং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.

com.
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ম ক চ ষ কর র জন য আম দ র জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে আগুনে পুড়ল ১১টি দোকান ও একটি কারখানা

নোয়াখালীর সেনবাগে একটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, গোডাউনসহ অন্তত ১১টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১টার দিকে উপজেলার সেবারহাট বাজারে ঘটনাটি ঘটে। 

ফায়ার সার্ভিসের সেনবাগ, চৌমুহনী ও মাইজদীর পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাত ১টার দিকে সেবারহাটে একটি আসবাবপত্র তৈরির কারখানা থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন আশপাশের ১১টি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

আরো পড়ুন:

নেত্রকোণার ধলাই নদীতে বাল্কহেড ডুবে ২ শ্রমিক নিখোঁজ

মানিকগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানার আগুন, ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি

আগুনে আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, মেশিনারিজ সামগ্রী, থাই অ্যালুমিনিয়াম পণ্য বিক্রির দোকানসহ অন্তত ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  

সেনবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো.সাব্বির হোসেন বলেন, ‍“পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষয়ক্ষতি ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্ত শেষে বলা যাবে।” 

ঢাকা/সুজন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ