তামাকের অর্থনৈতিক মর্যাদা কেন বন্ধ নয়?
Published: 9th, May 2025 GMT
ধূমপান বিষপান– এই স্লোগানের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। তার পরও তামাক চাষ আমাদের দেশে একটি অর্থকরী ফসলের মর্যাদা পাচ্ছে। ফলে দিন দিন এর চাষ বাড়ছে। তামাক চাষের মাধ্যমে আমাদের কৃষক অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা লাভবান হলেও এটি যেভাবে পরিবেশ, জলবায়ু, কৃষি, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছেম তা প্রাপ্ত অর্থনৈতিক মূল্যের সঙ্গে মেলালে দেখা যায় যে, আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কৃষি বিপণন আইন প্রণয়ন করে। সেই আইনের তপশিলে বিভিন্ন ধরনের শস্যকে অর্থকরী ফসলের মর্যাদা দেওয়া হয়। সেখানে ক্ষতিকারক পণ্য তামাকও অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এ পণ্যের আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার তামাকবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করা একটি দেশ। তামাকবিরোধী এই আন্তর্জাতিক সনদের প্রধান লক্ষ্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার বন্ধ বা কমানোর উদ্যোগ নেবে।
তামাক চাষ আমাদের জন্য মোটেও লাভজনক নয়– তার একটি বড় উদাহরণ হলো এর পরিবেশগত দিক। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটি প্রমাণিত– যেসব এলাকায় এ ফসলের চাষ করা হয়; সেসব এলাকার মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। টানা চার-পাঁচ বছর তামাক চাষ করলে মাটির উপরিভাগ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তামাক চাষ করার কারণে প্রচুর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। ফলে মাটির অম্লতা নষ্ট হয়। যে জমিতে তামাক চাষ করা হয় শুধু সেই জমিই ক্ষতির শিকার হয় না, আশপাশের জমিরও পুষ্টিমান নষ্ট হয়। ফলে এমন একটা পর্যায়ে চলে যায়, সেখানে আর কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হয় না, যা একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি।
তথ্য বলছে, তামাক উৎপাদনের বৈশ্বিক অবস্থানে বাংলাদেশ ১২তম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২২ ও ২৩ সালে ২৬,৪৭৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়। এত পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে, এতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশে যে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার হেক্টর এলাকায় তামাক চাষ করা হয়েছে; সেখানে যদি ধান চাষ করা হতো, তাহলে বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ৩২ হাজার টন ধান উৎপাদন সম্ভব হতো।
হিসাবের ব্যাখ্যা হলো এ রকম, প্রতি হেক্টর জমিতে পাঁচ টন ধান উৎপাদন হলে ২৬,৪৭৫ হেক্টর জমির উৎপাদনের একটি পরিসংখ্যান। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, প্রতি বছর ১৪ শতাংশ হারে তামাক চাষ বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তামাক চাষের আরেকটি উদ্বেগের কারণ হলো, জলবায়ু বিপর্যয়ে এর অবদান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, একটি সিগারেট ১৪ গ্রাম কার্বন নিঃসরণ করে। প্রতিটি গাছের তামাক ৩০০টি সিগারেট উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। সে পরিসংখ্যান অনুযায়ী একটি তামাক গাছ ৪২০০ গ্রাম কার্বন নিঃসরণ করে, যা আমাদের জলবায়ু বিপর্যয়ে প্রধান ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি তামাক চাষের জন্য অনেক বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি, তামাক চাষের জন্য বাংলাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ হারে বনভূমি ধ্বংস করা হয়। তামাক চাষের জন্য বন উজাড় করার ক্ষেত্রে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এভাবেও তামাক আমাদের জলবায়ু ও অর্থনীতিকে বিনষ্ট করছে।
তামাক চাষের অর্থনৈতিক মর্যাদা বন্ধে অনেক সংগঠন দীর্ঘদিন আন্দোলন করছে। তামাক চাষের তাৎক্ষণিক কিছু লাভ আছে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি অনেক বেশি, যা অর্থনীতি, নৈতিকতা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য প্রভৃতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতি।
তালুকদার রিফাত পাশা: পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব
ওয়েলবিইং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ম ক চ ষ কর র জন য আম দ র জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে মাস্ক বাধ্যতামূলক, দুই ঘণ্টার জন্য থাকবে ১৪৪ ধারা
দেশে করোনার প্রকোপ থাকায় এবার এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের আওতায় ৫ জেলার ১১৫টি কেন্দ্রে এবার পরীক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত মাস্ক ও স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নকল প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কেন্দ্রগুলোর আশপাশে দুই ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।
বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীন পাঁচ জেলায় মোট ১১৫টি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায়। চট্টগ্রাম বোর্ডে এ বছর সব মিলিয়ে ১ লাখ ২ হাজার ৯৭৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় পরীক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি।
শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে মাস্ক পরে আসা বাধ্যতামূলক। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে অন্তত ৩-৪ বাক্স অতিরিক্ত মাস্ক রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্র সচিবদের প্রতিটি কেন্দ্রে স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের আশপাশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল প্রতিরোধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে নগরের সব পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকে শেষ হওয়ার পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত পরীক্ষাকেন্দ্রের নির্ধারিত এলাকায় ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৬৯টি, কক্সবাজারে ১৭টি, বান্দরবানে ৮টি এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ১০টি করে কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৪ জন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
এ বছর চট্টগ্রাম জেলায় মোট পরীক্ষার্থী আছেন ৭১ হাজার ৯৪৭ জন। চট্টগ্রাম নগরে এবার পরীক্ষার্থী ৪৮ হাজার ৪৮০ জন। অন্যদিকে কক্সবাজারে ১২ হাজার ৮৪৪, রাঙামাটিতে ৫ হাজার ৫৮২, বান্দরবানে ৩ হাজার ৮৭৮ ও খাগড়াছড়িতে ৭ হাজার ১২১ জন। চট্টগ্রাম নগরে চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজসহ মোট ২৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, করোনা ও ডেঙ্গু বিবেচনায় বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি কেন্দ্রেও মাস্ক ও স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের প্রবেশমুখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।