গরম আজও কমবে না, কাল বৃষ্টির পূর্বাভাস
Published: 11th, May 2025 GMT
গরমে নাজেহাল সারাদেশের মানুষ। স্বস্তি নেই কোথাও। ভোর কিংবা রাতেও গরমের তেজ কমছে না। টানা তিন দিন ধরে দাবদাহে পুড়ছে দেশ। নেই বৃষ্টির দেখা। গতকাল দেশের ৬২ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় তাপপ্রবাহ। আজ রোববারও দেশের তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে। আগামীকাল দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়ে গরম কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। শুক্রবার ৪৫ জেলায়, শনিবার ৬২ জেলায়, আজ রোববারও দেশের অধিকাংশ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে গতকাল বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আজ রোববার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও যশোর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে ।
সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
আজ ঢাকার বাতাস পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হবে। সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।
আজ ঢাকায় সূর্যান্ত সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ১৭ মিনিটে।
সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দুপুর ১২টায় রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ছিল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স লস য় স প রব হ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণকে জিম্মি করা যাবে না কোনোভাবে
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলোর অনলাইন জরিপে উঠে আসে, দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি কোনোভাবেই সমর্থন করেন না ৯৩ শতাংশ মানুষ। জরিপে প্রশ্ন করা হয়, ‘বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি সমর্থন করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে ৯৩ শতাংশ মানুষ ‘না’ বলেছেন।
প্রায় প্রতিদিনই নিত্যযানজটের এই ঢাকা শহরে সড়ক বন্ধ করে কোনো না কোনো সংগঠন কর্মসূচি পালন করে থাকে। আবার কখনো শিক্ষার্থীদের সংঘাতে কিংবা শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনের জের ধরেও সড়ক–মহাসড়ক বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা তিন দিন আন্দোলনের পর শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ ছাড়েন। কিন্তু রোববারও সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা অবস্থান নেওয়ায়।
শুধু ঢাকা শহর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ করে সমাবেশ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। রোববার গাজীপুরের দুটি পোশাক কারখানা-স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ানস বিডির শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। দুই কারখানায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন এবং তাঁদের ১৪ মাসের বকেয়া পড়েছে। এর আগের দিন গাজীপুর মহানগরীর মাস্টারবাড়ি এলাকায় বাসচালকের সহকারীর ধাক্কায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
যেদিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এনসিপিসহ কয়েকটি সংগঠন সমাবেশ করল, সেদিনই ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয়।
কিন্তু সরকারের কাজ তো কেবল বিজ্ঞপ্তি বা সদুপদেশ দেওয়া নয়। মানুষ নির্দেশনা মানছে কি না, সেটাও তাদের দেখতে হবে। আরও উদ্বেগজনক ঘটনা হলো সরকার কোনো পক্ষের দাবি তখনই মানে, যখন তারা সড়ক বন্ধ করে আন্দোলনে নামে। যদি তাদের দাবি ন্যায়সংগত হয়, সড়ক বন্ধ করার আগে কেন মানা হবে না? ৯ মাস পরও জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দাবিতে যদি রাজপথে আন্দোলন করতে হয়, সেটা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের লজ্জার ঘটনাই বটে।
দাবি আদায়ে আন্দোলন করা বা কর্মসূচি নেওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে, জনগণ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে। ঢাকা শহরে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে যান চলাচল বন্ধ থাকলে পুরো শহরই অচল হয়ে পড়ে। কয়েক দিন আগে তেজগাঁওয়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
ভবিষ্যতে ঢাকা শহর অচল কিংবা জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি হয়, এমন কর্মসূচি থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন বলে আশা করি। ন্যায়সংগত দাবি আদায় করতে জনগণকে জিম্মি করার মতো অন্যায্য পথ কখনো কাম্য নয়। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।