Samakal:
2025-10-03@02:43:28 GMT

আমার জীবনদায়ী মা

Published: 11th, May 2025 GMT

আমার জীবনদায়ী মা

‘মধুর আমার মায়ের হাসি/ চাঁদের মুখে ঝরে,/ মাকে মনে পড়ে আমার/ মাকে মনে পড়ে।/ ... সেই যে আমার মা/ সেই যে আমার মা/ বিশ্বভুবন মাঝে তাহার/ নেই কো তুলনা।’
সত্যিই বিশ্বভুবন মাঝে মায়ের কোনো তুলনা হয় না। এ পৃথিবীতে সব সন্তানের কাছেই তাদের মা অতুলনীয়। মায়ের আজন্ম ঋণ কোনো সন্তান কোনোদিন পরিশোধ করতে পারে না। মায়ের একফোঁটা দুধের দাম গায়ের চামড়া কেটে দিলেও কোনোদিন কোনো সন্তান তার মাকে দিতে পারে না। মাকে নিয়ে লিখতে গেলেও কাগজ ও কালি ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু মায়ের ঔদার্য ও মহানুভবতার কথা শেষ করা যাবে না। মা সব সময় ও যে কোনো পরিস্থিতিতে তাঁর সন্তানের মঙ্গল কামনায় রত থাকেন– বিনিময়ে মা কিছুই চান না। 
এ পৃথিবীতে কোনো সন্তান কোনোদিন তার মায়ের প্রতিদান দিতে পারে না, পারবেও না। আমিও আমার জীবনদাত্রী মায়ের প্রতিদান দিতে পারিনি, যদিও তিনি আমায় নবজীবন দান করেছেন। রংপুর শহরের সেনপাড়ার নানাবাড়িতে মা আমার জন্মকালে সাত মাসের এক অপুষ্ট শিশুসন্তান প্রসব করেছিলেন। সে সময় আমার বাঁচার কোনো সম্ভাবনা ছিল; না কিন্তু আমার মা ছিলেন প্রবল ইচ্ছাশক্তির অধিকারী এক অদম্য নারী। তিনি আমাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলেন। 
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন অসম্ভবকে সম্ভব করাই মানুষের কাজ। তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিজের সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করলেন। সরিষার তেল গরম করে তিনি তাঁর দু’হাত দিয়ে ঘষে জোরে জোরে আমার গায়ে মালিশ করতে শুরু করলেন। মায়ের কাছে শুনেছি গরম তেলে তাঁর হাতের তালু ঝলসে গিয়েছিল। কিন্তু মা দমার পাত্র নন। তিনি দিনের পর দিন আমার শরীর গরম তেলে মালিশ করেন সূর্যস্নানের জন্য রোদে শুয়ে। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায় বৃথা যায়নি। মায়ের আপ্রাণ চেষ্টায় অবশেষে আমি ঘুরে দাঁড়াই ও পরিণত হই এক সুপুষ্ট শিশুতে। যথাসময় রংপুর শহরে ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ উপলক্ষে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বেবি শো-এর আয়োজন করে। আমি সেখানে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করি এবং প্রকারান্তরে আমার মাকে বিজয়ী করি। আজ যে আমি এত বছর বেঁচে আছি, তা শুধু মায়ের বদৌলতে সম্ভব হয়েছে। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। তাই আমার মা রিজিয়া আহমেদ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মা।
আমার স্বনামধন্য বাবা আছির উদ্দিন আহমেদ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (সাবেক হাই ইংলিশ স্কুল) প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুবাদে অসংখ্য গরিব ও মেধাবী ছাত্রকে আপন সন্তান জ্ঞান করে বিনা অর্থে অকাতরে জ্ঞান বিলিয়েছেন। অন্যদিকে আমার মানবহিতৈষী মা এসব মেধাবী ও গরিব ছাত্রের মুখে অর্থ ব্যয় করে আহার জুগিয়েছেন। কোনো অবস্থাতেই আমি আমার মায়ের মুখ কখনও মলিন হতে দেখিনি। এমন ছাত্রবৃন্দের অনেকেই দেশে ও বিদেশে উচ্চপদে সমাসীন ও মানবকল্যাণে রত। সফল ছাত্রদের কেউ কেউ পরে তাদের স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে আমার মা-বাবার কাছে এসে দোয়া ও আশীর্বাদ নিয়ে গেছেন। 
মায়ের মনোবল ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে আমার দৃঢ়চেতা বড় ভাই স্বাধীনতার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন রফিকুল আলম মোহাম্মদ খায়রুল বাশার (ক্যাপ্টেন বাশার) পেয়েছিলেন। আমার গুণী মায়ের কোনো গুণই আমি পাইনি। যা পেয়েছি তা হলো– আত্মমর্যাদাবোধ ও মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসার শক্তি। মায়ের কাছে শিখেছি– ক্ষমাই মহত্ত্বের লক্ষণ। মায়ের কাছ থেকে আমি মানুষকে ক্ষমা করতে শিখেছি, যা আজকের সমাজে বিরল। মায়ের কাছ থেকে আরও যা পেয়েছি তা হলো স্বাধীনভাবে নিজের মতো করে বাঁচার অসীম স্পৃহা, নির্ভয়ে অকপটে নিজের মতটা প্রকাশ করতে পারার, আর ভিন্ন মতটা যৌক্তিক ও বস্তুনিষ্ঠভাবে শোনার চেষ্টা করা।  
এখানে একটি কথা উল্লেখ করা সমীচীন। তাহলো, আমার নানা বাশার সাহেব ব্রিটিশ আমলে রংপুর শহরে আইন ব্যবসা করতেন এবং একই সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িত থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। নানার কাছ থেকে আমার মা পরমতসহিষ্ণুতার মতো মহৎ গুণটি পেয়েছিলেন; যা ইদানীং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরল।
মা আমার শিক্ষাবিদ বাবার কর্মজীবনে সব সময় তাঁর পাশে থেকে তাঁকে প্রেরণা ও উৎসাহ জুগিয়েছেন। কর্মজীবনে বাবার সফলতার পেছনে আমার মায়ের অবদান অপরিসীম।
২০০৭ সালের ১৪ এপ্রিল আমার মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নিলে আমার কাছে পৃথিবী বিবর্ণ হয়ে যায়। জীবন বিস্বাদ, বর্ণ ও গন্ধহীন হয়ে ওঠে। বর্তমানে আমি একজন প্রাণহীন মানুষ, শুধু নামেমাত্র বেঁচে আছি। আজ আমার কাজের ভালো-মন্দ তারিফ করার মতো কেউ নেই। আমার ত্রুটিবিচ্যুতি ধরিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই। আজ আমি বড় একা– এতিম ও অসহায়। আজ আমি নিঃস্ব ও রিক্ত। আমি কেঁদে কেঁদে ফিরি আর বলি, ‘মায়ের মতো আপন কেহ নাই/ মা জননী নাইরে যাহার/ ত্রিভুবনে তাহার কেহই নাই।’

জেড এ এম খায়রুজ্জামান: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
zamkhairz@gmail.

com

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম দ বস আম র ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ