মার্চের ২ তারিখ আমরা শুনেছিলাম, গাজায় প্রবেশের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তখন আমরা ভেবেছিলাম, এটি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হবে না। আমরা সত্যিই এমন একটি স্বাভাবিক রমজান চেয়েছিলাম, যেখানে আমাদের জীবিত আত্মীয়দের ইফতারে আমন্ত্রণ জানাতে পারব এবং রোজা ভাঙার জন্য কী খাবার পাব, তা নিয়ে উদ্বেগ থাকবে না। কিন্তু এভাবে হয়নি। আমরা পবিত্র মাসে টিনজাত খাবার খেয়ে রোজা রেখেছি।
গাজার বেশির ভাগ পরিবারের মতো আমার পরিবারও খাদ্য বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করেনি। কারণ, কেউ আশা করেনি, যাতায়াত আবার বন্ধ হয়ে যাবে অথবা দুর্ভিক্ষ কিংবা এমনকি যুদ্ধ আবার ফিরে আসবে।
বন্ধের পরের দিনগুলোতে বাজার থেকে খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক পণ্য উধাও হয়ে যায়। দাম হয় আকাশছোঁয়া। এক কেজি সবজির দাম বেড়ে ৮ ডলার বা তার বেশি; চিনি ২২ ডলার এবং শিশুর ফর্মুলা ১১ ডলারে উঠে যায়। এক বস্তা আটার দাম আগে ছিল ৮ ডলার, যা ৫০ ডলারে পৌঁছেছে; দুই মাসের মধ্যে তা হয়েছে ৩০০ ডলার।
গাজার বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে এই দামে পণ্য কেনা সম্ভব নয়।
ফলে আমার পরিবারসহ অন্যরা তাদের খাবারের সংখ্যা কমিয়ে আনতে শুরু করে।
আমরা কেবল সকালের নাশতা এবং রাতের খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ভাগে কমিয়ে আনি। যেমন, সকালের নাশতায় অর্ধেক রুটি এবং রাতের খাবারে আস্ত একটি। পুরুষ, মহিলা, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা লজ্জা ও দুঃখ নিয়ে কেবল কয়েকটি রুটি বা একটি ছোট প্লেট খাবারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেকারি ও দাতব্য রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। কিছু পরিবারের ক্ষেত্রে এটি সেই দিনের একমাত্র খাবার।
রমজান মাসে আমাদের বাড়ির কাছে আল-মুফতি স্কুলের এক দিনের একটি ঘটনা তুলে ধরছি।
বাস্তুচ্যুত এক পরিবারের ছেলে খাবারের জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে, সে এক দাতব্য রান্নাঘরের গরম খাবার নিতে গিয়ে সেই খাবারের পাত্রে পড়ে যায়। এতে সে গুরুতরভাবে পুড়ে গিয়ে পরে মারা যায়। সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার প্রায় দেড় মাস পর সর্বত্র দুর্ভিক্ষের লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করে। আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগুলো দেখতে পাই। যেমন খালি পেটে ঘুমানো, ভেতরে দ্রুত ওজন হ্রাস, ফ্যাকাশে মুখ, দুর্বল শরীর। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে এখন আমাদের দ্বিগুণ শক্তি লাগে।
অসুস্থ হওয়া সহজ এবং আরোগ্য লাভ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। আমার ভাগনে মুসাবের বয়স ১৮ মাস এবং দুই বছর বয়সী মোহাম্মদের মধ্যে রমজান মাসে প্রচণ্ড জ্বর ও ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দেয়। খাবার ও ওষুধের অভাবে তাদের সুস্থ হতে পুরো এক মাস সময় লেগে যায়। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে চোখের অস্ত্রোপচারের পর জটিলতার কারণে আমার মা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। অপুষ্টি এবং আরোগ্য লাভের জন্য প্রয়োজনীয় চোখের ড্রপের অভাব তাঁর অবস্থা আরও খারাপ করে তুলেছে।
এ পরিস্থিতির সবচেয়ে কঠিন দিক হলো ছোট বাচ্চাদের ব্যাপারে দুর্ভিক্ষের প্রভাব তুলে ধরা। স্বাভাবিকভাবে আমার ছোট্ট ভাগনে-ভাগনিরা আমাদের সীমাবদ্ধতা বুঝে খাবার দাবি করতে পারে না। তাদের এ কথা বোঝাতে আমাদের বেশ লড়াই করতে হয় যে, আমরা খাবার লুকিয়ে রেখে তাদের শাস্তি দিচ্ছি না। মূলত আমাদের কাছে এ খাবারগুলো নেই।
৫ বছর বয়সী খালেদ তার মায়ের ফোনে খাবারের ছবি দেখার সময় প্রতিদিন মাংস চাইতে থাকে। সে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে, তার শহীদ বাবা কি জান্নাতে এসব খেতে পারবেন? তারপর সে জিজ্ঞাসা করে, সে কবে তার বাবার সঙ্গে এসব খাবার খেতে পারবে?
আমরা উত্তর দিতে হিমশিম খাই। আমরা তাকে ধৈর্য ধরতে বলি এবং সে ধৈর্যের পুরস্কার পাব বলে আশ্বস্ত করি।
হালা আল-খতিব: ফিলিস্তিনের গাজার লেখক; আলজাজিরা
থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র র জন য পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরা মাল্টিপ্লেক্সের মুনাফা কমেছে ১৩.৭২ শতাংশ
পুঁজিবাজারে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য প্রান্তিকে আগের হিসাব বছরের তুলনায় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) কমেছে ১৩.৭২ শতাংশ।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান
প্রথম প্রান্তিকে ইউনিক হোটেল ও ইফাদ অটোসের মুনাফায় বড় উত্থান
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে রবিবার (১৬ নভেম্বর) কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ বছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর প্রকাশ করা হয়।
২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৮৮ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.০২ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটি আলোচ্য প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ০.১৪ টাকা বা ১৩.৭২ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে ০.২৪ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ০.৩৫ টাকা।
২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৭৫.৬৭ টাকা।
ঢাকা/এনটি/এসবি