প্রচণ্ড গরমে শরীর যখন পানিশূন্য, তখন গাড়িতে উঠে এক চুমুক পানি খেলে শরীর জুড়ায়। ভাবতে পারেন, পানিই তো, এতে ক্ষতির কী আছে? কিন্তু অতিরিক্ত গরম শুধু আপনার শরীরে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গাড়িতে। গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হয় প্লাস্টিকের বোতলও। গবেষণা বলছে, উত্তপ্ত পানির বোতল থেকে ন্যানোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়তে পারে পানিতে; সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা।

‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’ নামক এক জার্নালের গবেষণামতে, প্লাস্টিকের বোতল যখন অতিরিক্ত গরম থাকে, তখন বোতল থেকে বিভিন্ন মাত্রার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত হয়। সাধারণত অতিরিক্ত গরমে পানির ক্ষুদ্র কণাগুলো দ্রুত ছোটাছুটি শুরু করে। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে যেতে পারে। এই রাসায়নিক পদার্থের বড় অংশজুড়ে আছে ন্যানোপ্লাস্টিক।

আরও পড়ুনশিশুর জন্য প্লাস্টিকের ফ্লাস্ক কতটা নিরাপদ, একটা ফ্লাস্ক কত দিন ব্যবহার করা যাবে১৮ এপ্রিল ২০২৫

তবে সব ধরনের প্লাস্টিক থেকে এ–জাতীয় ন্যানোপ্লাস্টিক নিঃসরিত হয় না। বিপিএ সার্টিফিকেটধারী প্লাস্টিক থেকে সাধারণত ন্যানোপ্লাস্টিক ছড়ায় না। তবে সব ধরনের প্লাস্টিক থেকে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।

এ ছাড়া গরম প্লাস্টিকের বোতল থেকে হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। প্লাস্টিকের বোতলে যখন মুখ লাগিয়ে পানি খাই আমরা, তখন কিছু ব্যাকটেরিয়া বোতলে লেগে যায়। অতিরিক্ত গরমে এই ব্যাকটেরিয়া বিস্তারের সুযোগ পায়। ফলে লম্বা সময় ধরে পানি উত্তপ্ত হলে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে খোদ বোতলেই, যা পরবর্তী সময়ে শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

আরও পড়ুনপানির বোতলে কেন মেয়াদের তারিখ থাকে?২৫ জুন ২০১৭

গরম প্লাস্টিকের বোতল থেকে এক দিন পানি খেলেই যে শরীর খারাপ করবে, ব্যাপারটা এমন নয়; বরং দীর্ঘদিন একই বোতল থেকে পানি খেলে তা শারীরিক সমস্যার তৈরি করতে পারে। বড় কোনো রোগ এক দিনে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না; বরং সময়ের সঙ্গে, নিয়মিত সংস্পর্শে রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। তবে সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

১.

গাড়িতে উঠে পানি খাওয়ার আগে দেখে নিন বোতল অতিরিক্ত গরম কি না। অতিরিক্ত গরম হলে, তা না খাওয়াই উত্তম।

২. গাড়ি যেখানে রাখবেন, লক্ষ রাখবেন, যাতে রোদ সরাসরি পানির বোতলে না পড়ে। প্রয়োজনে পানির বোতল সরিয়ে রেখে যান, যাতে সরাসরি রোদের আলো পানির বোতলে না পড়ে।

৩. নিয়মিত বোতল পরিবর্তন করুন। বেশি দিন একই প্লাস্টিকের বোতল থেকে পানি খাবেন না। বোতল নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

৪. একাধিক মানুষ একই পানির বোতল ব্যবহার করলে চেষ্টা করবেন মুখ না লাগিয়ে পানি খেতে। এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।

৫. খুব ভালো হয় গাড়িতে প্লাস্টিকের বদলে অন্য কোনো বোতলে পানি রাখলে। কাচ, অ্যালুমিনিয়াম অথবা স্টেইনলেস স্টিলের বোতল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কম।

৬. প্লাস্টিকের বোতলে পানি খাওয়া তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু সেই বোতল যখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখনই তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই কেবল গাড়ি নয়, যেখানেই রাখুন না কেন, বোতল যেন সরাসরি সূর্যালোক না পায়।

সূত্র: ইটিং ওয়েল

আরও পড়ুনকোন রঙের প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙ্গা–বরিশাল মহাসড়কের ৪৯ কিলোমিটার বেহাল, ‘ভরসা’ জোড়াতালির মেরামত

বরিশাল থেকে সপ্তাহে দুবার ঢাকায় যাতায়াত করেন নাঈম হাওলাদার। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন। নাঈম হাওলাদার বলেন, বরিশাল থেকে বাসে এত ঝাঁকুনি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। অনেক যাত্রী বমিও করে ফেলেন। মন দুরুদুরু করে, কখন কী হয়ে যায়! 

বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এমনই বেহাল। সড়কের পিচ, পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কটিকে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে ইট ফেলে খানাখন্দ ভরাট করে ওপরে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর দেওয়া হচ্ছে পিচের প্রলেপ। 

তবে যাত্রী ও যানবাহনের চালক–সহকারীরা বলছেন, প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাতবার সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সাময়িক সংস্কার অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। 

কুয়াকাটা-ঢাকা পথের একটি বাসের চালক কেরামত আলী বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা, তাতে বাস চালাতে অনেক ঝুঁকি। যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। আমাদের সময়ও বেশি লাগে। যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।’

বরিশাল থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে এ অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায়, বাকিটা ফরিদপুর সওজের অধীনে।

যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।কেরামত আলী, বাসচালক

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তে বালু, ইটের সুরকি ও পিচ ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার শিকারপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে একদল শ্রমিক মেরামতের কাজ করছেন। কয়েক কিলোমিটার পর গৌরনদীর বার্থী এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেল।

বার্থী এলাকায় সওজের একটি ট্রাকের চালক মো. শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করতাম, এখন তার ওপর পিচ ও বালু দিয়ে প্রলেপ দিচ্ছি, যাতে যান চলাচলে ব্যাঘাত কমে এবং যাত্রীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।’

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই মাস আগে একইভাবে রাস্তা মেরামত হয়েছিল, কিন্তু টেকেনি। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়।’

একই কথা বললেন ভুরঘাটাগামী একটি মাহেন্দ্রর চালক আবদুল বাছেদ।

বার্থী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত আরও একটি ট্রাকে মেরামতের কাজ চলছিল খাঞ্জাপুর এলাকায়। কাজ তদারক করছিলেন সওজের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) মো. জাকির হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাময়িক ভোগান্তি কমাতে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় কাজ চলছে।

সওজ সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে বরিশাল–ভাঙ্গা সড়ক ছিল ১২ ফুট প্রশস্ত। এখন বেড়ে হয়েছে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বেড়েছে তিন গুণ। এত চাপ নিতে পারছে না সড়কটি।

ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে উল্লেখ করে বরিশাল সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, তহবিল পাওয়া গেলে দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু করা যাবে। আপাতত জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন।

পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কও বেহাল

টানা বর্ষণে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় ৭১ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একাধিক বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বাস মালিক সমিতি ও সওজ সূত্র জানায়, এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ বাড়ছে।

মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একটু পরপর গর্ত। বিশেষ করে আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়া এলাকায় গর্ত বেশি। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ইট ফেলে সাময়িকভাবে ভরাটের চেষ্টা চলছে।

পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে খানাখন্দ মেরামতের কাজ করছি। আশা করি, এতে ভোগান্তি লাঘব হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ