কারও কারও সকালে গোসল করার অভ্যাস। সারা দিনের কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গোসল করে আয়েশ করতে চান কেউ কেউ। রাতে ঘুমের আগেও গোসল করতে পছন্দ করেন অনেকে। সারা দিন বাসায় থাকলে দুপুরেও গোসল সারি আমরা। প্রশ্ন হলো, সারা দিনে কতবার গোসল করা ভালো? আর কোন সময়টা গোসলের জন্য বেছে নেওয়া উত্তম? এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা.

সাইফ হোসেন খান

দিনে কতবার গোসল করবেন

গরমে বারবার গোসল করা আপাতদৃষ্টে স্বস্তিদায়ক। তবে তা বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। একাধিকবার গোসল করা হলে আমাদের ত্বক আর্দ্রতা হারায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রত্যেকের ত্বকে স্বাভাবিকভাবে যে উপকারী জীবাণু থাকে, একাধিকবার গোসল করা হলে সেসবের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় তাই একবার গোসল করাই সবচেয়ে ভালো। এ কথাও ভুলে যাওয়া যাবে না যে পৃথিবীতে সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে দিন দিন। গোসলের জন্য বারবার পানি অপচয় না করেও বিকল্প উপায়ে আপনি স্বস্তিতে থাকতে পারেন। তাতে পৃথিবীর জন্যও পরোক্ষভাবে কিছু করা হবে।

আরও পড়ুনজ্বরে গোসল করা কি খারাপ?১০ সেপ্টেম্বর ২০২২কোন সময় গোসল করবেন

বাইরের রোদ বা ধুলাময়লা থেকে আসার পর গোসল করার প্রয়োজন হয়। তাই রোজ একবার গোসল করলে এ সময়টা বরাদ্দ রাখতে পারেন। যাঁরা প্রশান্তিদায়ক ঘুমের জন্য রাতে গোসল করেন, তাঁরাও রাতের পরিবর্তে দুপুর, বিকেল বা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গোসল করতে পারেন। এ সময় গোসল করার পর খুব একটা ভারী কাজ করা না হলে শোয়ার সময়ও শরীর খুব একটা ঘামবে না বা উষ্ণ হয়ে উঠবে না। সারা দিন বাইরে না গেলে দুপুরের দিকটাই বেছে নিতে পারেন গোসলের জন্য। রান্নাবান্নার কাজ করলে তা সেরে এ সময়টায় গোসল করলে আরাম পাবেন।

খেয়াল রাখুন

দুপুর বা বিকেলের দিকে রোদের তাপে পানি গরম হয়ে যেতে পারে। তাই সকালের দিকেই বালতিতে পানি ধরে ঢেকে রাখুন। তাতে আপনি গোসলের সময় অনায়াসেই ঠান্ডা পানি পেয়ে যাবেন। বাথটাব কিংবা শাওয়ারে গোসল করলে অকারণে যত পানি অপচয় হয়, বালতির পানিতে গোসল করলে তা হয় না। এ ছাড়া পানিতে ময়লা থাকলে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যেই তা বালতির নিচে তলানি হিসেবে জমা হবে। নিচের এই পানিটুকু আপনি গোসলের কাজে ব্যবহার না করে গাছের গোড়ায় দিতে পারেন।

আরও পড়ুনমনের গোসল, সে আবার কী ২৪ এপ্রিল ২০২৫অন্য সময় যদি গোসল করতে চান

এমনও অনেকে থাকতে পারেন, যাঁদের পক্ষে সকালে বা রাতে গোসল করার অভ্যাস ছাড়া কঠিন। তাঁরা কিন্তু অভ্যাস অনুযায়ী সেই সময় গোসল করলেও খুব একটা সমস্যা নেই। বাইরে থেকে ফিরে গোসল না করে কেবল পোশাক বদলে হাত-পা এবং মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিলেও চলে। রোদ বা ধুলাময়লার কারণে ত্বকের যতটা ক্ষতি হয়, বাইরে যাওয়ার সময় পাতলা সুতি কাপড়ের ফুলহাতা পোশাক এবং পায়জামা বা প্যান্ট পরা হলে কিন্তু ততটা ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া শরীরের যেসব অংশে বেশি ঘাম হয়, ভেজা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে সেসব অংশ মুছে ফেলুন। সারা দিনে বা রাতের যেকোনো সময়ই এভাবে হাত, মুখ, মাথা, বগল, কুঁচকি ভিজিয়ে নিতে পারেন। আরাম পাবেন। খুব বেশি গরম আবহাওয়ায় আপনি চাইলে কাপড়ে কিছু বরফের কুচি (কুচি করা সম্ভব না হলে আস্ত বরফ) পেঁচিয়ে বগলের নিচে ধরে রাখতে পারেন মিনিট দশেকের জন্য।

আরও পড়ুনগোসল বা হাঁটার সময়ই কেন আসে জটিল সব ভাবনা? ৩১ মার্চ ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ইতিহাস কি চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭৯.৩ ওভারে ২৪৭। শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৭৮ ওভারে ২৯০/২।

রেক্স ক্লেমেন্ত সরাসরিই বলে দিলেন, ‘বাংলাদেশ ভুল করেছে।’ প্রেসবক্সে মধ্যাহ্নভোজের টেবিলে বসে করা তাঁর মন্তব্য কান খাঁড়া করল। নির্দিষ্ট করে কোনটাকে ভুল বলছেন দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থেকে ক্রিকেট কাভার করা স্থানীয় এই সাংবাদিক? ভুল তো অনেক!

টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের একের পর এক উইকেট দিয়ে আসা ভুলভাল খেলেই তো! নাকি টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়াটাই ভুল হয়েছে বাংলাদেশের? রেক্স শুধরে দিলেন, ‘না, এই উইকেটে আগে ব্যাটিং নেওয়া ঠিক আছে। ভুলটা হলো প্রথম দিনেই বাংলাদেশ নিজেদের ইনিংসটা প্রায় শেষ করে দিল। তাদের উচিত ছিল কালকের দিনটা পার করে দিয়ে আজ রানের জন্য যাওয়া। এখানে দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনে ব্যাটিং করা সহজ। পরের দুই দিন আবার এত সহজ নাও হতে পারে।’

লাঞ্চের ওই সময়ে শ্রীলঙ্কার রান বিনা উইকেটে ৮৩। বাংলাদেশের বোলারদের তেমন কোনো প্রতিরোধের মুখে না পড়ে ২১ ওভারেই তা করে ফেলেন দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও লাহিরু উদারা। এর আগে সকালে ৭.৩ ওভার খেলে শেষ দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের দিনের ২২০ রানের সঙ্গে যোগ হয় ২৭। ৩৩ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া তাইজুল ইসলামেরই তাতে অবদান ২৪ রান।

সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের (এসএসসি) উইকেট নিয়ে রেক্সের মন্তব্যকে সঠিক প্রমাণ করেই দিনের বাকি সময়টা খেলে গেছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের বোলারদের একমাত্র অর্জন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল উদারাকে ৪০ রানের মাথায় তাইজুলের বোল্ড করা। শেষ বেলায় সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকতে নাঈম হাসানের বলে দিনেশ চান্ডিমালের কট বিহাইন্ড হতাশা কিছুটা হলেও কমিয়েছে। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে নাঈম হাসানকে রিভার্স সুইপ করে চান্ডিমাল ক্যাচ দেন উইকেট কিপার লিটন দাসের হাতে।

বাংলাদেশের বোলারদের কাজ অবশ্য এখনো অনেকটাই বাকি রেখে দিয়েছেন নিশাঙ্কা। গলে ১৮৭ রানের ইনিংস খেলে আসা এই ওপেনার কলম্বোতে ডাবল সেঞ্চুরির অতৃপ্তি দূর করতে এগোচ্ছেন। দিন শেষে অপরাজিত ২৩৮ বলে ১৮ বাউন্ডারিতে ১৪৬ রান নিয়ে। উদারার সঙ্গে ৮৮ রানের ওপেনিং জুটির পর দ্বিতীয় উইকেটে চান্ডিমালের সঙ্গে গড়েন ১৯৪ রানের জুটি, ৫ রান নিয়ে নিশাঙ্কার সঙ্গী নাইট ওয়াচম্যান প্রবাত জয়াসুরিয়া।

কলম্বো টেস্টের প্রথম দুই দিনে কিছুটা হলেও ফিরে আসছে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক টেস্টের স্মৃতি। সেই ম্যাচে তৃতীয় উইকেটে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারার ৬২৪ রানের জুটি টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড। তাঁদের সৌজন্যেই সেবার টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৭৫৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা।

অতীতের প্রসঙ্গ যখন এসেই পড়ল, একটু বিস্তারিতই বলা যাক। তাতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চলতি কলম্বো টেস্টের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও একটা ধারণা মিলতে পারে। এই টেস্টের সঙ্গে কিছু মিলও বোধ হয় পাওয়া যাবে সেই টেস্টের।

সেবারও টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল অতিথি দল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনে ৫০.২ ওভারে ১৬৯ রানে অলআউট হয়ে তাদের অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ। পরে শ্রীলঙ্কাও ব্যাটিংয়ে নেমে হারায় ১৪ রানে ২ উইকেট। সিংহলিজের উইকেটে তখনো প্রথম দিনে ব্যাট করা সহজ ছিল না। বোলাররা, বিশেষ করে পেসাররা এই উইকেটে যা একটু সুবিধা পান প্রথম দিনেই। দ্বিতীয় দিনে উইকেট হয়ে যায় ব্যাটসম্যানদের।

শুরুর বিপর্যয়ের পর উইকেটে গিয়ে পরের দিনের অপেক্ষায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে। সেশন ধরে ধরে পার করে দেন দিনের বাকি সময়। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে প্রথম দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান হয়েছিল ১২৮। সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে আসল কাজটা করলেন পরদিন, অর্থাৎ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের ক্লান্তিকর সেই দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান ওই ২ উইকেটেই ৪৮৫। ততক্ষণে ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে দুজনেরই।
তৃতীয় দিন চা বিরতির পর ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের রেকর্ড জুটির সৌজন্যে তার আগেই ১৮৫.১ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৫৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩৪ করেও পারেনি ইনিংস হার এড়াতে।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চলতি কলম্বো টেস্টের স্কোরকার্ডেও যেন কিছুটা সেই ছায়া। দ্বিতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটেই করে ফেলেছে ২৯০ রান, এগিয়ে গেছে ৪৩ রানে। কাল তৃতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বাংলাদেশের ওপরই বড় কিছুই চাপাতে চাইবে তারা।

অথচ টেস্টের প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কার বোলারদের কঠিন বলগুলোকে ভালোভাবে সামলে দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় ভালো শুরুই করেছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে সকালের কঠিন সময়টাতে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি। ব্যাটসম্যানরা বাজে আউট না হলে আজ দিন শেষে শ্রীলঙ্কা যে জায়গায়, তার চেয়ে খুব খারাপ থাকত না বাংলাদেশের অবস্থা।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও এসএসসির ব্যাটিং উইকেটে ব্যাটিংয়ের জন্য পয়মন্ত সময়টাই বাংলাদেশকে কাটাতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের বোলিং করে, তাদের বাউন্ডারি কুড়িয়ে এনে। এসএসসির অতীত, এখানকার উইকেটের চরিত্র—কোনোটাই অবশ্য অজানা নয়। তার মধ্যেও বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হতো কীভাবে ম্যাচটাকে নিজেদের হাতে রাখা যায়। ব্যাটসম্যানরা তাতে ব্যর্থ, বোলাররাও পারছেন না অসাধারণ কিছু করতে।

চোট কাটিয়ে দুই বছর পর দলে ফেরা পেসার ইবাদত হোসেন প্রথম তিন ওভারে দিয়েছেন ১৭, তাঁর প্রথম স্পেলও ওখানেই শেষ। সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে নাহিদ রানার প্রথম স্পেল থেমে যায় ২ ওভারে, রান দিয়েছেন ২০। নাহিদ অবশ্য পরে এসে কিছু বাউন্সার দিয়ে ভয় ধরাতে চেয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের মনে, যদিও সেই বাউন্সারের কয়েকটিকে ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারিও বানিয়েছেন।

সবচেয়ে বিস্ময়কর লেগেছে পেসারদের দিয়ে কাজ না হওয়ার পরও গল টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে প্রথম সেশনে বোলিংয়ে না আনাটা। ইনিংসের ২৬তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করেন নাঈম। শেষবেলায় চান্ডিমালের উইকেটটাও এসেছে তাঁর বলেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইতিহাস কি চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে