লড়াইটা ছিল সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে নয়: দাবি ভারতের
Published: 12th, May 2025 GMT
ভারতের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ৭ মে শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা ‘সন্ত্রাসীরা’। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু দেখা গেল, ‘সন্ত্রাসীদের’ হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী দাঁড়িয়ে গেল। তাদের হয়ে লড়াই শুরু করল। ভারতীয় সেনাবাহিনী তখন তার জবাব দিয়েছে।
ভারতের এয়ার অপারেশনসের মহাপরিচালক (ডিজি) এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন। তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, ভারতীয় বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিপুণভাবে শুধু ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। কিন্তু তাদের সমর্থনে পাকিস্তানি বাহিনী এগিয়ে আসায় তারাও আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যা কিছু ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য তারাই দায়ী।
এয়ার মার্শাল ভারতী দাবি করেন, পাকিস্তানি আক্রমণে ভারতের কোনো সেনাঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এই না হওয়ার মূল কৃতিত্ব ভারতের বহুস্তরীয় কার্যকর এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা। পাকিস্তান যেসব ড্রোন মারফত আক্রমণ চালাতে চেয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, এই বহুস্তরীয় ব্যবস্থায় কোথাও না কোথাও তা প্রতিহত করা হয়েছে।
ভারতের নিজস্ব তৈরি ‘আকাশ’ এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে ভারতী দাবি করেন, এই ব্যবস্থা যে কতটা কার্যকর, এই সংঘাত তার প্রমাণ রেখেছে। ভারতের সব সামরিক ঘাঁটি, সব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অটুট রয়েছে। ভবিষ্যতে যেকোনো আক্রমণের মোকাবিলায় প্রস্তুত।
সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনসের মহাপরিচালক (ডিজি) লে.
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, একটি পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তা দেখে মনে করা হয়, সেটি চীনের তৈরি পি এল–১৫। ভারতীয় লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণের সময় পাকিস্তানি বাহিনী সেটি ব্যবহার করেছিল।
আজ সোমবারের ব্রিফিংয়ে আরও দাবি করা হয়, এই সংঘাতে পাকিস্তানের এক মিরাজ ফাইটার জেটও ধ্বংস হয়েছে। এক ভিডিওতে সেই ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখানো হয়। বিমানবন্দরের ক্ষতিগ্রস্ত রানওয়ের ছবি দেখিয়ে বলা হয়, ভারতীয় নিশানা কত অব্যর্থ ছিল।
জঙ্গিবাদের চরিত্র বদলের কথা জানিয়ে লে. জেনারেল রাজীব ঘাই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কয়েক বছর ধরে এই বদলটা হয়েছে। আগে সাধারণ মানুষের ওপর তারা হামলা করত না। এখন করছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কতটা নিশ্ছিদ্র, তা বোঝাতে গিয়ে রাজীব ঘাই টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিরাট কোহলির অবসর গ্রহণের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, ‘সত্তরের দশকে যখন স্কুলে পড়তাম, তখন অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে অ্যাসেজ সিরিজে ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করেছিলেন দুই অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার জেফ থমসন ও ডেনিস লিলি। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ায় একটা কথা খুব চালু হয়েছিল। তারা বলত, অ্যাসেজের পর অ্যাসেজে থমসন যদি ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ ধসাতে না পারে, তাহলে লিলি ঠিক পারবে। অর্থাৎ কেউ না কেউ ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে। ভারতের বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তেমনই। এবার ‘অপারেশন সিঁদুর’ সেটাই দেখিয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে নারীকে নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে ছড়ানো ভিডিও সরানোর দাবি জানিয়েছে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’
কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ‘ধর্ষণ’ ও নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নারী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জোটের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের পক্ষ থেকে কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর প্রতি সংঘটিত যৌন এবং অনলাইন সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ ঘটনা–সংশ্লিষ্ট ভিডিও দ্রুত সরিয়ে নেওয়া এবং ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৬ জুন রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তি ভুক্তভোগী নারীকে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে ধর্ষণ করেন। চার ব্যক্তি এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভুক্তভোগীর আর্তনাদে প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা ভাঙা এবং কিছু লোক তাঁকে মারধর করছেন। সেই মারধরের ভিডিও ধারণ করে পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিশেষ আবেদন জানানো হয়।
ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন যথাক্রমে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত অধ্যাদেশ ২০২৫)–এর ৯(১) ধারায় ধর্ষণ অপরাধকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ১৪ ধারায় অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনে ভুক্তভোগী নারীসংশ্লিষ্ট যেকোনো তথ্য বা ছবি প্রকাশকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।