ইউক্রেন সংকট সমাধানে আলোচনায় বসতে হলে সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে থাকতে হবে– এমন শর্ত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার তাঁর প্রধান উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক এ কথা জানান। 

রয়টার্সকে পডোলিয়াক বলেন, ইস্তাম্বুলে কোনো রুশ প্রতিনিধি নয়, বরং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেই শুধু বৈঠকে বসবেন জেলেনস্কি। এই আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও অংশ নিতে চান বলে জানিয়েছেন। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে ট্রাম্প এ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে পুতিন এখনও নিশ্চিত করেননি, তিনি বৈঠকে যোগ দেবেন কিনা। ইতোমধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষই শান্তির পথে কাজ করার বার্তা দিলেও স্পষ্ট কোনো রূপরেখা মেলেনি।

রোববার পুতিন সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দিলেও ইউক্রেনের এক মাসের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তিনি উপেক্ষা করেন। এ অবস্থায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে তা মেনে নিতে বলেন।

সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, বৃহস্পতিবার উপসাগরীয় আরব দেশগুলো সফরে থাকার সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে তুরস্কে যেতে পারেন। ইস্তাম্বুলের আলোচনা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সহায়ক হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। 
বিবিসি জানায়, বৈঠক সামনে রেখে কিয়েভের সঙ্গে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে না নিলে মস্কোকে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা।

ইউক্রেনে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দায়ী রাশিয়া : জাতিসংঘ

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও) সোমবার জানিয়েছে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আকাশে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী ফ্লাইট এমএইচ-১৭ ভূপাতিত করার ঘটনায় রাশিয়া দায়ী। ওই ঘটনায় ২৯৮ জন নিহত হয়েছিলেন।

মন্ট্রিলভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, ওই বছরের ১৭ জুলাই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ফ্লাইট এমএইচ-১৭ ভূপাতিত করার ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস যে অভিযোগ এনেছে, তা ‘তথ্য ও আইনের দিক থেকে যথার্থ’। সোমবার আইসিএওর দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করার ঘটনার মাধ্যমে রাশিয়া আন্তর্জাতিক বিমান আইনের আওতায় নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সংস্থাটির কাউন্সিল প্রথমবারের মতো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ যাচাই করে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত জানাল।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

হেফাজতে মৃত্যু: এক আসামির যাবজ্জীবন, একজনের ১০ বছর কারাদণ্ড, আরেকজন খালাস

এক দশকের বেশি সময় আগে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন ওরফে জনির মৃত্যুতে করা মামলায় রাজধানীর পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পল্লবী থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসানের সাজা পরিবর্তন করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর বিচারিক আদালতের রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল নামে এক আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।

২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণয়ন করা হয়। ইশতিয়াককে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট মামলা করা হয়। এটা ওই আইনে করা প্রথম কোনো মামলা। এই মামলায় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ।

বিচারিক আদালতের রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুর, এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

অপর দুই আসামি পুলিশের তথ্যদাতা (সোর্স) সুমন ও রাসেলের ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন বিচারিক আদালত।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিন আসামি ২০২০ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। তাঁরা হলেন জাহিদুর, রাশেদুল ও রাসেল।

২০২১ সালে হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তিন আসামির আপিলের ওপর একসঙ্গে গত ৯ জুলাই হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ৭ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১০ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন।

গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১১টায় রায় দেওয়া শুরু করেন আদালত। মাঝে দুপুরে এক ঘণ্টা বিরত দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত রায় ঘোষণা চলে। এর ধারাবাহিকতায় আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে অসমাপ্ত রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত, যা দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে শেষ হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, বিচারিক আদালতে দণ্ডিত পাঁচ আসামির মধ্যে কামরুজ্জামান শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামি সুমন সাজা ভোগ করে বেরিয়েছেন।

আদালতে আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও মো. সরওয়ার আহমেদ এবং আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও নাজমুল করিম শুনানি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার শুনানি করেন। বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম।

রায় ঘোষণার দুই দিন পুরোটা সময় মামলার বাদী নিহত ইশতিয়াকের ভাই ইমতিয়াজ হোসেন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনা সম্পর্কে মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ সুমনকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এরপর সুমনের ফোন পেয়ে পল্লবী থানা-পুলিশ এসে ইশতিয়াক ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে ইশতিয়াকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে ইশতিয়াকের ভাই ইমতিয়াজ তৎকালীন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুরসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তদন্তকালে এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মামলায় ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক এমপি আমানুরসহ খালাসপ্রাপ্ত ১০ আসামিকে আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ
  • হেফাজতে মৃত্যু: এক আসামির যাবজ্জীবন, একজনের ১০ বছর কারাদণ্ড, আরেকজন খালাস