পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মুসলিম বিদ্বেষ
Published: 14th, May 2025 GMT
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতে ব্যাপকহারে বেড়েছে মুসলিম বিদ্বেষমূলক ঘটনা। অ্যাসোসিয়েশন অব প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতীয় মুসলিম ও কাশ্মীরিদের উপর বিদ্বেষমূলক অপরাধের ঘটনা সামনে এসেছে। এসব ঘটনার মধ্যে গণপিটুনি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বয়কট এবং যৌন সহিংসতার মতো বিষয়গুলো রয়েছে। ২২ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ভারতজুড়ে ১৮৪ টি ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১০৬টি ঘটনার পিছনে ইন্ধন জুগিয়েছে পহেলগামের ঘটনা।
এই ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮৪টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, ৬৪টি ভয় দেখানোর ঘটনা, ৪২টি হয়রানি, ৩৯টি হামলা, ১৯টি ভাঙচুর, ১৪টি হুমকি এবং সাতটি গালিগালাজের ঘটনা। পাশাপাশি তিনটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এসব ঘৃণমূলক অপরাধের পিছনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), হিন্দু রক্ষা দল, বজরং দল, সকল হিন্দু সমাজ-এর মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং বিজেপি সদস্যরা রয়েছে। এমনকি মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন সিনিয়র রাজনীতিবিদরাও এসব ঘটনায় জড়িত।
এপিসিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশে সর্বাধিক ৪৩টি ঘৃণাত্মক অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে মহারাষ্ট্র (২৪), উত্তরাখণ্ড (২৪), মধ্যপ্রদেশ (২০), হরিয়ানা (৯), কর্ণাটক (৭), বিহার (৬), দিল্লী (৬), চন্ডিগড় (৬), হিমাচল প্রদেশ (৬), পাঞ্জাব (৪), রাজস্থান (৩), তেলেঙ্গানা (৩), কেরল (২), জম্মু-কাশ্মীর (২) এবং ওড়িশা, অন্ধপ্রদেশ ও আসামে একটি করে ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গে এরকম ৯টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখিত রাজ্যগুলোর মধ্যে যেমন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত রয়েছে, তেমনি কংগ্রেস, তেলেগু দেশম পার্টি, জনতা দল ইউনাইটেড, জম্মু এন্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স, তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলোও রয়েছে।
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ২৪ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলায় বিরিয়ানির দোকানের মালিক মোহাম্মদ গুলফামকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। ২৩ এপ্রিল রাতে ২৫ বছর বয়সী গুলফাম যখন দোকান বন্ধ করেছিলেন, সেসময় তিন যুবক এসে তাকে বাইরে টেনে এনে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় গুলফামের চাচাতো ভাই সৈয়ফ আলীও আহত হয়। পরে ওই হামলাকারী নিজেকে ‘ক্ষত্রিয় গো রক্ষা দলের’ সদস্য দাবি করে জানায় পহেলগামে হামলার প্রতিশোধ নিতেই তারা এই কাজ করেছে।
কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ায় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৯ এপ্রিল রাজ্যটির মেঙ্গালুরু শহরের পাশেই কুদুপ গ্রামে কেরলের ওয়ানাড জেলার বাসিন্দা আশরাফকে লাঠি দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি লাথি মারা হয়। পরে প্রচন্ড রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
মমতা ব্যানার্জির রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও গত কয়েক দিনে এরকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ফেসবুকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং ছবি পোস্ট করার অভিযোগে বারাসাতের বাসিন্দা রিজওয়ান কুরেশীর মাংসের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়, তাকে মারধর করে উত্তেজিত জনতা। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই রাতেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভারতবিরোধী মন্তব্য করায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বারাসাতের হাটখোলা। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। এ ঘটনায় তাতে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওই ঘটনায় বুধবার একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বারাসাত আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের শামলি জেলার ঝিনঝানা গ্রামে। সেখানে ২৮ এপ্রিল সরফারাজ নামে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে তার নাবালক সন্তানের সামনে বারবার কুড়াল দিয়ে আঘাত করা হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হামলাকারীক বারবার বলতে শোনা যায় ‘২৬ কে বদলে ২৬ মারুঙ্গা’ (অর্থাৎ ২৬ জনের প্রতিশোধ নিতে আমি ২৬ জনকে হত্যা করবো)।
উত্তর প্রদেশের আলিগড় শহরে নয় বছর বয়সী এক কিশোরকে পাকিস্তানি পতাকায় প্রস্রাব করতে বাধ্য করা হয়। কারণ তারই এক বন্ধু পাকিস্তানবিরোধী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠে।
হামলার শিকার হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা এবং সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। মধ্যপ্রদেশে নজর দৌলত খান নামে এক ‘গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশে’র (জিআরপি) কর্মকর্তা পার্কিং স্পেসে কয়েকজনকে মদপান করতে বাধা দেওয়ায়, তার পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়। বিহারে একজন স্থানীয় সাংবাদিক এবং তার ভাইকে কুর্তা-পাজামা পরার জন্য প্রহার করা হয়।
ইসলামফোবিয়া এমন জায়গায় পৌঁছেছে, সাত মাসের গর্ভবতী এক মুসলিম নারীকে ধর্মের কারণে এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। সি কে সরকার নামে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন মেহেফুজা খাতুন নামের একজন আইনজীবী।
এসব ঘটনার পাশপাশি ভারতের বিভিন্ন স্থানে পড়াশোনা বা কাজের জন্য বসবাসকারী কাশ্মীরিদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। কোথাও হোস্টেল ও ভাড়া নেয়া বাড়ি খালি করতে বলা হয়। কোথাও সহকর্মী বা সহপাঠীদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, কোথাও আবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে এপিসিআর সদস্য তাজিন জুনাইদ বলেন “যখন ঘৃণামূলক অপরাধ ঘটে, তখন সেগুলি বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে না। এর পিছনে কিছু প্রেক্ষাপট থাকে। এর কিছু ভিত্তি থাকে। দেশজুড়ে সহিংসতার পিছনেও পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ইন্ধন জুগিয়েছে। এমনকি যেসব জায়গায় সহিংসতা ঘটেনি, সেখানেও পহেলগামের ঘটনার প্রভাব পড়েছিল। স্থানীয় মুসলিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিল।”
সুচরিতা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ র ঘটন র সদস য র ঘটন এসব ঘ
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে