শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে বনঘেঁষা খলচন্দা গ্রামে ৫০টি কোচ পরিবারের পাঁচ শতাধিক সদস্যের বসবাস। শুকনো মৌসুমে এখানে পানির সংকট পুরোনো। এবার সেই সংকট আরও বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। পাহাড়ি টিলার ওপর একটি মাত্র নলকূপের পানিই তাদের ভরসা।
গ্রামের শেষ মাথায় পানি সংগ্রহে এসেছেন এ গ্রামের চিত্রা রানী কোচ। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সারা গেরামে একটা টিউবয়েল। তাও বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। হেঁটে যেতে হয়। বৃদ্ধ বয়সে এ কষ্ট সহ্য হয় না।’
এ সময় চিত্রা রানীর সঙ্গে ছিলেন গ্রামের আরও কয়েকজন নারী। তারাও এসেছেন পানি নিতে। তারা জানান, পাহাড়ে প্রায় প্রতিটি ঘরে এখন বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। গোসল, কাপড় ধোয়া ও গৃহস্থালি কাজে বাড়ির পাশে চেল্লাখালী নদীর পানি ব্যাবহার করেন। বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ে নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। বৃষ্টির সময় আবার সেই পানি ঘোলাটে হয়ে যায়। গোসলই করা যায় না। খাওয়া দূরের কথা। পানির জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়।
শুধু চিত্রা রানী কোচ নন, আদিবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলার কালাপনি ও বুরুঙ্গা গ্রামের গারো, কোচ ও বানাই সম্প্রদায়ের সবার মুখে শুধুই পানি সংকটের কথা। পাহাড়ি উঁচুনিচু পথ বেয়ে পরিবারের সদস্যরা একবারে এক কলস করে পানি আনতে পারেন। সেই পানি মেপে মেপে খরচ করতে হয় তাদের।
আদিবাসী অধ্যুষিত এ এলাকার কালাপনি ও বুরুঙ্গা গ্রামে ৪০ পরিবারের ৩০০ সদস্যের বসবাস। পানির জন্য চারটি মাটির কূপ তাদের ভরসা। কালাপনি গ্রামের সবিতা নকরেক বলেন, স্বামী, দুই ছেলে ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার। কূপের পানিতে গৃহস্থালির কাজ সারেন। খাওয়ার জন্য সকাল ও বিকেল টিলা খাল পাড়ি দিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে গভীর নলকূপের পানি আনতে হয়। বর্ষাকালে বাধ্য হয়ে কূপের ঘোলা পানিই খেতে হয়।
উত্তর আন্ধারুপাড়া গ্রামের গৃহিণী জোসনা বেগম বলেন, ‘কল (অগভীর নলকূপ) আছে; কিন্তু কলে পানি নেই। ঘরের কাজে সবাই নদীর ময়লা পানি ব্যবহার করে। খাওয়ার জন্য এক কিলোমিটার দূর থাইকা পানি লইয়া আসি।’
এ গ্রামের কয়েকজন বলছেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় মাটির নিচে পাথর; তাই নলকূপ স্থাপন করা যায় না। তবে সাবমার্সিবল বসানো সম্ভব। কিন্তু ত বসানোর সামর্থ্য তাদের নেই। এতে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। তাই শুষ্ক মৌসুমে গ্রামবাসীকে কূপের ময়লা পানির ওপরই নির্ভর করতে হয়।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূপুর আক্তার বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই সমস্যা প্রকট হচ্ছে। সংকট এলাকার চেয়ারম্যান আবেদন করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ন র জন য র নলক প সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যাচেষ্টা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১০ দিন বয়সী সন্তানকে বর্ণি বাওড়ের পানিতে ফেলে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মা রিয়া বিশ্বাস।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাতে উপজেলার বর্নি ইউনিয়নের বর্ণি বাওরের মধ্যপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় ঘটানাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
খুলনায় গলাকেটে বাবাকে হত্যার অভিযোগ ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে
শরীয়তপুরে জমি নিয়ে বিরোধে শিশু তায়েবা খুন: এসপি
রিয়া বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর উত্তরপাড়ার হরিচাদ বিশ্বাসের স্ত্রী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানান, হরিচাদ বিশ্বাসের স্ত্রী রিয়া বিশ্বাস কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। গতকাল সন্ধ্যার পর তিনি তার ১০ দিন বয়সী কন্যাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। বর্নি মধ্যপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় বর্ণি বাওড়ে নিজের সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করতে পানিতে ঝাঁপ দেন রিয়া। এসময় এলাকার কয়েকজন লোক তাকে পানিতে ভাসতে দেখে নৌকা নিয়ে উদ্ধার করেন। তাদের কাছে মেয়েকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে জানান রিয়া।
তিনি আরো জানান, পুলিশে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাওড় থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। শিশুটির মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ