Samakal:
2025-07-01@14:23:08 GMT

রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার ফল

Published: 16th, May 2025 GMT

রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার ফল

কক্সবাজারের চকরিয়ার বিশুদ্ধ পানি সংকটের এক উদ্বেগজনক চিত্র শুক্রবার সমকালে তুলিয়া ধরা হইয়াছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ এই উপজেলার বিশুদ্ধ পানি সংকট নিরসনে গত তিন বৎসরে ১৮টি ইউনিয়নে সাত সহস্রাধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করে। তথায় বেসরকারি গভীর নলকূপও রহিয়াছে ৯ সহস্র। কিন্তু এই সকল গভীর ও অগভীর নলকূপের অধিকাংশেই পানি উঠিতেছে না। ফলস্বরূপ, এলাকার লোকজন বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়িয়া খাল, নদীনালা ও পুকুর হইতে পানি সংগ্রহ করিয়া পান করিতেছেন এবং রান্নাবান্নার কাজ চালাইতেছেন। ইহা স্বাস্থ্যকর তো নয়ই, ভুক্তভোগীদের শরীরে নানাবিধ রোগের সংক্রমণ ঘটিবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। প্রতিবেদনমতে, কোনো কোনো এলাকায় একটি বা দুইটি গভীর নলকূপ সচল আছে, যথা হইতে পানি সংগ্রহের জন্য কয়েক কিলোমিটার দূরবর্তী গ্রামের মানুষ ছুটিয়া আসিতেছে। পানির জন্য একই সময়ে বহু মানুষ একত্রিত হইবার কারণে শুধু সময়েরই অপচয় হইতেছে না; সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হইবার পরিস্থিতিও বিরাজ করিতেছে।
প্রতি বৎসর গ্রীষ্মে বিশেষত যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হইবার পূর্বে চকরিয়ার ন্যায় উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামিয়া যাইবার ঘটনা নূতন নহে। খুলনা ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে তো ইহা সাংবৎসরিক সমস্যা। সেই সকল এলাকায় শুধু ভূগর্ভস্থ পানির স্তরই নামিয়া যায় নাই; ভূপৃষ্ঠের পানির উৎসগুলি বিশেষত ভারতের ফারাক্কা বাঁধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে লবণাক্ত হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু সর্বত্রই এই সংকট মোকাবিলায় দুর্ভাগ্যবশত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তৎপরতা একেবারেই গতানুগতিক। তাহারা অগভীর নলকূপের স্থলে বড়জোর গভীর নলকূপ স্থাপন করে। উহাতে কাজ না হইলে নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভের গভীরতর স্তর হইতে পানি উত্তোলনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইহা পানি সংকটের আপাত সমাধান দিলেও কার্যত সংকটকে গভীরতর করিয়া দেয়। সমস্যা এতটা জটিল হইবার অন্যতম কারণ ভ্রান্ত সেচনীতি ও কৌশলের বশবর্তী হইয়া চকরিয়ার ন্যায় এলাকার মানুষ গৃহস্থালি কর্ম তো বটেই, কৃষিকর্মেও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন যাবৎ বলিয়া আসিতেছেন, কৃষিকর্মের পাশাপাশি গৃহস্থালিতেও ভূগর্ভস্থ পানির স্থলে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই লক্ষ্যে অদ্যাবধি কোনো কার্যকর সরকারি পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয় নাই। চকরিয়ার পানি সংকটের জন্য যে ইহাই দায়ী, তাহা বুঝিতে কাহারও বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই।

উপকূলীয় এলাকাসমূহের পানি সংকট মোকাবিলায় প্রতিটা এলাকার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হইলেও তাহা দেখা যাইতেছে না। এহেন উপেক্ষার পশ্চাতে যে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহের গ্রামীণ জনপদ বিশেষ করিয়া দরিদ্রদের প্রতি উদাসীনতাও ভূমিকা রাখিতেছে, তাহাও ভুল নহে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর তো শুধু উপকূলীয় এলাকায় নামিয়া যায় নাই; রাজধানীসহ বড় শহরগুলির চিত্র বরং এই ক্ষেত্রে অধিকতর ভয়াবহ। শেষোক্ত ক্ষেত্রে সরকার কিন্তু বসিয়া নাই। অনেকাংশ টেকসই না হইলেও উক্ত সমস্যা সমাধানে প্রকল্পের পর প্রকল্প গৃহীত হইতেছে, উপকূলীয় এলাকায় যেই দৃশ্য বিরল বলিলেও অতিরঞ্জন হইবে না। সরকার ইচ্ছা করিলেই পাহাড়ি এলাকা হিসাবে চকরিয়ার সুপেয় পানির প্রাকৃতিক উৎস ছড়াগুলিকে রক্ষা করিবার কার্যক্রম চালাইতে পারে; ইতোমধ্যে মৃতপ্রায় ছড়াগুলিকেও পুনরুদ্ধার করা যাইতে পারে। কিন্তু হতাশাজনক হইল, এই লক্ষ্যে ন্যূনতম জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজটিও স্থানীয় প্রশাসন করিতে পারে নাই।
বিশুদ্ধ পানি পাইবার বিষয়টি যেই কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার, ইহা আমরা জানি। অতএব উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী দেশের এক-পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠীকে বিশুদ্ধ পানি হইতে বঞ্চিত রাখিয়া একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন অসম্ভব। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুযায়ীও সরকার সকলের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি নিশ্চিত করিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। অতএব সরকার অবিলম্বে চকরিয়াসহ সকল উপকূলীয় অঞ্চলের বিশুদ্ধ পানি সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চকর য় র এল ক য় র জন য সরক র হইব র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে আবু সাঈদ চত্বর থেকে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু

গণঅভ্যুত্থানের শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নামে নামকরণ করা চত্বর থেকে রংপুরে ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে পদযাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পদযাত্রাটির অবস্থান ছিল রংপুর নগরীর টাউন হলের সামনে। এই পদযাত্রা রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। 

পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন- এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। উপস্থিত আছেন- এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। পদযাত্রাটি ইতোমধ্যে নগরীর লালবাগ, খামারের মোড়, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় প্রদক্ষিণ করেছে। 

আরো পড়ুন:

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিয়েছি, সেই দেশ গড়ে ঘরে ফিরব: নাহিদ

রাস্তায় ইট বিছানো নিয়ে সংঘর্ষে এনসিপি নেতাসহ আহত ৫

এর আগে, আজ সকাল ১০টায় পীরগঞ্জের বাবনপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পদযাত্রার সূচনা করে এনসিপি। এ সময় শহীদ আবু সাঈদের বাবা-মা ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শ্রদ্ধা জানান দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

কবর জিয়ারত শেষে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হন নেতারা। সেখানে পথসভা ও সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যায় শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে এসে রংপুরের পদযাত্রায় যোগ দেন তারা।

দিনের দ্বিতীয় অংশের পদযাত্রায় এনসিপির স্থানীয় প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। পদযাত্রায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকারসহ জুলাই ঘোষণাপত্র আদায়, নতুন সংবিধান রচনা, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দীপ্ত স্লোগান দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ