কক্সবাজারের চকরিয়ার বিশুদ্ধ পানি সংকটের এক উদ্বেগজনক চিত্র শুক্রবার সমকালে তুলিয়া ধরা হইয়াছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ এই উপজেলার বিশুদ্ধ পানি সংকট নিরসনে গত তিন বৎসরে ১৮টি ইউনিয়নে সাত সহস্রাধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করে। তথায় বেসরকারি গভীর নলকূপও রহিয়াছে ৯ সহস্র। কিন্তু এই সকল গভীর ও অগভীর নলকূপের অধিকাংশেই পানি উঠিতেছে না। ফলস্বরূপ, এলাকার লোকজন বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়িয়া খাল, নদীনালা ও পুকুর হইতে পানি সংগ্রহ করিয়া পান করিতেছেন এবং রান্নাবান্নার কাজ চালাইতেছেন। ইহা স্বাস্থ্যকর তো নয়ই, ভুক্তভোগীদের শরীরে নানাবিধ রোগের সংক্রমণ ঘটিবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। প্রতিবেদনমতে, কোনো কোনো এলাকায় একটি বা দুইটি গভীর নলকূপ সচল আছে, যথা হইতে পানি সংগ্রহের জন্য কয়েক কিলোমিটার দূরবর্তী গ্রামের মানুষ ছুটিয়া আসিতেছে। পানির জন্য একই সময়ে বহু মানুষ একত্রিত হইবার কারণে শুধু সময়েরই অপচয় হইতেছে না; সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হইবার পরিস্থিতিও বিরাজ করিতেছে।
প্রতি বৎসর গ্রীষ্মে বিশেষত যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হইবার পূর্বে চকরিয়ার ন্যায় উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামিয়া যাইবার ঘটনা নূতন নহে। খুলনা ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে তো ইহা সাংবৎসরিক সমস্যা। সেই সকল এলাকায় শুধু ভূগর্ভস্থ পানির স্তরই নামিয়া যায় নাই; ভূপৃষ্ঠের পানির উৎসগুলি বিশেষত ভারতের ফারাক্কা বাঁধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে লবণাক্ত হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু সর্বত্রই এই সংকট মোকাবিলায় দুর্ভাগ্যবশত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তৎপরতা একেবারেই গতানুগতিক। তাহারা অগভীর নলকূপের স্থলে বড়জোর গভীর নলকূপ স্থাপন করে। উহাতে কাজ না হইলে নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভের গভীরতর স্তর হইতে পানি উত্তোলনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইহা পানি সংকটের আপাত সমাধান দিলেও কার্যত সংকটকে গভীরতর করিয়া দেয়। সমস্যা এতটা জটিল হইবার অন্যতম কারণ ভ্রান্ত সেচনীতি ও কৌশলের বশবর্তী হইয়া চকরিয়ার ন্যায় এলাকার মানুষ গৃহস্থালি কর্ম তো বটেই, কৃষিকর্মেও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন যাবৎ বলিয়া আসিতেছেন, কৃষিকর্মের পাশাপাশি গৃহস্থালিতেও ভূগর্ভস্থ পানির স্থলে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই লক্ষ্যে অদ্যাবধি কোনো কার্যকর সরকারি পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয় নাই। চকরিয়ার পানি সংকটের জন্য যে ইহাই দায়ী, তাহা বুঝিতে কাহারও বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই।
উপকূলীয় এলাকাসমূহের পানি সংকট মোকাবিলায় প্রতিটা এলাকার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হইলেও তাহা দেখা যাইতেছে না। এহেন উপেক্ষার পশ্চাতে যে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহের গ্রামীণ জনপদ বিশেষ করিয়া দরিদ্রদের প্রতি উদাসীনতাও ভূমিকা রাখিতেছে, তাহাও ভুল নহে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর তো শুধু উপকূলীয় এলাকায় নামিয়া যায় নাই; রাজধানীসহ বড় শহরগুলির চিত্র বরং এই ক্ষেত্রে অধিকতর ভয়াবহ। শেষোক্ত ক্ষেত্রে সরকার কিন্তু বসিয়া নাই। অনেকাংশ টেকসই না হইলেও উক্ত সমস্যা সমাধানে প্রকল্পের পর প্রকল্প গৃহীত হইতেছে, উপকূলীয় এলাকায় যেই দৃশ্য বিরল বলিলেও অতিরঞ্জন হইবে না। সরকার ইচ্ছা করিলেই পাহাড়ি এলাকা হিসাবে চকরিয়ার সুপেয় পানির প্রাকৃতিক উৎস ছড়াগুলিকে রক্ষা করিবার কার্যক্রম চালাইতে পারে; ইতোমধ্যে মৃতপ্রায় ছড়াগুলিকেও পুনরুদ্ধার করা যাইতে পারে। কিন্তু হতাশাজনক হইল, এই লক্ষ্যে ন্যূনতম জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজটিও স্থানীয় প্রশাসন করিতে পারে নাই।
বিশুদ্ধ পানি পাইবার বিষয়টি যেই কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার, ইহা আমরা জানি। অতএব উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী দেশের এক-পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠীকে বিশুদ্ধ পানি হইতে বঞ্চিত রাখিয়া একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন অসম্ভব। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুযায়ীও সরকার সকলের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি নিশ্চিত করিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। অতএব সরকার অবিলম্বে চকরিয়াসহ সকল উপকূলীয় অঞ্চলের বিশুদ্ধ পানি সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চকর য় র এল ক য় র জন য সরক র হইব র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের ছুটির সমন্বয়ে শনিবার খোলা পুঁজিবাজার
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ খোলা রয়েছে পুঁজিবাজার। ঈদ উপলক্ষে আগামী ৫ থেকে ১৪ জুন টানা ১০ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। এ সময় দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ থাকবে। দীর্ঘ এ ছুটি সমন্বয় করতে ঈদের আগের দুই সপ্তাহের শনিবার যথাক্রমে ১৭ ও ২৪ মে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু থাকবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, সরকারি ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের পুঁজিবাজারের ছুটিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ১১ ও ১২ জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে। ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটির সমন্বয়ে আগামী ১৭ ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার পুঁজিবাজার খোলা থাকবে। এছাড়া, ঈদুল আজহার ছুটি শেষে আগামী ১৫ জুন নিয়মিত সময়সূচি অনুসারে পুঁজিবাজার চালু হবে।
শনিবার সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আজ ডিএসই খোলা রয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির সমন্বয় করতে ঈদের আগের দুইটি শনিবার যথাক্রমে ১৭ ও ২৪ মে ডিএসই খোলা থাকবে।”
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রান্ডিং ডিপার্টমেন্টের পিএন্ডসিআর তানিয়া বেগম শনিবার সিএসইর লেনদেনে চালুর বিষয়টি রাইজিংবিডি ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা/এনটি/ইভা