পেহেলগাম হামলা নিয়ে সংসদ অধিবেশন ডাকার বিরোধীদের দাবি এড়াতেই কি বিদেশে দল পাঠাচ্ছে মোদি সরকার
Published: 17th, May 2025 GMT
ভারতে বিরোধী দলগুলোর দাবি ছিল, পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার। সেই দাবি আমলে না নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদি সরকার।
এই লক্ষ্যে সাতটি রাজনৈতিক দলের সাতজন সংসদ সদস্যের অধীন সাতটি দল গড়া হবে। আজ শনিবার সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই সাত নেতার নাম ঘোষণা করেছে। প্রতিটি দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছয়–সাতজন করে সদস্য থাকবেন।
এসব দল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশে যাবেন ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নিরলস সংগ্রাম এবং অপারেশন সিঁদুরের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করবেন। আন্তসীমান্ত ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলা ভারতকে কীভাবে করতে হচ্ছে, তা বোঝানোর পাশাপাশি প্রতিনিধিরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে পাকিস্তানের ‘যোগসাজশ’ তুলে ধরবেন। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী চলতি মাসেই এই প্রতিনিধিদলগুলোর সফর শুরু হবে।
আজ শনিবার যে সাত দলের সাত নেতার নাম ঘোষণা করা হয়, যাঁরা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের শশী থারুর, বিজেপির রবিশংকর প্রসাদ ও বৈজয়ন্ত পান্ডা, জেডিইউর সঞ্জয় কুমার ঝা, ডিএমকের কানিমোঝি করুণানিধি, এনসিপির (শারদ পাওয়ার) সুপ্রিয়া সুলে ও শিবসেনার (শিন্ডে) শ্রীকান্ত একনাথ শিন্ডে। প্রতিনিধিদলের সফর কবে থেকে শুরু হবে সরকারি বিবৃতিতে তা জানানো না হলেও সরকারি সূত্রের খবর, ২৩ মে থেকে যাত্রা শুরু হবে।
কংগ্রেসের অনেকেই মনে করেন, বারবার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে থারুর ‘লক্ষ্মণরেখা’ লঙ্ঘন করছেন। এই সুযোগে বিজেপিও নানাভাবে থারুরকে তোষামোদ করছে।এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার, কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দল পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের উভয় কক্ষের বিশেষ যৌথ অধিবেশন ডাকার যে দাবি জানিয়ে আসছে, তা মানার কোনো আগ্রহ সরকারের নেই। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দুটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটিতেও উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবিও বিরোধীরা জানিয়েছেন। সেই দাবিও মোদি মানেননি; বরং শোনা যাচ্ছে, সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল যখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করবে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী এনডিএ–শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকতে চলেছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত অন্য রাজনৈতিক বিতর্কও তুলে দিয়েছে। যেমন দলকে না জানিয়ে দলীয় নেতাদের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বেছে নেওয়া। এই বিতর্কে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে কংগ্রেস। প্রশ্ন উঠেছে কেরালার তিরুবনন্তপুরম থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য শশী থারুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরেও।
কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ শনিবার এক্স হ্যান্ডলে দাবি করেন, গত শুক্রবার সংসদীয়মন্ত্রী কিরেন রিজিজু কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে চার সংসদ সদস্যের নামের তালিকা চান। সেই অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই কংগ্রেস সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা, লোকসভার উপনেতা গৌরব গগৈ, রাজ্যসভার সদস্য সৈয়দ নাসির হুসেন ও লোকসভার সদস্য রাজা ব্রার নামপ্রস্তাব পাঠিয়ে দেয়।
ওই চারজনের মধ্যে শশী থারুরের নাম ছিল না। অথচ আজ শনিবার সকালে সরকার থারুরকে একটি দলের নেতা হিসেবে বেছে নেয় এবং তাঁর নাম জানিয়েও দেয়। কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, থারুরকে নেতা করার বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সরকার কোনো আলোচনাই করেনি।
সরকারি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে থারুর তা গ্রহণ করে এক্সে জানিয়ে দেন—এই আমন্ত্রণ তাঁকে ‘সম্মানিত’ করেছে। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ যেখানে জড়িত এবং তাঁর সহায়তা প্রয়োজন, সেখানে তিনি সদা প্রস্তুত। কাউকে তাঁর অভাব বোধ করতে দেবেন না।
কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা না করে একটি প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতা শশী থারুরের নাম ঘোষণা এবং দলের অনুমতি না নিয়ে থারুরের সেই প্রস্তাব গ্রহণ বুঝিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেস ও থারুরের সম্পর্ক ক্রমে জটিলতর হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া কোন দিকে গড়ায়, আপাতত সেদিকেই সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ।
সুযোগ বুঝে বিজেপিও ঘোলা জলে মাছ ধরতে প্রস্তুত। বিজেপির মুখপাত্র অমিত মালব্য দলে থারুরের অবস্থান নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের সমালোচনা করে এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, থারুরের অভিজ্ঞতা ও বাগ্মিতা প্রশ্নাতীত; তবুও কংগ্রেস দল, বিশেষ করে রাহুল গান্ধী সর্বদলীয় প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে মনোনয়ন করলেন না? এটা কি নিরাপত্তাহীনতা, ঈর্ষা, নাকি হাইকমান্ডকে ছাপিয়ে যাওয়ার কারণে অসহিষ্ণুতা?
কংগ্রেসের সঙ্গে শশী থারুরের দূরত্ব কিছুদিন ধরেই বেড়ে চলেছে। বিজেপি সেই সুযোগ গ্রহণে সচেষ্ট। ২০১৪ সালে এক লেখায় প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসা করার পর শশী থারুরকে কংগ্রেসের মুখপাত্র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে সর্বস্তরে সাংগঠনিক নির্বাচন দাবি করে যাঁরা সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন, থারুর ছিলেন তাঁদের অন্যতম।
সেই নেতারা ওই সময় ‘জি–২৩’ গোষ্ঠীভুক্ত বলে পরিচিত হয়েছিলেন। দুই বছর পর থারুর কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনে দাঁড়ান খাড়গের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তিনি সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কংগ্রেসের অনেকেই মনে করেন, বারবার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে থারুর লক্ষ্মণরেখা লঙ্ঘন করছেন। এই সুযোগে বিজেপিও নানাভাবে থারুরকে তোষামোদ করছে।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন দলটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোয় যাবে। অন্য দলগুলো যাবে সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, আলজেরিয়া, ওমান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশে। সাত প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের নাম দু–এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র সদস য ল কসভ র থ র রক দল র স প রস ত মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফুড পয়জনে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল: পিন্টু
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু বলেছেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাবন্দি অবস্থায় ছিলেন। তিনি কারাগারের অভ্যন্তরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছেন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি। ডাক্তাররা বার বার তাকে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টা করেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য কিন্তু দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। কারাগারে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফুড পয়জনে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্র কাজ হয়নি। মহান আল্লাহ তাআলা এখনো উনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।”
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, “আমাদের নেত্রীকে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদেশ যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু নেত্রী বলেছিলেন, এই দেশ ছাড়া অন্য কোন জায়গায় আমাদের ঠিকানা নেই। তিনি দেশেই ছিলেন। শেখ হাসিনা তখন বিদেশে গিয়ে ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র করেছেন। দেশে ফিরে সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করে ক্ষমতায় বসেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অন্যের কাছে তুলে দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। কিন্তু আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ইজ্জত অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়ে ক্ষমতা চাননি।”
তিনি আরও বলেন, “এই ১৭ বছর আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা ও দেশ নায়ক তারেক রহমান সংগ্রাম করেছেন এদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, বিদেশি আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য, এই দেশের মুসলমানদের মান ইজ্জত সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আজ সেই কাজের ফসল হিসেবে আমরা মুক্তি লাভ করেছি।”
সমাবেশে ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান গিয়াসসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা/কাওছার/এস