অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দৃষ্টি এখন জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দিকে। দলটির নেতারা বলছেন, তাঁরা চান এই ঘোষণাপত্র যাতে ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দলীয় নিবন্ধনের শর্ত পূরণও তাঁদের অগ্রাধিকারে রয়েছে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল এনসিপি শুরু থেকেই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল। পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র, মৌলিক সংস্কার, গণপরিষদ নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও এনসিপির অন্যতম দাবি ছিল।

এর মধ্যে গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ইদানীং খুব একটা আলোচিত হচ্ছে না।

অন্তর্বর্তী সরকার যে এক মাস সময়সীমা দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যেই যেন জুলাই ঘোষণাপত্র জারি হয়, সেটাই এখন আমাদের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য।এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে যে আন্দোলনের মুখে, ৮ মে সেটার সূচনা করেন মূলত এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের পর হাসনাত এককভাবে এই আন্দোলনের ডাক দেন। অবশ্য পরে ওই রাতে এনসিপির আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ শীর্ষ নেতারা সরাসরি গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। যদিও হাসনাতের ডাকে এই আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।

এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল আছে, এনসিপি এরপর কোন দাবি বা বিষয় সামনে আনতে যাচ্ছে।

আপাতত সেভাবে বড় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও দলটির নেতাদের দৃষ্টি জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দিকে। ১০ মে রাতে অন্তর্বর্তী সরকার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা ডেকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যে এক মাস সময়সীমা দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যেই যেন জুলাই ঘোষণাপত্র জারি হয়, সেটাই এখন আমাদের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, এর পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচন ও মৌলিক সংস্কারও এনসিপির অন্যতম লক্ষ্য।

আমরা সারা দেশে সংগঠনকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করেছি। আমাদের সংগঠকেরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে সফর শুরু করেছেন। শিগগিরই এটা আনুষ্ঠানিকভাবেই শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সারা দেশে জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলো গঠন করব। আমরা আশাবাদী যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইসিতে নিবন্ধনের শর্ত পূরণের জন্য যে সংখ্যক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটি এবং কার্যালয়ের প্রয়োজন হয়, সেগুলো আমাদের হয়ে যাবে। আখতার হোসেন, এনসিপির সদস্যসচিবনিবন্ধনপ্রক্রিয়ায়ও জোর

অবশ্য নির্বাচন কমিশনে দলীয় নিবন্ধনের শর্ত পূরণও এনসিপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আড়াই মাস আগে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। এর পর থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে দলটি। ইসি ইতিমধ্যে নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে ২২ জুন করেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিপির একটা অগ্রাধিকার হচ্ছে দেশব্যাপী দলের জেলা কমিটিগুলো করা। এ জন্য দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আলাদা দুটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের টিমে মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ। আর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। দুই টিমকে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা কমিটিগুলো করতে বলা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে ইসিতে নিবন্ধনের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি কমপক্ষে ২২টি জেলা ও ১০০টি উপজেলায় দলীয় কার্যালয় থাকতে হয়।

এরই মধ্যে এনসিপির কয়েকটি উইং ও সেল তৈরি করা হয়েছে। দলটির শৃঙ্খলা কমিটি ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটিও গঠিত হয়েছে। দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি ১৬ মে আত্মপ্রকাশ করেছে। আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় আছে জাতীয় নারী শক্তি ও জাতীয় শ্রমিক শক্তি।

এখন এনসিপির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ঢাকার বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে। স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য ভবন খোঁজা হচ্ছে।

দলটির গঠনতন্ত্র প্রণয়নে গত ২৭ এপ্রিল ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল এনসিপি। এই কমিটি ইতিমধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করেছে বলে জানিয়েছেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, খসড়া নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। দলের সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁরা ইসিতে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারবেন উল্লেখ করে আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সারা দেশে সংগঠনকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করেছি। আমাদের সংগঠকেরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে সফর শুরু করেছেন। শিগগিরই এটা আনুষ্ঠানিকভাবেই শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সারা দেশে জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলো গঠন করব। আমরা আশাবাদী যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইসিতে নিবন্ধনের শর্ত পূরণের জন্য যে সংখ্যক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটি এবং কার্যালয়ের প্রয়োজন হয়, সেগুলো আমাদের হয়ে যাবে।’

এরই মধ্যে এনসিপির কয়েকটি উইং ও সেল তৈরি করা হয়েছে। দলটির শৃঙ্খলা কমিটি ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটিও গঠিত হয়েছে। দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি ১৬ মে আত্মপ্রকাশ করেছে। আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় আছে জাতীয় নারী শক্তি ও জাতীয় শ্রমিক শক্তি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর র র জন ত ক ল কম ট গ ল এনস প র ও উপজ ল গঠন কর সময়স ম র জন য ন র জন আম দ র গঠন ক দলট র ইসল ম আওয় ম সরক র স গঠক স গঠন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ তত পিছিয়ে যাবে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ তত পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, উন্নয়ন থমকে যাবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, এমন অবস্থা চলতে থাকলে মবোক্রেসি আরো বাড়বে। বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। নারীরা নিরাপত্তা হারাবে। এই অবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত সরকার। যাদের পেছনে জনসমর্থন আছে।’’

সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক আয়োজিত বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয় মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন একজন উপদেষ্টা: ফখরুল

সময় এসেছে ধ্বংস হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে গড়ে তোলার: ফখরুল

ফখরুল বলেন, ‘‘হাসিনা এমনি এমনি হঠাৎ করে পালায়নি। বহুদিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের ত্যাগ; বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত হলাম ঠিক আছে। কিন্তু আমরা বলছি লড়াই তো গণতন্ত্রের লড়াই, আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে মানুষ ভোট দেবে, কথা বলার সুযোগ পাবে, তরুণরা কাজের ও লেখাপড়ার সুযোগ পাবে, নারীরা নিরাপত্তা পাবে, চিকিৎসার সুযোগ পাবে, এরকম একটি রাষ্ট্র। এজন্য আমরা নতুন করে সংগ্রাম শুরু করেছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘শেখ মুজিব বাকশাল করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। সেই অবস্থা থেকে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।’’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডা. এ জেড জাহিদ হাসান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী, তাহসীনা রুশদীর লুনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নূর/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ