সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উপজেলার নওয়াবেঁকী বাজারে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে ১০টা পর্যন্ত চলে। এ ঘটনায় ১২-১৩ জন আহত হন। তবে আহতদের মধ্যে চারজনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষে আহত আলআমিনের অবস্থা গুরুতর। তিনি উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের ১নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক। হাসপাতালে ভর্তি অন্যরা হলেন- যুবদল কর্মী জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য আরাফাত হোসেন (২০) ও শ্রমিক দলের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০)।

স্থানীয়রা জানান, খোলপেটুয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি অংশ নিলেও উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা এ ঘটনায় মদদ দিয়েছেন। সম্প্রতি ডাক হওয়া হিজলদিয়া বালুমহালের ইজারা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জেরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। 

আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আলআমিন হোসেন জানান, সম্প্রতি বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম হিজলদিয়া বালুমহাল ইজারা পেয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে বোটম্যান আব্দুল হাকিম বালু উত্তোলন করতে সেখানে যান। দুপুর দুইটার দিকে আটুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে তাকে তুলে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়ে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হতে শুরু করলে হাবিবুল্লাহ ও রেজাউল তাদের কর্মীদের নিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে রাত আটটার দিকে তারাসহ ছাত্রদল নেতা বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন এসে আমাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় আমাদের সাতজন আহত হন। তবে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ দিকে ছাত্রদল নেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশে আমরা হাকিমকে আটক করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়ে আসি। এ সময় আমাদের ওপর প্রতিপক্ষ চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে চলে আসি। একপর্যায়ে রাতে আমরা কিছু কর্মী-সমর্থক নিয়ে সেখানে বসে ছিলাম। তখন প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় আমাদের ছয় জন আহত হলেও যুবদল কর্মী হাফিজুরকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।;

উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা মেনে বালুমহাল ইজারা নিয়েছি। কিন্তু ইজারা নিতে ব্যর্থ প্রতিপক্ষ ব্যবসায়িকভাবে আমাদের ক্ষতির চেষ্টা করছে। এ সবের অংশ হিসেবে আমাদের বোটম্যান আব্দুল হাকিমকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রেজাউল ও সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে। 

উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সোলায়মান কবীর বলেন, বিষয়টি খুবই খারাপ হয়েছে। ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। 

শ্যামনগর থানার ওসি মো.

হুমায়ুন কবির বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল য বদল স ঘর ষ ছ ত রদল ক দল র স ঘর ষ দল র স য বদল উপজ ল ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

আমাকে মেয়র ঘোষণা করায় বিচারককে হুমকি দিয়েছিলেন এক উপদেষ্টা: ইশরাক

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ফল বাতিল করে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে মেয়র ঘোষণার পর আদালতের বিচারককে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘নিম্ন আদালত থেকে যখন রায়টি হয় তখনই সরকারের একজন উপদেষ্টা জজ সাহেবকে ফোন করেন। কেন এই রায়টি দেওয়া হলো তা জানতে চেয়ে বিচারককে এক ধরনের হুমকি প্রদান করে। যেহেতু অফিশিয়াল প্রমাণ নাই এ কারণে এতদিন সবাইকে কিছু বলি নাই। কিন্তু পরবর্তীতে এরকম রিপোর্ট পেয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার প্রবেশমুখ কাকরাইল মসজিদ মোড়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন।

ডিএসসিসির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে মৎস্য ভবনে অবস্থান করা সমর্থকরা সন্ধ্যার পর চলে গেলেও কাকরাইলের সড়কে এখনও আছেন বাকিরা। সন্ধ্যার পর সমর্থকদের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন এই বিএনপি নেতা। মধ্যরাতেও বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তার সমর্থকরা।

ইশরাক হোসেন বলেন, রায়টি নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর পর তাদের বিজ্ঞ আইনজীবী প্যানেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। তারপর পুরো কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া যেতে পারে।  আমরা শুনেছি উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ ফোন করে চাপ প্রয়োগ করেছে ফাইলটি যেন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। 

তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে যখন গেল তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলো এখানে মতামত দিলে আমার পক্ষেই দিতে হবে; বিপক্ষে দেওয়ার সুযোগ নেই। যার কারণে আইন মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণ করলো মতামত দিল না। তখন নির্বাচন কমিশনের যে ১০ দিনের সময়সীমা, তার মধ্যে তারা গেজেট প্রকাশ করল। এরপর নির্বাচন কমিশন, আইন মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আমি যাতে শপথ নিতে না পারি, তাতে তারা হস্তক্ষেপ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা—আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ইশরাক বলেন, এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জনগণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

এই উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন ইশরাক। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদকে রদবদল করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আদালতের রায় পাওয়ার পর থেকে পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ করতে গিয়ে এখানে প্রমাণিত হয়েছে বর্তমান সরকার পুরোপুরি নিরপেক্ষ নন। এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিরা রয়েছেন, যারা বিশেষত বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছেন এবং আমাদের বাধাগ্রস্ত করছেন। এ রকম একটি রাজনৈতিক মনোভাবসম্পন্ন অথবা একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সফট কর্নার রয়েছে এ রকম যদি একটি সরকার থাকে, তাদের অধীনে কোনো দিনও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে তারা তাদের দলে গিয়ে রাজনীতি করুক, সংগঠন করুক, তাদের স্বাগতম, কোনো সমস্যা নাই।

এর আগে সন্ধ্যায় ইশরাক বলেন, এই সরকারের মধ্যে নতুন দলের কয়েকজনের রয়ে গেছে। এই দলের প্রতি আমাদের অনেকে আশাবাদ ছিল। তাদের দু’জন উপদেষ্টা এই সরকারে থেকে অনেক কিছুতে হস্তক্ষেপ করছে।

তিনি আরও বলেন, আমাকে মেয়র হিসেবে আদালতের দেওয়া রায়ের ওপর তারা হস্তক্ষেপ করছে। এখনই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করছি। তাদের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, কোনো শত্রুতা নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার। অন্যদিকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে গত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ