বিএনপি গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
Published: 22nd, May 2025 GMT
বিএনপির অভ্যন্তরে অন্তর্কোন্দল থাকায় দলটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না। দলটি গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করছে। এ জন্য জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এমনটা করতে থাকলে জনগণই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা এ কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে এনসিপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ (যাত্রাবাড়ী জোন) শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করতে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। ফ্যাসিবাদী আমলের বিতর্কিত আইনে গঠিত সেই ইসির পুনর্গঠন করতে হবে। ইসিকে জবাবদিহিতে আনার জন্য স্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে হবে।
বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে বলে মন্তব্য করেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব মো.
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাসের খান বলেন, বিএনপির মতো দায়িত্বশীল বড় দল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়নি; বরং কীভাবে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করা যায়, তা নিয়ে তারা সর্বদা ব্যতিব্যস্ত। তারা গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে হটিয়ে নোংরা কায়দায় ক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করছে।
আলী নাসের খান বলেন, বিএনপি সংস্কার শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশনারদের বসিয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেলকে বসিয়েছে। একইভাবে উচ্চ ও নিম্ন আদালত, ব্যুরোক্রেসিসহ অন্য সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজেদের লোক বসিয়েছে। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হলেও তেমন কোনো পরিস্থিতি এখন নেই। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
দলের যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক এস এম শাহরিয়ার বলেন, ২০২২ সালের কালাকানুনের মাধ্যমে যে ইসি গঠিত হয়েছে, তারা নির্বাচন সংস্কারের প্রতিটি প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, এই ইসি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায় না। একই পদধারী খান মুহাম্মদ মুরসালিন বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন বিএনপির পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র কারা চায় না, এটা সবাই জানে। সরকার ঘোষিত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আর ২১ কার্যদিবস বাকি আছে। এর মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির কদমতলী থানার প্রতিনিধি মো. সাদিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার প্রতিনিধি লাকি আক্তার, মিরাসাদ হোসেন হিমেল, ওয়ারী থানার প্রতিনিধি রিফাত খান, যাত্রাবাড়ী থানার প্রতিনিধি মো. রিয়াদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র ন বল ন ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭ বছর ধরে পুলিশের দখলে
ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কার্যালয় দখল করে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ৭ বছর ধরে পরিবার পরিকল্পনা সেবা মিলছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো সমাধান আসছে না।
ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের কাটখাল বাজারে কাটখাল ইউনিয়নে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চারতলা ভবনে ৭ বছর ধরে চলছে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র।
স্থানীয় বাসিন্দা খলিলুর রহমান জানান, এমনিতেই হাওর এলাকার মানুষ কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা সেভাবে পান না। তার ওপর এখানকার মানুষ অনেক অসচেতন। এ রকম একটি এলাকায় পরিবার কল্যাণকেন্দ্র তৈরি হয়েও চালু না হওয়ায় প্রজননসংক্রান্ত জ্ঞান ও সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
বিল্লাল মিয়া নামে একজন বলেন, ‘বাড়ির কাছেই একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়েছে। সেটি দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ায় এলাকার মানুষকে কয়েক মাইল পাড়ি দিয়ে মিঠামইন সদরে অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে গিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।’
কাটখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম রাজনৈতিক মামলার কারণে আত্মগোপনে। পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার কল করলেও তাঁর ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল মিয়া জানিয়েছেন, এ ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে যে পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি রয়েছে, সেটি প্রায় ৭ বছর ধরে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোনো কর্মী নেই, কোনো সেবাও দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর ভাষ্য, গণপূর্ত বিভাগ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের জন্য নতুন একটি তিনতলা ভবন করেছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সমস্যার কারণে সেটি এখনও চালু হয়নি। পয়ঃনিষ্কাশন লাইনটি যেহেতু বাইরে নিতে হবে, সেই কারণে গণপূর্ত বিভাগ সেটি করতে পারছে না। তবে কর্তৃপক্ষ তহবিল দিলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সেটি করে দেওয়া যাবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মিঠামইন থানার ওসি আলমগীর কবীরের সঙ্গে। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন তিনি। ওই এলাকায় পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের জন্য গণপূর্ত বিভাগ একটি তিনতলা ভবন করে দিয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে তদন্তকেন্দ্র স্থানান্তর করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে প্রশ্ন করলে বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি চিঠি এসেছিল। মূল ভবন এলাকায় জলাবদ্ধতাসহ কোনো সমস্যা থাকলে তা সংস্কার ও সেটি গণপূর্ত বিভাগ করে দিতে পারে। পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পয়ঃনিষ্কাশনের লাইনটি অন্যের জায়গার ওপর দিয়ে নিতে হবে। এজন্য গণপূর্তের কাছে আলাদা কোনো তহবিল বরাদ্দ নেই। ইউনিয়ন পরিষদ যেহেতু পরিষেবা বিল নেয়, ফলে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের।
ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়ে কথা হয় কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তিনি এ জেলায় যোগদান করেছেন গত ৯ এপ্রিল। আগের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি লিখেছেন। তিনিও চিঠি লিখবেন।
তবে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে জনবল সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ জেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৬০ শতাংশ পদই শূন্য। নিয়োগ পরীক্ষা হলেও মামলার কারণে নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। ২০১৪ সালে একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়। মামলার কারণে নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। ২০২২ সালেও একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। এবারও মামলার কারণে নিয়োগ বন্ধ। তিনি জানান, ইউনিয়নের সংখ্যা অনুযায়ী একেকটি উপজেলায় ৮ থেকে ১০টি পরিবার কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কোনো কোনো কর্মীকে একাধিক কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এসব কারণে প্রত্যাশামতো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।