উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের আলোচনা
Published: 22nd, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তার পদত্যাগের প্রসঙ্গ উঠে আসে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত তিনজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার দুই কর্মকর্তা এবং ছাত্রনেতারা সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, প্রথমে এক ঘণ্টা নিয়মিত সভা হয়। এরপর সচিবরা বেরিয়ে যান। উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা অনির্ধারিত বৈঠক করেন ড.
বিকেল থেকে এই আলোচনা ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন’ হিসেবে ডালপালা মেলে। বিকেল ৪টায় বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের পথনকশার দাবি জানায়, অন্যথায় সরকারকে সহযোগিতা করা কঠিন হবে বলে মত দেয়। বিকেল ৫টার দিকে জামায়াতে ইসলামী দলের নির্বাহী কমিটির সভা করে এবং সর্বদলীয় সভা ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানায়। সন্ধ্যায় এনসিপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। গণমাধ্যমকে তারা জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে তারা পদত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
এদিকে আদালতের রায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ পাওয়া বিএনপির ইশরাক হোসেনের পক্ষে যায়। তার সমর্থকরা সপ্তাহখানেক ধরে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। গত মঙ্গলবার থেকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে রাতদিন অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খবর আসতে থাকে, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ইশরাক ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের ইতি টানেন। এর কিছু পর শাহবাগ মোড় অবরোধের কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রদল।
এদিকে সরকারপ্রধানের পদত্যাগের ভাবনার কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়ালে সন্ধ্যায় যমুনায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসেন তারা।
নাসীরুদ্দীন সমকালকে জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে যমুনায় গিয়েছিলেন। ড. ইউনূস তাদের বলেছেন, তিনি আর দায়িত্বে থাকতে চান না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাঁকে সরকারপ্রধান হিসেবে থাকতে হবে বলে বুঝিয়েছি। তিনি ভাববেন বলে জানিয়েছেন।’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন বলে জানা গেছে। তবে তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে একই সময়ে গিয়েছেন, নাকি আলাদা গিয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উপদেষ্টাদের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে অবিশ্বাস করায় ড. ইউনূস হতাশা প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন বিষয়কেও নির্বাচনী ইস্যু করে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে– এটা তিনি বারবার বলছেন। জুনের পর এক দিনও থাকবেন না। কিন্তু কোথাও যেন অবিশ্বাস রয়ে গেছে।
বিএনপি নেতাদের অনেকেই গত কয়েক মাস ধরে খোলাখুলি অভিযোগ করছেন, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় সরকারের কেউ কেউ। মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার আলোচনাকেও নির্বাচন বিলম্বের ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, এমন একটি আবহ তৈরি করা হয়েছে– আমি নাকি দেশ বিক্রি করে দিচ্ছি! এ অপবাদ নিয়ে থাকতে চাই না।
রাজনৈতিক চাপের কারণে কিছুই করা যাচ্ছে না বলে জানান উপদেষ্টারা। তারা একে একে অভিযোগ করেন, কাজ করতে কোথায় কী প্রতিবন্ধকতায় পড়ছেন। ড. ইউনূস তখন বলেন, কোথাও কিছু করা যাচ্ছে না, সব কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সরকারের মূল লক্ষ্য হলেও প্রশাসনসহ সব কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ায় ভোট নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নে মুখে ফেলবে।
বৈঠকে বলা হয়, নির্বাচন বিতর্কিত হলে নোবেলজয়ী হিসেবে ড. ইউনূসের সারাজীবনের অর্জিত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। ড. ইউনূস বলেন, এই দায় তিনি নিতে চান না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলের অনুরোধে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। দলগুলো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কথা দিয়েছিল– আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। কিন্তু এখন অস্থিরতা তৈরি করেছে। মানুষের আশা পূরণ করতে দিচ্ছে না। জনদুর্ভোগ তৈরি করছে। যে কোনো ইস্যুতেই রাস্তা অবরোধ করছে।
আরেক উপদেষ্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি নিজ পেশায় ভালো ছিলেন। অভ্যুত্থানের নায়করাও এখন কথায় কথায় আন্দোলন করছেন, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর। যারা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারাই সহযোগিতা করছেন না। সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে, তাতে সরে যাওয়া উচিত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পদত য গ র র জন ত ক সরক র র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড
চাকরিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেওয়া চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর জলকামান নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (৭ জুলাই) সকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। পরে সেখান থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। পরে কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
তাদেরকে সরে যেতে ১০ মিনিটের আল্টিমেটাম দেয় পুলিশ। তারা পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রমনা থানার পরিদর্শক আতিকুল ইসলাম বলেন, “সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। এরপরও যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।”
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা চাকরি ফেরত, বিজিবির নাম আবার বিডিআর করাসহ ৩ দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
তাদের দাবিগুলো হলো—ক্ষতিপূরণ দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের বিভিন্ন ধারা বাতিল এবং বিডিআর নাম পুনর্বহাল ও কারাগারে বন্দি থাকা সদস্যদের মুক্তি।
ঢাকা/রায়হান/ইভা