লন্ডনে শায়ান এফ রহমানের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দ
Published: 23rd, May 2025 GMT
লন্ডনে আহমেদ শায়ান এফ রহমানের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের আদেশ পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। শায়ান বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলার মধ্যে যুক্তরাজ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
যে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের আদেশ হয়েছে, সেগুলোর একটি হলো লন্ডনের ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ারের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। এটি ২০১০ সালে ৬৫ লাখ পাউন্ড (১০৬ কোটি টাকার বেশি) দিয়ে কেনা হয়েছিল। অন্য অ্যাপার্টমেন্টটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে। এটি পরের বছর ১২ লাখ পাউন্ড (সাড়ে ১৯ কোটি টাকার বেশি) দিয়ে কেনা হয়।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট নথির তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা গ্রেশাম গার্ডেনসের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেছেন। তবে তিনি এখনো সেখানে থাকেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ ও বর্তমান পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের মা।
যুক্তরাজ্যের আন্তদেশীয় অপরাধ দমন সংস্থা এনসিএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে একটি চলমান ফৌজদারি তদন্তের অংশ হিসেবে ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ার এবং গ্রেশাম গার্ডেনসের অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের আদেশ (ফ্রিজিং অর্ডার) পেয়েছে এনসিএ। এই মুহূর্তে আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’ ফ্রিজিং অর্ডার হচ্ছে এমন আদালতের এমন একটি আদেশ, যা কোনো সম্পত্তি বিক্রি বা অন্যভাবে ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করে দেয়।
নথি অনুযায়ী, লন্ডনের এই অ্যাপার্টমেন্ট দুটি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ অঞ্চল আইল অফ ম্যান-এ নিবন্ধিত অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, সালমান এফ রহমান ও শায়ান এফ রহমান অর্থ আত্মসাতের তদন্তে সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন।
শায়ান এফ রহমানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমাদের মক্কেল জোরালোভাবে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করছেন। যুক্তরাজ্যে যদি কোনো তদন্ত হয়, তবে তিনি অবশ্যই তাতে সহযোগিতা করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেখানে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিষয়টি যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবে বলে আমরা আশা করি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য শেখ রেহানা ও সালমান এফ রহমানের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শেখ হাসিনা ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের পর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন।
এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন। এ সরকার পুলিশ, গণমাধ্যম এবং বিচারব্যবস্থার মতো প্রতিষ্ঠান সংস্কারের চেষ্টা করছে। অধ্যাপক ইউনূস দাবি করেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের দখলে চলে গিয়েছিল।
গত বছরের গণ–অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে কয়েক শ কোটি ডলার উদ্ধার প্রচেষ্টা তদারকির দায়িত্ব দেন। আগের সরকারের ঘনিষ্ঠদের দ্বারা এসব অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে এসব ব্যক্তির কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ ও সম্পদ জব্দ করেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই অর্থ উদ্ধারে একসঙ্গে কাজ করছে।
চলতি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার। দলটির সমর্থকেরা অভিযোগ করেছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে নতুন প্রশাসন প্রকৃতপক্ষে আগের সরকারের ওপর রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিচ্ছে।
নতুন বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া দুটি দুর্নীতির তদন্তে নাম এলে শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক এই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কোনো ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন। তবে ব্রিটিশ সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে, এমন সতর্কতার মধ্যে গত জানুয়ারিতে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় ন এফ রহম ন ন এফ রহম ন র সরক র র র সরক র তদন ত ইউন স ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় না আনলে পুরো অঞ্চল পরিণাম ভোগ করবে: আরাঘচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানে হামলার জন্য যদি ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনা না হয়; তবে পুরো অঞ্চল এবং তার বাইরেও এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। আজ সোমবার ব্রাজিলে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ব্রিকস সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে আরাঘচি বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ২২৩১-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০১৫ সালে ওই প্রস্তাবে সর্বসম্মতভাবে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।’ খবর আল জাজিরার
গত মাসে ইরানের কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হঠাৎ হামলা করে ইসরায়েল। জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। দুই প্রতিবেশীর সংঘাতের মধ্যে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
আরাঘচি আরও বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র যে হামলা চালায় তাতে ইসরায়েলের ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধে মার্কিন সরকারের সম্পূর্ণ জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না।
রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইরান ব্রিকস প্লাস জোটের অন্যান্য সদস্য দেশের সমর্থন পেয়েছে। বৈঠকে ব্রিকস প্লাস জোট ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে। ১১টি দেশের এই জোট বলেছে, এসব হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘আমরা গত ১৩ জুন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে হামলার নিন্দা জানাই।’ তারা আরও বলেছে, ‘আমরা ইরানের বেসামরিক অবকাঠামো এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
ব্রিকস থেকে দেওয়া এই বিবৃতিকে তেহরানের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসরায়েল টানা ১২ দিন ধরে ইরানে হামলা চালায়। এ হামলার মধ্যেই ইরানের নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল ইরানের সামরিক স্থাপনা, পারমাণবিক, বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করে। এই হামলায় ইরানের অন্তত ৯৩৫ জন মানুষ মারা যান। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৩২ জন মানুষ।
তেহরান জবাবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে ইসরায়েলের অন্তত ২৯ জন মানুষ নিহত হন। ৩ হাজার ৪০০ জন আহত হন বলে জানিয়েছে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়।