খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ বেশ পুরোনো। ২০২০ ও ’২২ সালে দুই দফায় কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই আবাসিক প্রকল্পের কোটি টাকা মূল্যের ৪৭টি প্লট আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভাগ করে নেন। এসব প্লটে অনিয়ম বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হয়নি কোনো তদন্ত বা বিচার। তবে নিয়ম না মানায় সাংবাদিক ফারজানা রূপা এবং সাবেক এমপি গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণার প্লট বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে কেডিএ।

কেডিএ থেকে জানা গেছে, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পের প্লট বিক্রির আবেদন শুরু হয় ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট; চলে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। আবেদন জমা পড়ে ২ হাজার ৩৬০টি। ২০১৬ সালে প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে মোট ৬২৯ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সূত্রটি জানায়, ২০২০ সালে প্রকল্পের অবকাঠামোর কাজ শেষ হলে বেশ কিছু প্লট ফাঁকা পাওয়া যায়। নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ওই প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। ওই বছর ৩২টি প্লট আওয়ামী লীগ নেতা ও কেডিএ কর্মকর্তারা ভাগ করে নেন। বিষয়টি নিয়ে যেন কেউ আপত্তি না তোলেন, এ জন্য তৎকালীন গণপূর্তমন্ত্রীর এপিএস, উপসচিব, দুদক সচিবসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদেরও প্লট দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন কেডিএর তৎকালীন পরিচালক ড.

শাহানুর আলম ও পরিচালক (এস্টেট) ছাদেকুর রহমান। তাদের সঙ্গে ওই সময় প্লট নিয়েছিলেন সাবেক এমপি গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সাইফুর রহমান খান, দুদকের সাবেক সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ডিআইজি হাফিজুর রহমান, পূর্ত (অডিট) বিভাগের মহাপরিচালক আনিচুর রহমান, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব।

পরে ২০২২ সালে আরেক দফা প্লট ভাগাভাগি হয়। ওই সময় সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান বাবু, সাবেক এমপি রুনু রেজা ও তাঁর ৩ স্বজন, কেডিএর বর্তমান সচিব মো. বদিউজ্জামান, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব নায়লা আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানাসহ কয়েকজন প্লট পান।  

২০১৫ সালের ১৮ আগস্টের কেডিএর ৫৩২তম বোর্ড সভায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের প্লট বরাদ্দ নীতিমালা অনুমোদিত হয়। ওই নীতিমালায় বলা হয়, প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হলে তারা কর্মকর্তা কোটায় আবেদন করতে পারবেন। পরে ছয় মাসের মধ্যেই এ নিয়ম বদলে ফেলেন তৎকালীন কর্মকর্তারা। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ‘চাকরিকাল এক বছর পূর্ণ’ হলের স্থলে ‘চাকরিরত অবস্থায় থাকলে’ সংযোজন করা হয়। এর মাধ্যমে কেডিএতে প্রেষণে এলেই প্লট নিশ্চিত হয়।

কেডিএর বৈষয়িক বিভাগের বেশির ভাগ কর্মকর্তা নতুন যোগ দিয়েছেন। পুরোনো প্লট ভাগবাটোয়ারা বিষয়ে তারা কেউই কোনো তথ্য দিতে পারেননি। কেডিএর সিনিয়র বৈষয়িক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ কবি সাদ জানান, প্লট নিয়ে কোনো তদন্তের বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি। অডিটে ফারজানা রূপার আয় সনদ জাল এবং গ্লোরিয়া ঝর্ণা নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় তাদের প্লট দুটি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, অবিলম্বে তদন্ত করে অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া প্লট বাতিল ও জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ কর মকর ত র রহম ন তৎক ল ন প রকল প ক ড এর তদন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘নেভার লেট মি গো’ যেভাবে

আমি তখন আমার চতুর্থ ও পঞ্চম উপন্যাস লেখায় ব্যস্ত। লেখার ঘরটা ছিল এক ঘরোয়া জঙ্গল। চারদিকে ধুলা, হাতের লেখায় ভর্তি কাগজের পাহাড় আর থরহরি দুলে ওঠা ফাইলের স্তম্ভ।

২০০১ সালের বসন্তে আমি নতুন উদ্যমে একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করলাম। এর আগে ঘরটিকে নিজের পছন্দমতো নিলাম সাজিয়ে। ছাদ পর্যন্ত বুকশেলফ, আর দুটি লেখার ডেস্ক, কৌণিক বসানো, ওই আমার মনপছন্দ আর কী। ঘরটা আমার আগের ঘরের চেয়েও ছোট ছিল (আমি সবসময় ছোট ঘরে লেখা পছন্দ করি, জানালার বাইরে তাকানোর সুযোগ আমি চাই না। দৃশ্য পেছনে রাখি), ফলে খুশিই ছিলাম। যারা বলতেন, এই তুমি এতো ছোট ঘরে লেখ কী করে? তাদের বলতাম– পুরোনো ট্রেনের আয়েশী নিদ্রামিতা কামরায় বসে লেখার মজা জানো ভাই? শুধু চেয়ার ঘুরিয়ে হাত বাড়ালেই প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।

বাম পাশের বুকশেলফে হাতের কাছে রাখা ছিল একটি বক্স ফাইল, লেবেল করা: ‘স্টুডেন্টস্‌ নভেল’। এর ভেতরে ছিল হাতে লেখা নোট, মাকড়ের জালের মতো ডায়াগ্রাম আর কিছু টাইপ করা পাতা–পাতাগুলো দুটি ভিন্ন চেষ্টার ফল। ১৯৯০ ও ১৯৯৫-এ ‘নেভার লেট মি গো’ উপন্যাসটি লেখার চেষ্টা হিসেবে শুরু করেছিলাম। দু’বারই আবার ভিন্ন লেখায় তলিয়ে যাই। নেভার লেট মি গো থেকে যায় ব্রাত্য। 

পাঠক ও লেখক হিসেবে আমি বড় হয়েছি ৭০-এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যপাঠ আর ৮০-এর দশকের লন্ডনে কথাসাহিত্যের পরিবেশে। সময়টা ছিল সাহিত্যিক উচ্চাভিলাষী যুগ–একটা আন্তর্জাতিক ভাব বজায় ছিল সবলে-প্রবলে, আর উপনিবেশোত্তর সাহিত্যের জন্য হাটখোলা। একই সঙ্গে এই যুগ ছিল জনপ্রিয় ধারার সাহিত্যকে অবজ্ঞা করার সময়। বিশেষ করে সায়েন্স ফিকশন সাহিত্যের প্রতি ছিল এক রহস্যময় অবজ্ঞা। ওটা যেন মূলধারার সাহিত্যই ছিল না। ছিল এর বাইরের রহিম-করিম কেউ। আমি ও আমার সমসাময়িক অনেকে তাই সচেতনভাবে সায়েন্স ফিকশন থেকে দূরে থাকতাম–ভাবতাম, ওটা আমাদের সঙ্গে যায় না। 

৯০-এর দশকের শেষ দিকে আমি হঠাৎ টের পেলাম–এই শর্মা আর ‘তরুণ লেখক’ নেই। ব্রিটেনে তখন এক নতুন, উদ্যমী লেখক প্রজন্ম উঠে আসছে। ওরা আমার থেকে প্রায় দশক দেড়ের ছোট। তাদের কারও কারও লেখা পড়ে দূর থেকেই মুগ্ধ হয়েছি, আবার কেউ কেউ বন্ধু হয়ে উঠেছে। ওদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আমাকে এক নতুন মঞ্চে নিয়ে এলো। আমার কল্পনার এমন কিছু জানালা খুলে গেল, যেসব খুলবে কখনও ভাবিনি। ওরা আমাকে এক বিস্তৃত, জীবন্ত সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। আমার লেখার দিগন্তও দিল বাড়িয়ে।

সেই সময় আরও কিছু বিষয় প্রভাব ফেলতে পারে। ১৯৯৭ সালে ‘ডলি’র ছবিতে সমস্ত সংবাদপত্র সয়লাব। ডলি, অর্থাৎ পৃথিবীর প্রথম ক্লোন করা স্তন্যপায়ী প্রাণী, ভেড়া। বিষয়টি না ভাবিয়ে উপায় কী। ওটা একটি দিক, আবার, আমার আগের দুটি উপন্যাস দ্য আনকনসোল্ড, হোয়েন উই অয়্যার অরফ্যানস লেখার অভিজ্ঞতাও একটু আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল আমাকে। ও দুটো কিন্তু বাস্তব জীবনের বাইরে গিয়ে লেখা। যাই হোক, ‘স্টুডেন্টস নভেল’ লেখার তৃতীয় প্রচেষ্টা আগেরবারগুলোর থেকে আলাদা হলো সন্দেহ নেই। তবে তখনও অনেক সুতো ছিন্ন। মালা গাঁথার ঘটনা ঘটল আরও ক’দিন পর। 

সেদিন, আমি গোসল করছিলাম, আর্কিমিডিসের মতো বাথটাবে নয়, হালের শাওয়ারে, হঠাৎ সেই ‘ইউরেকা’ মুহূর্ত এলো। পুরো গল্পটা চোখের সামনে দেখতে পেলাম! ছবির মতো দৃশ্যপট, সুতোয় সুতোয় গিঁট চক্কর খেতে থাকল মাথায়। তবে তুষ্ট হতে গিয়ে আমি একই ঘটনা তিনটি আলাদা আঙ্গিকে লিখলাম। আমার সহধর্মিণী লরনাকে তা দেখানোর পর সে নির্দ্বিধায় যেটি বেছে নিল, স্বস্তি, সেটি আমার চিন্তার সঙ্গেও মিলে গিয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ