আইফোনে ভিডিও কল আরও নিরাপদ করতে অ্যাপলের নতুন উদ্যোগ
Published: 8th, July 2025 GMT
আইফোন ব্যবহারকারীদের ভিডিও কলকে আরও নিরাপদ করতে নতুন একটি সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে অ্যাপল। বর্তমানে আইওএস ২৬ অপারেটিং সিস্টেমের বেটা সংস্করণে সুবিধাটির কার্যকারিতা পরখ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সুবিধাটি চালু হলে ফেসটাইম অডিও-ভিডিও কলিং অ্যাপে কেউ অনুপযুক্ত বা অশালীন আচরণ করলে পর্দায় চালু থাকা ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর ফলে কিশোর–কিশোরীদের পাশাপাশি নারীরা ভিডিও কলে কথা বলার সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন না।
অ্যাপলের তথ্যমতে, নতুন সুবিধাটি মূলত ফেসটাইম অ্যাপে ভিডিও কল পর্যবেক্ষণ করবে। এর ফলে ভিডিও কল চলাকালে কেউ পোশাক খোলার চেষ্টা করলে বা আপত্তিকর আচরণ করলে তাঁর ভিডিও তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে পর্দায় একটি সতর্কবার্তা দেখানো হবে। এতে লেখা থাকবে, ‘আপনি হয়তো কিছু সংবেদনশীল কনটেন্ট দেখাচ্ছেন। অডিও ও ভিডিও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।’ সতর্কবার্তা প্রদর্শনের পর ব্যবহারকারীরা চাইলে ভিডিও কল চালিয়ে যেতে পারবেন, আবার চাইলে কলটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
নতুন এ সুবিধা আইফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকবে। ব্যবহারকারী চাইলে সেটিংসে গিয়ে সতর্কবার্তা আসার পর কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, তা নির্ধারণ করতে পারবেন। অ্যাপল জানিয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হবে অন ডিভাইস মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে। অর্থাৎ ভিডিও কলের কোনো তথ্য আইফোনের বাইরে যাবে না, যা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সুবিধাটি বর্তমানে আইওএস ২৬–এর বেটা সংস্করণে সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। এ মাসের শেষ নাগাদ সুবিধাটির পাবলিক বেটা সংস্করণ উন্মুক্ত করা হবে। এরপর আইওএস ২৬–এর চূড়ান্ত সংস্করণে যুক্ত করা হতে পারে।
সূত্র: টেকলুসিভ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ড ও কল স স করণ অ য পল আইফ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার: জরিপ
দেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনের সঙ্গে জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামী সহিংস আচরণ করেছেন।
শারীরিক, যৌন, মানসিক, অর্থনৈতিক সহিংসতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন নারী। তবে সামগ্রিকভাবে এই সহিংসতার হার ২০১৫ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মিনাক্ষী বিশ্বাস।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশের ৭৬ শতাংশ নারীকেই জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গীর সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ গত এক বছরে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সহিংসতার শিকার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন ভুক্তভোগী (৬২ শতাংশ) তাঁদের অভিজ্ঞতা কখনো প্রকাশ করেননি।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, ১৫ শতাংশ নারী ১৫ বছর বয়স থেকে সঙ্গী নন এমন ব্যক্তির মাধ্যমে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তবে স্বামীর সহিংস আচরণ ২০১৫ সালে ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
জরিপে আরও বলা হয়, কম বয়স, যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং শহুরে বস্তিতে বসবাস করা নারীরা স্বামীর মাধ্যমে বেশি সহিংসতার শিকার হন। স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়। কম বয়স, সীমিত শিক্ষা ও প্রতিবন্ধিতার কারণে নারীরা সঙ্গী নয় এমন ব্যক্তির কাছে বেশি সহিংসতার শিকার হন।
যৌন সহিংসতা বেশি
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, অর্ধেকের বেশি নারী (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ গত ১২ মাসে একাধিকবার সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক সহিংসতা এবং ৫ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা নারীর সঙ্গে শারীরিক সহিংসতার ঘটনায় বেশি জড়িত। আর পুরুষ আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতজনের মাধ্যমে নারীরা বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হন।
ডিজিটাল মাধ্যমেও সহিংসতা
জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তির মাধ্যমে জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এগুলো যৌন ব্ল্যাকমেল, ছবি নিয়ে অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরিষেবা চাওয়ার হার কম
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে পরিষেবা চাওয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে কম। জরিপের ফলাফল বলছে, মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ সহিংসতার শিকার নারী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। স্বামীর কাছে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতার কাছ থেকেই সহায়তা চেয়েছেন।
অন্যদিকে জীবনসঙ্গী নয়, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং সবচেয়ে বেশি পুলিশের কাছ থেকেই আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে সেই সচেতনতাও কম। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, প্রতি দুজনের মধ্যে একজনেরও কম নারী (৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ) জানেন না যে কোথায় সহিংসতার অভিযোগ জানাতে হয় এবং মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী সহিংসতার সহায়তাকারী হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে অবগত।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।