রিয়ালের হয়ে যে ইতিহাস গড়ে বিদায় নিচ্ছেন আনচেলত্তি
Published: 23rd, May 2025 GMT
কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল মাদ্রিদ অধ্যায়ের শেষটা নিশ্চিত হয়েছে আরও আগে। শুধু এটুকুই নয়, পরবর্তী গন্তব্য ব্রাজিলের সঙ্গে এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। এরপরও রিয়ালকে তো আনুষ্ঠানিকতাটুকু তো সম্পন্ন করতেই হতো।
সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটাই আজ দিয়েছে রিয়াল কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে আনচেলত্তির রিয়াল ছাড়ার বিষয়টি। আগামীকাল রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ম্যাচটাই হবে রিয়ালের ডাগআউটে আনচেলত্তির শেষ ম্যাচ।
নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে রিয়াল লিখেছে, ‘রিয়াল মাদ্রিদ এবং কার্লো আনচেলত্তি চুক্তির ইতি টানার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। রিয়াল মাদ্রিদ ও বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম মহান কিংবদন্তিকে আমাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও অশেষ ভালোবাসা জানাই।
আরও পড়ুনমাদ্রিদে বসে ব্রাজিল নিয়ে যা বললেন আনচেলত্তি১৪ মে ২০২৫কার্লো আনচেলত্তি আমাদের ক্লাবের ১২৩ বছরের গৌরবময় ইতিহাসের অন্যতম সফল সময়ে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ক্লাব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শিরোপাজয়ী কোচ হিসেবে নিজের নাম অমর করে রেখেছেন।’
এ সময় রিয়ালের হয়ে আনচেলত্তির অর্জনের বিস্তারিত বিবরণও তুলে ধরা হয়। রিয়ালে আনচেলত্তি প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৩–২০১৫ সাল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি দায়িত্ব নেন ২০২১ সালে।
এ দুই মেয়াদে রিয়ালের হয়ে রেকর্ড ১৫টি ট্রফি জিতেছেন তিনি, যার মধ্যে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, তিনটি ক্লাব বিশ্বকাপ, তিনটি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, দুটি লা লিগা, দুটি কোপা দেল রে এবং দুটি স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা জিতেছেন।
আরও পড়ুনযে তিন কারণে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন আনচেলত্তি১৩ মে ২০২৫আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও রিয়ালকে বিদায় বলার মধ্য দিয়ে আনচেলত্তি হয়তো ক্লাব ফুটবলকেও বিদায় জানালেন। তেমনটা হলে ক্লাব ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ হিসেবেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর দখলে আছে সব মিলিয়ে ৩১টি ট্রফি, যার মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও জিতেছে তিনি।
ক্লাব ফুটবলকে আপাতত বিদায় বললেও আনচেলত্তির চ্যালেঞ্জ কিছু শেষ হয়ে যায়নি। এখন তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জেতার। রিয়াল ছেড়ে আনচেলত্তির পরবর্তী গন্তব্য পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলে। ব্রাজিলের হয়ে আনচেলত্তির মূল লক্ষ্য থাকবে ২০২৬ বিশ্বকাপ জেতা। সেটি করতে পারলে আনচেলত্তির অর্জনের ষোলোকলাও পূরণ হবে।
আরও পড়ুনআনচেলত্তির ব্রাজিল দলে ফিরতে কতটা প্রস্তুত নেইমার২১ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল র হয়
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।