কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় ধান কাটা, মাড়াই। সেই ধান ঘরে তুলতে সন্ধ্যা রাত। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর স্বপ্ন থাকে ধান বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ার। সেই স্বপ্ন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তিশালী চক্র। যাদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক।
ধান নিয়ে কৃষকের দুর্ভোগের এ চিত্র দেখা গেছে গাইবান্ধা জেলায়। চলতি বছর বোরো মৌসুমে কৃষকদের পরিবর্তে চক্রটি সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী ও সরকারি গুদামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের চক্রটি কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ ধান ৯০০ টাকা দরে কিনে সরকারি খাদ্যগুদামে ১ হাজার ৪৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
কৃষি কার্ডের জন্য কৃষককে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। সদর উপজেলায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কৃষি কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত ১৩ হাজার ৫০০ কৃষকের তালিকা খাদ্য বিভাগকে দেওয়া হয়েছে ধান সংগ্রহের জন্য। তাদের অনেকেই কৃষক নয়। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কিছু লোকের যোগসাজশে গড়ে ওঠা একটি চক্র আবাদি জমি আছে, এমন প্রান্তিক কৃষক বাদ দিয়ে ভুয়া তালিকা করে খাদ্য বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। পরে সময় ও সুযোগমতো তাদের কার্ড নিয়ে নিজেরাই বেশি দামে খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কৃষক তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন কামারজানি ইউনিয়নের মাহবুব রহমান। তিনি পেশায় উদ্যোক্তা। জমিতে ধান করেননি। কথা হলে জানান, শখের বশে আবেদন করেছেন। ৪২৩ নম্বরে আছেন বল্লমঝাড় ইউনিয়নের রোকেয়া বেগম। তাঁর জমি মাত্র ২৮ শতাংশ। এ জমির ধান দিয়ে সংসারের খরচ চালান। খাদ্য বিভাগে ধান দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তালিকার ২৩৯ নম্বরে ঘাঘোয়া ইউনিয়নের মমেনা বেগমের নাম রয়েছে। তাঁর জমির পরিমাণ মাত্র ২০ শতাংশ। জমির ধান দিয়ে কোনো রকমে বছরের খোরাক চলে।
মমেনা জানান, ৫/৭ বছর আগে তাঁর নামে ধান বিক্রির স্লিপ এসেছিল। এক ব্যবসায়ী সেটা কিনে নিয়েছিল। এর পর আর কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে কথা বলতে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
সদর উপজেলার রেলগেট, চাপাদহ দক্ষিণপাড়া, খোলাহাটিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক জানান, ধান রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত তিন মাসে একজন কৃষককে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এর পর আবার গুদামে ধান দিতে আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব খোলা, গুদামে ধান দিয়ে আসার খরচ, তালিকায় প্রকৃত কৃষকের নাম না থাকাসহ রয়েছে নানা ঝামেলা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অনেকেই ঋণ-দাদন নিতে বাধ্য হন। সংকটের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পানির দরে নতুন ধান সংগ্রহে নেমে পড়ে মহাজন-ফড়িয়ারা।
রেলগেট এলাকার কৃষক শাজাহান শেখ বলেন, ধান কাটা শেষ হওয়া মাত্রই হাজির হয় ফড়িয়ারা। ব্যবসায়ীরাও সরাসরি আসে। তারা কৃষকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ধান পাকার আগেই অগ্রিম টাকা দেয়। এর পর প্রতি মণ ধানের একটি নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করে সেই দামে কিনতে বাধ্য করে।
আক্ষেপ করে সদর কূপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ দক্ষিণপাড়ার কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘যার এক কানি জমিও নেই, তার নামে গুদামে ধান সরবরাহের স্লিপ আসে। একটি স্লিপ ৩ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা কিনে নেয়। আমার ১৫ বিঘা জমি থাকার পরও কৃষকের তালিকায় নাম নেই।’
খোলাহাটি গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ধান কাটার সময় সুদের ওপর টাকা নিয়ে শ্রমিকের খরচ দেওয়া লাগে। কম দামে ধান বিক্রি করে লাভসহ সুদের সেই টাকা পরিশোধ করতে হয়। ধান আবাদে লাভ হয় না। সব লাভ ব্যবসায়ীদের।
জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর। আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। জেলায় এ বছর ৩৬ টাকা কেজি দরে ৩৫ হাজার টন ধান ও সেদ্ধ চাল ৪৯ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৩০০ টন ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছে খাদ্যগুদাম সূত্র।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম জানান, কৃষকরা অনলাইনে আবেদন করেন। সেগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করে খাদ্য বিভাগে পাঠান। কৃষক নির্বাচনে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (এসএও) ভূমিকা রয়েছে। কৃষক নন, এমন কেউ তালিকাভুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রকৃত কৃষক নির্বাচনে পদ্ধতিগত ও প্রচার-প্রচারণায় ঘাটতি থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিচ্ছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী এসব ধান সংগ্রহ করা হয়। কৃষক নির্বাচনে আমাদের হাত নেই।
উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সদর সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বাবু। তিনি বলেন, কৃষক তালিকায় অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ ধ ন স গ রহ কর মকর ত ব যবস য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আঠারো শতকের সুফি কবি ও সংগীতজ্ঞ সৈয়দ খাজা মীর দর্দ
আবদালি মারাঠিদের উৎপাত ও অত্যাচারে অন্য কবিরা যখন একে একে দিল্লি ছেড়ে লক্ষ্ণৌ চলে গিয়েছিলেন, তখনো প্রিয় শহর দিল্লি ছাড়েননি সৈয়দ খাজা মীর দর্দ (১৭২০-১৭৮৪ খ্রি.), বরং আমৃত্যু সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ে অবস্থানকারী কবিদের কাব্যবৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাঁর কবিতার যে পার্থক্য ছিল, শুধু সে কারণেই তিনি সেই জায়গায় যাননি তা নয়, তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রখর, কারও তারিফ করে কখনো কসিদা লিখেছেন বলে শোনা যায়নি, সর্বোপরি তাঁর জীবনদর্শনও ছিল সমকালিক অন্য কবিদের থেকে আলাদা। মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন। মির্জা রফী সওদার চেয়েও সাত বছরের অগ্রজ মীর দর্দ এই সবকিছুই নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছেন, পারস্য ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভান্ডার থেকে অনেক কিছু গ্রহণও করেছেন, তবু আমাদের ধারণা, পারিবারিক বংশধারার প্রভাবেই তাঁর জীবনদর্শন ও কাব্যচিন্তা শুরু থেকেই ভিন্ন ছিল।
মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন।মাহমুদ আলী খান জামী তাঁর ‘দর্দ কে সো শের’ (প্রকাশকাল: ১৯৫৫ খ্রি., দিল্লি) গ্রন্থে লিখেছেন, খাজা মীর দর্দের দাদা বাদশাহ আলমগীরের শাসনামলে বুখারা থেকে এ দেশে এসেছিলেন, আর বাবা খাজা মাহমুদ নাসির আন্দালিব ছিলেন ‘শায়েরে উর্দু’ এবং ব্যক্তিগত জীবনে একজন সুফি। ভিন্ন মতে, তাঁর বাবার নাম (মাহমুদ নাসির নয়) মুহাম্মদ, আর তিনি উর্দু ভাষার কবি ছিলেন না, ছিলেন ফারসি ভাষার কবি। এঁরা ছিলেন নকশবন্দী ঘরানার পথিকৃৎ খাজা বাহাউদ্দিনের বংশধর ও অনুসারী। সুফি পরম্পরার মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন বলেই মাত্র বাইশ বছর—ভিন্ন মতে, সাতাশ বছর বয়সে জাগতিক মোহ ত্যাগ করে সুফি শুদ্ধাচারী হয়ে ওঠেন দর্দ এবং সুফি তত্ত্বসংক্রান্ত একাধিক বই লেখেন। ফলে তিনি যখন শের ও গজল লেখেন, তখন সেগুলোতে স্বভাবগত কারণেই সুফি মরমি কবিতার সহজগভীর ভাবের ছায়া পড়েছে। নিচে দর্দ কে সো শের বই থেকে—অন্যত্র গজলরূপে গণ্য এবং গীত—প্রথম ৩টি শের পড়লে এ কথার সত্যতা মিলতে পারে :
তোহমতে চন্দ অপনে জিম্মে ধর চলে
জিস লিয়ে আয়ে থে হম সো কর চলে
জিন্দেগি হ্যয় য়া কোই তোফান হ্যয়
হম তো ইস জিনে কে হাথোঁ মে মর চলে
শমা কে মানিন্দ হম ইস বজম মে
চশম নম আয়ে থে দামন তর চলে
অর্থাৎ :
কত অপবাদ বয়ে নিয়ে আমি চলছি
অথচ যে কারণে এসেছি তা–ই করে গেছি
এ কোনো জীবন, নাকি তুফান
তার হাতেই তো আমি মারা যাব
এই সভার প্রদীপ ছিলাম আমি
এখন আমার চোখের জলে আঁচল ভিজে যায়
[অনুবাদ: লেখক]
অল্প বয়স থেকে যিনি এমন ভাবনায় তাড়িত, তাঁর গজলে এই প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। সুফি কবি ও সাধক হিসেবে স্বীকৃত হলেও গজলকার হিসেবে যেরকম গণ্য হননি খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি, ঠিক একই কারণেই গজলকার হিসেবে কেউ কেউ তাঁর নাম সমকালের মীর তকী মীর ও মির্জা রফী সওদার কাতারে রাখতে কুণ্ঠিত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে খোদ মীর তকী মীরের একটি মন্তব্য আছে, যা অনেকেই উদ্ধৃত করেন, তা হলো: তিনি নাকি আড়াইজন কবিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতেন, যার মধ্যে একজন তিনি নিজে, অন্যজন মির্জা রফী সওদা আর অর্ধজন হলেন খাজা মীর দর্দ।
তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।শের ও গজলের ক্ষেত্রে মীর তকি মীর শেষমেশ যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন সেই জায়গা থেকে বিচার করে তাঁর এই কথাটিকে সদর্থে ধরে নিলে কবিতায় খাজা মীর দর্দের অবদানকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন না করে উপায় নেই। আসলে পারস্য কবিতার ঐতিহ্য ধারণ করে উর্দু গজলে যখন পরবর্তীকালের জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নারীর সঙ্গে আলাপের আবহ তৈরি হচ্ছে, খাজা দর্দ তখন একই উৎস থেকে গ্রহণ করেছিলেন সুফি ঐতিহ্য। সমালোচকদের মতে, তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘দিওয়ান-এ উর্দু’, কিন্তু তাঁর ‘শমা-এ মহফিল’, ‘আহ-এ দর্দ’, ‘দর্দ-এ দিল’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের প্রাঞ্জল ভাষা ও সুফিহৃদয়ের ভাব সেই সময় ও পরবর্তীকালের কবিদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তাঁর একটি অনবদ্য শের হলো: ‘তমান্না তেরি হ্যাঁয় অগর হ্যাঁয় তমান্না/ তেরি আরজু হ্যায় অগর আরজু হ্যায়’ অর্থাৎ, আকাঙ্ক্ষা যদি থাকে, তা তোমারই আকাঙ্ক্ষা/ আশা তোমার জন্য, আদৌ আশা বলে যদি কিছু থাকে’। প্রেমের এমন একনিষ্ঠ নিবেদন খাজা দর্দের শেরেই পাওয়া সম্ভব। নিচে পড়ে নিতে পারি তাঁর আরও একটি জনপ্রিয় শের:
হাজারোঁ খওয়াহিশেঁ অ্যায়সি কে হর খওয়াহিশ পে দম নিকলে
বহুত নিকলে ম্যারে আরমান ল্যাকিন পির ভি কম নিকলে
অর্থাৎ :
এমন হাজার বাসনা আমার, যার প্রতিটি বাসনার জন্য প্রাণ ওষ্ঠাগত
কিছু আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো বটে; কিন্তু তা খুবই সামান্য
তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।
আরও পড়ুনএকাদশ শতকের সুফি কবি হাকিম সানায়ি গজনভি২৮ আগস্ট ২০২৫মীর দর্দের এমন উচ্চাসনে পৌঁছার অন্য একটি কারণ হলো, তাঁর জন্মের বহু আগে থেকেই গান শোনা ও তার চর্চা বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল, সে বিষয়ে তাঁর সবিস্তার আলোচনা এবং গানবিষয়ক গান লেখার উদাহরণ। আমাদের অজানা নয়, গান বিষয়ে কওয়ালির প্রতিষ্ঠাতা আমির খসরুর একাধিক বাণী আছে, যেমন: ‘গান হলো আত্মার খোরাক’, ‘দরবেশের কাছে গান হলো ঐশ্বরিক জ্যোতির সমতুল’ ইত্যাদি, আর দর্দ লিখেছেন: ‘অগর ঘিনা নফস কো বড়্কায়ে তো হারাম, অগর দিল কো ইলাহ কি তরফ নরম করে তো হালাল’ অর্থাৎ গান যদি মনকে প্রবৃত্তিতাড়িত হতে উসকে দেয় তাহলে হারাম, আর স্রষ্টামুখী করলে হালাল’। এ বিষয়ে দর্দের যে শের রয়েছে, সেটি আরও সুন্দর :
সামা’ আহলে দিল কো হ্যা সোদমন্দ দর্দ
কে ইস সে নরম হোতা হ্যা পাত্থর কা দিল ভি
অর্থাৎ :
হৃদয়বান মানুষের জন্য গান উপকারী, হে দর্দ
কারণ পাথরের মতো হৃদয়ও তাতে গলে যায়।
উল্লেখ্য যে, গান বিষয়ে আলোচনা করবার সময় এ অঞ্চলের গবেষক ও সুফি-বাউল-ফকিরেরা ইমাম গাজ্জালি, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ও আমির খসরুর বইয়ের তথ্যের উল্লেখ করেন, কিন্তু প্রকাশ ও প্রচারের অভাবে কোথাও সৈয়দ খাজা মীর দর্দের কথা পাওয়া যায় না। জাভেদ হুসেন দর্দের কয়েকটি গজল অনুবাদ করতে গিয়ে তার ভূমিকায় লিখেছেন: ‘দর্দ ছিলেন একজন বড় সংগীতজ্ঞ। সুফি সাধনায় সংগীতের ভূমিকা নিয়ে হুরমতে ঘিনা নামে পুস্তিকা লিখেছেন। উর্দু গজলের গীতিময়তা আজ দেখা যায় তাতে দর্দের ভূমিকা ব্যাপক ও গভীর।’ এই পুস্তিকাটি দুর্লভ, ভবিষ্যতে এটি অনূদিত হলে শায়ের ও গজলকার মীর দর্দের পাশাপাশি সংগীতচিন্তক হিসেবে তাঁর পরিচয়টাও আমরা জানতে পারব।
অন্য আলো–য় লিখতে পারেন আপনিও। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধসহ আপনার সৃজনশীল, মননশীল যেকোনো ধরনের লেখা পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন প্রকাশিত লেখার ব্যাপারে মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া।ই–মেইল: [email protected]