পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কেরানীগঞ্জ থেকে এজাহারভুক্ত আসামি মনির হোসেন ও আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০। এর আগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে।
সিসিটিভির ছবি দেখে পুলিশ ও স্থানীয়রা আরও চারজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। তারা হলেন– মিটফোর্ড হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী মো.
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল গতকাল এ ঘটনায় নাম আসা পাঁচজনকে নিজেদের সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে।
গতকাল শুক্রবার হত্যার সময়ের আরেকটি ভিডিও পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, বড় পাথরখণ্ড ও ইট দিয়ে সোহাগকে আঘাত করা হচ্ছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সমকালকে বলেন, মহিন ও রবিনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মহিনের দাবি, সোহানা মেটাল নামের দোকানটি তিনিই সোহাগকে চালাতে দেন। তবে কথা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এর জের ধরে ঘটনার দুই-তিন দিন আগে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন মহিন। বুধবার সোহাগ তালা ভেঙে দোকান খোলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাৎক্ষণিক মহিন ও তাঁর সহযোগীরা হত্যাকাণ্ড ঘটান। তবে হত্যার পর ঘটনা অন্যদিকে নেওয়ার একটা চেষ্টা চালান তারা। তারা রাস্তায় লাশ ফেলে রেখে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এর মাধ্যমে ঘটনাকে তারা গণপিটুনিতে চাঁদাবাজ নিহত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চালান।
উপকমিশনার বলেন, নিহত সোহাগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কোনো প্রমাণ এখনও পুলিশ পায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিযুক্ত মহিনের বিরুদ্ধে পুরোনো রাজনৈতিক মামলা আছে। তবে হত্যা বা সরাসরি বড় ধরনের অপরাধে জড়ানোর কোনো তথ্য এখনও মেলেনি। তিনি ছাত্রজীবনে থানা ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। পরে যুবদল করলেও কোনো পদ ছিল না। তাঁর মা মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্মী। গ্রেপ্তার রবিনের মা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের কর্মী।
নতুন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নিথর পড়ে আছেন সোহাগ। আকাশি রঙের শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরা এক যুবক তাঁকে বড় পাথরখণ্ড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করছেন। এর পর নীল-সাদা গেঞ্জি ও ধূসর রঙের প্যান্ট পরা আরেক যুবক পাথরটি তুলে নিয়ে আবারও আঘাত করতে থাকেন। কালো গেঞ্জি ও নীল জিন্স প্যান্ট পরা আরেকজন ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিচ্ছেন। ছবিতে মহিনকে সেখানে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যায়। আশপাশ থেকে লোকজন এ দৃশ্য দেখলেও কেউ এগিয়ে যাননি।
রজনী বোস লেন মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে সোহাগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সোহানা মেটাল। ওখানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে পুরোনো ভবনের সারি। নিচতলায় ছোট ছোট দোকান। প্রায় সবই নতুন-পুরোনো তামা, কাঁসা, পিতল, অ্যালুমিনিয়ামের। শুক্রবার হওয়ায় গতকাল দোকানগুলো বন্ধ ছিল। রজনী বোস লেন, ইমামগঞ্জসহ মিটফোর্ড এলাকায় অন্তত তিনশ এমন দোকান আছে বলে স্থানীয়রা জানান।
অভিযোগ রয়েছে, এসব দোকানের অনেকটাতে চোরাই পণ্য বেচাকেনা হয়। প্রতি মাসে এই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হয়। সেই সঙ্গে বড় ধরনের কেনাবেচা হলে সেটির জন্য আলাদা চাঁদা দিতে হয়।
স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার কাজটি করতেন সোহাগ। তবে এর বড় অংশই আগে যেত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। বিনিময়ে তারা ব্যবসায়ীদের পুলিশি হয়রানিসহ অন্যান্য ঝামেলা থেকে আগলে রাখতেন। ৫ আগস্টের পর এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। চাঁদা হিসেবে তোলা ৬ লাখ টাকা মহিনের মাধ্যমে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারকে দেওয়া শুরু হয়। সম্প্রতি সোহাগকে সরিয়ে মহিনকে চাঁদা তোলার দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। সোহাগ তাতে রাজি না হওয়ায় বিরোধের সূত্রপাত।
তবে ইসহাক সরকার সমকালকে বলেন, ‘এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। তবে সোহাগ চাঁদা তুলতেন এবং অতীতে আওয়ামী লীগ নেতারা সেই টাকা পেতেন বলে শুনেছি। আমার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র নেই। তা ছাড়া মহিন আমার কর্মী নন। বরং এর আগে আমার ওপর হামলার ঘটনায় মহিন জড়িত ছিলেন। পরে অবশ্য আমার কাছে এসে ক্ষমা চান।’
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘তবে সোহাগ দুই-তিন মাস আগে আমার কাছে এসে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। আমি তাতে রাজি হইনি। তাঁকে বলেছি, আমি রাজনীতি করি; সামনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে। এসব আজেবাজে বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসবেন না।’ ইসহাক সরকার বলেন, ‘কিছুদিন আগে সোহাগ ও মহিনের মধ্যে ব্যবসা নিয়ে বিরোধের কথা আমাকে জানান ব্যবসায়ী নেতারা। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, খারাপ কিছু ঘটতে পারে। এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আমি সোহাগ ও মহিনকে কোনো রকম ঝামেলা সৃষ্টি না করতে বলি। মিলেমিশে ব্যবসা করার পরামর্শ দিই।’
ইসহাকের অনুসারী যুবদলের সাবেক নেতা রজব আলী পিন্টুকেও এ হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসহাক সরকার বলেন, রাজনৈতিক শত্রুতা থেকে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি বাদী তাকে আসামি করেননি। পরে কোনোভাবে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে।
নিহত সোহাগের বিরুদ্ধে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠলেও স্বজন বলছেন, এমন কোনো ঘটনা ছিল না। নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম বলেন, ‘মামার (সোহাগ) ব্যবসার অর্ধেক এবং মোটা অঙ্কের টাকা চাইছিল মহিনসহ অন্যরা। মামা রাজি হননি। এ নিয়েই বিরোধ। শেষে তো মেরেই ফেলল। এখন ঘটনা অন্যদিকে নেওয়ার জন্য চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
নিহত সোহাগ যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংগঠনে তাঁর কোনো পদ ছিল কিনা– নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানে তিনি যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন সমকালকে বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মী অন্যায় করলে অস্বীকার করার একটা সংস্কৃতি ছিল। আমরা কিন্তু অস্বীকার করছি না। বরং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যুবদল অনেক বড় একটি সংগঠন। এখানে বহু নেতাকর্মী সক্রিয়। আমরা প্রত্যাশা করি, সবাই ভালোভাবে সংগঠন করবে। কিন্তু বাস্তবে দু-একজন সেই আদর্শিক জায়গাটি ধরে রাখতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিই। হত্যায় অভিযুক্ত মহিন যুবদলের কোনো পদে নেই, তবে পদপ্রত্যাশী। তিনি আগে ছাত্রদল করতেন। ওই সংগঠন থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।’
যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল–ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কার
যুবদল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সোহাগ হত্যা মামলার আসামি যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহজলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকির প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছাত্রদলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব অপু দাসের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ সংগঠনের সব পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। রাতে পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেপ্তার মহিনকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
স্বেচ্ছাসেবক দল এক বিবৃতিতে জানায়, হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালুকে প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টির পর গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান এবং জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও দু’জনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
অপরাধী যেই হোক, আইনের উর্ধ্বে না: মির্জা ফখরুল
সোহাগ হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অপরাধী যেই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এই নির্মম ঘটনা দেশের মানুষের বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়; এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও ববর্রতার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহবান জানান।
এ ঘটনায় দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওই হত্যার ঘটনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অভিযুক্ত সদস্যদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। এর পরও বিএনপির ওপর দায় চাপানো নোংরা ও অপরাজনীতি। এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা।
সোহাগ হত্যায় নিন্দার ঝড়
সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা ও লাশের ওপর জঘন্য বর্বরতার প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তারা বলেছে, দেশবাসীর প্রশ্ন, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের লালন-পালনকারী দলের নেতারা যে রাজনীতির কথা বলে বেড়ায়, সেই দলের হাতে জনগণের জানমাল কতটা নিরাপদ? এই দল ক্ষমতায় গেলে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র কখনোই নিরাপদ থাকতে পারে না। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেছেন, পাথর মেরে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যায় জাতি স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ। যুবদলের সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জাতিকে কী বার্তা দিতে চায়– তা বিএনপিকেই পরিষ্কার করতে হবে।
হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টার দিকে পুরানা পল্টনে ইসলামী যুব আন্দোলন এবং রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বিবৃতিতে বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।
নিরাপত্তার দাবি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের
রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। তারা মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। তারা শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আবাসিক হলের নিরাপত্তার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধেরও দাবি করেন তারা।
ঢাবিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ
সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী। গতকাল রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। এ সময় তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সোহাগ হত্যাসহ দেশব্যাপী বিএনপির চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যাসহ সারাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
এ ছাড়াও হত্যার প্রতিবাদে রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী।
এজাহারে তিনজনের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ
সোহাগ হত্যা মামলায় পরিবারের দেওয়া তিন আসামির নাম বাদ দিয়ে অন্য তিনজনকে আসামি করার অভিযোগ তুলেছেন স্বজন। নিহতের বড় বোনের মেয়ে বীথি আক্তার বলেন, মামলায় বংশাল এলাকার কাইউম মোল্লা, রাকেশ ও রহিম নামের তিনজনকে যথাক্রমে ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর আসামি করা হয়। কিন্তু পুলিশ বাদীর সম্মতি ছাড়াই তাদের নাম বাদ দিয়ে ওই স্থানে অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদারকে আসামি করেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার বলেন, ‘নিহতের স্বজন জড়িত কারও নামই জানতেন না। আমরা যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছি, তাদের আসামির তালিকায় রেখেছি। একটি গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বাগ্বিতণ্ডা হওয়ায় তারা তিনজনকে আসামি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রাথমিকভাবে হত্যায় তাদের জড়িত থাকার তথ্য মেলেনি। পরে তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও আসামি করা হবে।’
নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘আসামিরা আমার স্বামীর কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিও নিতে চেয়েছে। আমার স্বামী তা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের বান্দরগাছিয়ায় গতকাল সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে সোহাগের লাশ দাফন করা হয়েছে।
(এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ গ হত য ব ক ষ ভ ম ছ ল কর ছ ইসহ ক সরক র হত য ক ণ ড র গ র প ত র কর স হ গ হত য ছ ত রদল র য বদল র স হত য র প ন ত কর ম সদস য স ব এনপ র ল ইসল ম স গঠন র ক সদস য এ ঘটন য় ব যবস য় আম র ক র জন ত হত য য় র বল ন বল ছ ন ন হত র র কর ম র কর ছ কর ছ ন গতক ল র ঘটন অপর ধ হওয় য়
এছাড়াও পড়ুন:
ভাটারা থানায় বিষপান করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকার মৃত্যু
রাজধানীর ভাটারা থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিষপান করে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম ফিরোজা আশরাফী। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বৃহস্পতিবার রাতে বিষপানের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
এর আগে স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে ভাটারা থানার তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। বরখাস্তরা হলেন– এসআই জামাল হোসেন, কনস্টেবল শারমিন ও নাছিমা।
ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, ফিরোজা আশরাফী নিজেকে অ্যাজমার রোগী জানিয়ে তাঁর বাসা থেকে ওষুধ আনিয়ে খাওয়ার কথা বলেন। তবে কৌশলে ওষুধের বদলে বিষ আনিয়ে খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এ ঘটনায় তাঁকে সহায়তার দায়ে শোভা ও কণা নামে তৃতীয় লিঙ্গের দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ফিরোজা আশরাফী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং তাঁর স্বামী ইসমাইল কামাল রিফাত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। দু’জনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। এ কারণে তারা পল্লবী ও বসুন্ধরায় আলাদা বাসায় থাকতেন। কলহের জেরে বুধবার গভীর রাতে পল্লবীর বাসায় গিয়ে স্বামী ইসমাইলের গোপনাঙ্গ কেটে দেন ফিরোজা। পরে নিজেই অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে ইসমাইলের স্বজনরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। একই সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান ফিরোজা। পরে পল্লবী থানা পুলিশ ফিরোজাকে গ্রেপ্তারের জন্য ভাটারা থানা পুলিশকে অনুরোধ জানায়। এর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফিরোজাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। তবে তিনি ৯৯৯-এ কল করায় তাঁকে নারী ও শিশু ডেস্কে রাখা হয়। সেখানে নিরাপত্তায় দু’জন নারী পুলিশ সদস্যও ছিলেন। থানায় থাকা অবস্থায় ফিরোজা কৌশলে ফোন দিয়ে আইনি সহায়তার জন্য একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই ব্যক্তি তৃতীয় লিঙ্গের শোভাকে ভাটারা থানায় পাঠান। শোভা থানায় গেলে ফিরোজা তাঁর বসুন্ধরার বাসা থেকে অ্যাজমার ওষুধ এনে দিতে বলেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে শোভা ওষুধ এনে দেন। সেটি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফিরোজা। পরে জানা যায়, বাসা থেকে বিষ এনে খেয়েছেন তিনি।