বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে নুপুরের হাঙ্গামা, ভাইরাল ভিডিও
Published: 2nd, July 2025 GMT
‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’ সিনেমায় অভিনয় করে আলোনায় আসেন নুপুর হোসেন। ফের আলোচনায়— তবে এবার কোনো সিনেমার জন্য নয়, প্রেমঘটিত হাঙ্গামা নিয়ে। বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা করেন তিনি। আর সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় নুপুর তার কথিত প্রেমিক রাজের বাসার গেটে লাথি মারছেন, চিৎকার করছেন এবং ওই ভবনের এক নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। একপর্যায়ে শারীরিক হেনস্তা ও মামলার হুমকিও দিতে শোনা যায় তাকে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী দাবি করেছেন, তিনি নুপুরকে চেনেন না এবং রাজ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
ভিডিওতে নুপুর বলেন, “রাজ আমাকে এই বাসায় বহুবার এনেছে। শুধু তাই নয়, শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে যাওয়ার সময় তোলা আমাদের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও আমার ফোনে আছে।” তিনি ছবিগুলো গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি আরও দাবি করেন, “গতকাল থানার পক্ষ থেকে আমাদের বিয়ের বিষয়ে নির্দেশ এসেছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ করে রাজ এবং তার মা গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের পরিকল্পিতভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।”
এই ঘটনার জন্য নুপুর সরাসরি রাজের মা ও তার দুলাভাই সঙ্গীত সাহাকে দায়ী করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’ সিনেমার শুটিংয়ে অর্ধনগ্ন দৃশ্য নিয়ে বিতর্কে জড়ান নুপুর। পরবর্তীতে সিনেমার পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে থানায় জিডি করেন।
ঢাকা/রাহাত//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার বুকে স্বপ্নের গ্রাম
চারপাশে দালান, কংক্রিট, কাচ আর ধুলোর স্তূপ। ঢাকা শহরের এমন চেনা দৃশ্যের মাঝে হঠাৎ যদি কোথাও চোখে পড়ে ঘাসে মোড়া প্রান্তর, বাঁশ-কাঠের দোতলা ঘর, স্বচ্ছ লেকে মাছের লুকোচুরি, পাতায় পাতায় খেলা করা আলো! রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় বৃক্ষমেলায় দেখা মিলবে এমনই স্বপ্নঘেরা এক টুকরো গ্রাম। যেন শহুরে কোলাহল থেকে খানিকটা মুক্তির আশ্বাস; প্রকৃতির কোলে ফিরে যাওয়ার নীরব আমন্ত্রণ।
বৃক্ষমেলায় প্রবেশ করে ডান পাশে গিয়ে ঘাসের ওপর পা রাখতেই নরম পরশ লাগে। পাশেই পানির শব্দ, গাছের ফাঁকে দোল খাচ্ছে কাঠের দোলনা। কেউ বসে আছে, কেউ ছবি তুলছে। অনেকে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছেন শুধু প্রকৃতির দিকে।
এই সবুজ স্বপ্নের পেছনের কারিগর মো. রকিবুল আমিন। একজন প্রকৃতিপ্রেমী, যিনি শখ থেকেই গড়ে তুলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যান্ডস্কেপ প্রতিষ্ঠান ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’। তাঁর স্বপ্ন শহরের প্রতি প্রান্তে এক চিলতে প্রকৃতি ফিরিয়ে আনা। ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’ গড়ে তোলে অনুভূতির পরিসর। ঘরের কোণা, ছাদ, বারান্দা, দেয়াল কিংবা সিঁড়ি, যেখানে খানিকটা জায়গা মেলে, সেখানে গাছ আর প্রকৃতির ছোঁয়া পৌঁছে দিতে চায় তারা।
গার্ডেনিং বাংলাদেশের কর্ণধার রকিবুল আমিনের শিকড় কুষ্টিয়ায়। ছোটবেলা থেকেই গাছের সঙ্গে তাঁর সখ্য। বাড়ির উঠোনে গড়া ফুলের বাগান, নানা রকম গাছের পরিচর্যা, পুকুরপাড়ে কাটানো দিন– সব মিলিয়ে প্রকৃতিই হয়ে ওঠে তাঁর প্রথম পাঠশালা। তাঁর ভাষায়, ‘বড় হয়ে দেখি শহরে মানুষ চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ। সবুজ বলে কিছু নেই। এই অভাবটাই আমাকে নাড়া দেয়।’
ঢাকায় এসে বুঝলেন, এখানে গাছের চেয়ে ইটের দেয়াল বেশি। শিশুরা পাতার গন্ধ চেনে না; মাটিতে পা না দিয়েই বড় হয়। তখন তিনি ভেবেছিলেন, ‘মানুষের ঘরে যদি ফিরিয়ে দিতে পারি প্রকৃতির স্পর্শ, তাহলে তো শহরও একটু গ্রাম হয়ে উঠবে।’
ছাত্র অবস্থায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর শাহবাগে ১৪শ টাকার গোলাপ কিনে বিক্রি শুরু করেছিলেন রকিবুল। এক ঘণ্টা ভালো বিক্রির পরই নামল বৃষ্টি। এতে সব ফুল নষ্ট হয়ে যায়। লোকসান গুনলেন, কিন্তু পথ হারালেন না। ২০০৮ সালে বসুন্ধরা সিটিতে ভাড়া নিলেন ছোট দোকান; নাম দিলেন ‘একেশিয়া’। প্রথমে তেমন লাভ না হলেও একদিন ইনডোর প্লান্ট বিক্রি করে পেলেন চমক– ৭৫ হাজার টাকা! সেখান থেকে শুরু। পরে প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রাখলেন ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’।
আজ তাঁর প্রতিষ্ঠান বছরে আয় করে প্রায় কোটি টাকা। ইতোমধ্যে শতাধিক ছোট-বড় ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তারা। ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’ গড়ে তোলে একেকটা জীবন্ত পরিমণ্ডল। টেরারিয়াম– কাচের পাত্রে তৈরি ক্ষুদ্র ইকোসিস্টেম। পেলুডারিয়াম– যেখানে জল আর স্থলের মিশেলে তৈরি হয় এক টুকরো বৃষ্টিবন। এসব তৈরি হয় পরম যত্নে; শিল্পের মতো। ঘরের ভেতরে এমন প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হন অনেকেই। ছোট পাত্রে যেন সেঁধিয়ে আছে গোটা জঙ্গল কিংবা ঝরনার পাশে বসে থাকা এক পাখির সকাল।
রকিবুল বলেন, ‘সবুজটা হারিয়ে যাচ্ছে। গাছের পাতা ছুঁয়ে দেখার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছে মানুষ। আমি চাই, প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন অন্তত একবার গাছের সঙ্গে কথা বলুক। তাদের ঘরে, ছাদে গাছ থাকুক। সবুজ দেখলে চোখের ক্লান্তি কেটে যায়; মন শান্ত হয়। আমি চাই মানুষ তাদের জীবনে সেই প্রশান্তিটুকু ফিরে পাক। এটাই আমার যুদ্ধ।’
রকিবুলের প্রতিষ্ঠান জিরো সয়েল ধারণা নিয়ে কাজ করছে। তিনি চান খোলা কোনো মাটিকে অনাবৃত রাখা যাবে না। ঘাস, লতা বা উদ্ভিদ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে সব ফাঁকা জায়গা।