ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটে পড়ল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের গাড়ি। গতকাল শুক্রবার আশুগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পার হতে তাঁর লেগেছে দুই ঘণ্টা।

সূত্র জানায়, সরকারি সফরে উপদেষ্টা হবিগঞ্জ যাচ্ছিলেন। এ সময় মহাসড়কে প্রায় ২৫ কিলোমিটার যানজট ছিল। সড়ক উন্নয়ন কাজের ধীরগতি, খানাখন্দ এবং অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের কারণে প্রতিদিনই সেখানে যানজট হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।

গণশিক্ষা উপদেষ্টা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পৌঁছান। বিশ্রাম শেষে সরকারি প্রটোকলসহ বেলা ১১টার দিকে হবিগঞ্জের উদ্দেশে ভৈরব ত্যাগ করেন। এ সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর পর্যন্ত সিলেট অভিমুখী সড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট ছিল। জানা গেছে, উপদেষ্টার গাড়ি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর ভৈরব প্রান্তে প্রবেশ করে। দুপুর দেড়টার দিকে গাড়িটি এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর আশুগঞ্জ প্রান্তে পৌঁছে।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আশুগঞ্জ থেকে সরাইলের কুট্টাপাড়া পর্যন্ত যানজট ছিল। যানজট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল হাইওয়ে পুলিশ। রাত ১০টার মধ্যে যানজট একেবারে নিরসন করা না গেলে গভীর রাতে তা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

যানজটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপদেষ্টার গাড়িতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, যানজটের বাস্তবতা ও মহাসড়কের সার্বিক অবস্থা উপদেষ্টা অবগত হয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে বলেও তিনি জানান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ স্থানে এক লেন। এদিকে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। মহাসড়কে অবাধে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক। এসব কারণে যানজট নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

মাসুদ রানা নামে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকা থেকে আসা এক যাত্রী জানান, বেশ কয়েকজন বন্ধুসহ তারা শ্রীমঙ্গল বেড়াতে যাচ্ছেন। রাত সাড়ে ১২টায় তারা একটি বাসে ওঠেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আশুগঞ্জ পৌঁছেন। বেলা সাড়ে ১১টায় বাস থেকে নেমে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে কুমিল্লা বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশে মাইক্রোবাস ভাড়া করে সকালে রওনা হন দুলাল মিয়া। দুপুর ২টা পার হলেও তারা আশুগঞ্জ অতিক্রম করতে পারেননি। তাঁর স্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জীবনে আর বেড়ানোর নাম নেব না।’  

এ ব্যাপারে সরাইল খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কিছু চালকের অসচেতনতা ও মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের কারণে প্রায়ই যানজট হচ্ছে। হাইওয়ে এবং জেলা পুলিশ যানজট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৫টায় তিনি আরও জানান, আশুগঞ্জ থেকে সরাইল কুট্টাপাড়া পর্যন্ত এখনও যানজট রয়েছে। যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাত ১০টা নাগাদ পুরোপুরি যানজট নিরসন করা সম্ভব না হলে নাইটকোচ ও পণ্যবাহী ট্রাকের চাপে তা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের পিএম (প্যাকেজ-১) শামীম আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কের কিছু জায়গা নতুন করে নির্মাণ হয়নি। এসব স্থানে সড়কের বেইজ (ভিত্তি) নেই। তাই মেরামতকাজ টেকসই হচ্ছে না। তবে আজ (গতকাল) সরাইল অংশের বেশ কয়েক স্থানে ইট ফেলে মেরামত করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) আশুগঞ্জ অংশে মেরামত কাজ হবে। বৃষ্টি থেমে গেলে যানজট কমবে।’

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের কিছু সমস্যা নিয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। সমস্যা মিটে গেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট ব র হ মণব ড় য় য নজট ন রসন উপদ ষ ট হ ইওয় সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

নৌভ্রমণে গিয়ে নৌকাডুবে দুই মেয়ের মৃত্যু, সাঁতরে বেঁচে ফিরলেন বাবা-মা  

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রে নদে শুক্রবার বিকালে নৌকাডুবির ঘটনায় দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। কলেজ পড়ুয়া বড়বোন নিলার (১৭) লাশ শুক্রবারই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার করে। ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া নীহাকে (৯) শুক্রবার খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। তারা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের জালুয়াপাড়া গ্রামের ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও নীপা আক্তার দম্পতির সন্তান। 

দু’টি সন্তান নিয়ে ছিল তাদের সুখের সংসার। এখন পরিবারটিতে চলছে কেবলই আর্তনাদ। সন্তানদের হারিয়ে এখন কেবলই বিলাপ করছেন। মাঝে মাঝেই মা নীপা আক্তার মূর্ছা যাচ্ছেন। 

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, মা-বাবা তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় নৌভ্রমণে বের হলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আব্দুর রহমান সাঁতরে রক্ষা পেলেও মা নীপা ও বড় মেয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নীলাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরীক্ষা করে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর নীপাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে ছোট মেয়ে নীহাকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। শনিবার বেলা পৌনে ১২টার সময় মরদেহ ভেসে উঠলে ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে। 

দুই সন্তান হারিয়ে আব্দুর রহমান জানান, দু’টি মেয়ে সারাক্ষণ আনন্দে সংসার ভরিয়ে রাখতো। আশা ছিল- পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। আমরা সমাজে মর্যাদা নিয়ে বাঁচবো। তা আর হলো না। আমাদের একেবারে শূন্য করে চলে গেল। এই শূন্যতা কীভাবে ভুলবো? 

চৌদ্দশত ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাহার আলী জানান, আব্দুর রহমান পাশের পুলেরঘাট বাজারে ভাঙারি ব্যবসা করেন। নিলা ও নীহার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোক বিরাজ করছে। 
  
এর আগে ১ জুলাই সকালে নৌকায় মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে পাকুন্দিয়ার চরফরাদি ইউনিয়নের চরআলগি গ্রামের তিন শিক্ষার্থী জুবায়ের (৭), শাপলা (১৪) ও শাপলার ভাতিজা আবির (৬) ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবে মারা যায়। শুক্রবারও একই নদীতে ঘটলো আরেকটি দুর্ঘটনা।

এ ঘটনার পর ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেন শুক্রবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ চরটেকি এলাকার বেড়িবাঁধে ভ্রমণ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছেন। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ভ্রমণের অনুমতি দেবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ