‘যত বড় শক্তিই বাধা হোক, মোকাবিলা করা হবে’
Published: 24th, May 2025 GMT
দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পথে যত বড় শক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াক, তা মোকাবিলা করা হবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডির একটি হোটেলে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির সারা দেশের সংগঠকদের নিয়ে পরিচিতি সভা হয়।
সভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি ও অস্তিত্ব হচ্ছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান। জুলাইকে যত বেশি ধারণ করতে পারব, তত বেশি এগিয়ে যেতে পারব। দুঃখজনক হলো অভ্যুত্থানের অংশীদারেরা একে ক্ষমতার পালাবদল বলে মনে করছে, যার বিরোধিতা করেছে এনসিপি। আমরা মৌলিক সংস্কার চেয়েছি। কিন্তু তারা জুলাইকে রেজিম চেঞ্জ (সরকারের পরিবর্তন) হিসেবে দেখছে। পুরোনো সংবিধানকে আঁকড়ে ধরে ক্ষমতায় যেতে চাইছে। এখানেই আমাদের আপত্তি। এখন আমাদের দরকার সংগঠিত শক্তি।’
চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। এর ফাঁদে পা না দিয়ে আমরা বরং ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি বাস্তবায়নে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পথে যত বড় শক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াক, তা মোকাবিলা করা হবে।
যুবশক্তিকে রাষ্ট্রের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বর্তমান সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সভায় জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম, সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম, মুখ্য সংগঠক ফরহাদ সোহেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নাহিদের ফেসবুক পোস্ট
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে নানা আলোচনা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল রাত সোয়া আটটার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে অধ্যাপক ইউনূসকে।
নাহিদ ইসলাম তাঁর পোস্টে লিখেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর আবারও দিল্লি থেকে ছক আঁকা হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার, দেশকে বিভাজিত করার। গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে। ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশপন্থী ও ধর্মপ্রাণ ছাত্র-জনতাকে সার্বভৌমত্ব, সংস্কার ও জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
জনগণকে দেওয়া সংস্কার, বিচার ও ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি অধ্যাপক ইউনূসকে রক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁকে দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দিতে হবে। ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারের জুলাই সনদ রচিত হবে।
ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচনের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হবে এবং বিচারের রোডম্যাপ (পথনকশা) আসতে হবে। নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন একই সঙ্গে দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র
এছাড়াও পড়ুন:
ধান চাষে আশা জাগাচ্ছে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কৃষক কমলেশ শর্মা পাঁচ বছর ধরে তিন একর জমিতে ধান চাষ করছেন। পানিনির্ভর এ ফসলে সেচ দিতে প্রতিবছর তিনি বিদ্যুৎ বিল গুনতেন ১৩ হাজার টাকার মতো। প্রচলিত সেচ পদ্ধতির চেয়ে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয়ী অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং (এডব্লিউডি) পদ্ধতি ব্যবহারে সেই খরচ এখন নেমেছে ১০ হাজার টাকায়। আগে যেখানে এক মৌসুমে ৭০-৮০ বার সেচ দিতে হতো, এখন দিতে হচ্ছে ৬০ বার। এ ছাড়া প্রতি বিঘায় ধানও মিলছে ৫ থেকে ৭ মণ বেশি। পরিমিত সেচ দেওয়ায় জমিতে হয় না জলাবদ্ধতাও। এতে একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ হয়েছে, কমেছে রোগবালাইও।
শুধু কমলেশ শর্মা নন; কালীগঞ্জ উপজেলার ৬০০ কৃষক এডব্লিউডি পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন। শেয়ার দ্য প্ল্যানেটের সহযোগিতায় স্থানীয় এনজিও সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন কৃষককে এডব্লিউডি কৌশলের আওতায় নিয়ে এসেছে।
সম্প্রতি কালীগঞ্জের মহাদেবপুর, কুরুলিয়া, সুন্দরপুর, মহেশ্বরচন্দ, ইছাপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত। চারদিক পাকা ধানের ঘ্রাণে ম-ম। কৃষক সোনালি ফসল মাড়াই করছেন। নিজের ক্ষেতের পাশে বসে কৃষক আমিনুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, এ পদ্ধতিতে ১২ ইঞ্চি একটি প্লাস্টিক পাইপের ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত চারদিকে ছিদ্র করা হয়। এর পর ছিদ্রযুক্ত অংশ ধানের জমির নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হয়। ভেতরের মাটি বের করার পর ছিদ্র দিয়ে পানি ঢোকে, যা দেখে জমিতে পানির পরিমাণ বোঝা যায়। ওই পানি দেখে প্রয়োজনমতো জমিতে সেচ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে জমিতে ধানের চারা বেশি গজাচ্ছে। রোগবালাইয়ের পরিমাণও কম। সেচ মালিকদেরও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ কমে এসেছে।
উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, আগে প্রতিদিন জমিতে সেচ দিতে হতো। এখন তিন-চার দিন অন্তর দিতে হয়। আগে না বুঝে পুরো জমিতে সেচ দেওয়া লাগত। অনেক বেশি বিদ্যুৎ বিল আসত। এখন তা লাগছে না।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে এক কেজি ধান উৎপাদনে দেড় হাজার লিটারের মতো পানি লাগে, যার বেশির ভাগই পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে উত্তোলন করা হয়। এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতিতে পানি সাশ্রয় হয় ২০০ লিটারের বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পানি সাশ্রয় হয়। এতে উৎপাদন খরচ কমে ২০ শতাংশের মতো। এ ছাড়া ৩-১০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন বাড়বে।
ব্রির সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের কিছু অংশে ইতোমধ্যে এই পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন এডব্লিউডি পদ্ধতির প্রসারে সরকারি বিনিয়োগ দরকার। তিনি আরও বলেন, এডব্লিউডি পদ্ধতি বাস্তবায়নে প্রতিটি পাইপের খরচ ১০০-১৩০ টাকা। এক একর জমিতে তিনটি পাইপ যথেষ্ট।
স্থানীয় এনজিও সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন কালীগঞ্জে এডব্লিউডি পদ্ধতির প্রসার ও প্রচারণায় কাজ করছে। ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিবু পদ বিশ্বাস বলেন, আগে কৃষককে বিনামূল্যে পাইপ সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এখন অনেকে নিজেরাই পাইপ কিনে নিচ্ছেন।
ব্রির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে ধানক্ষেত থেকে প্রতিবছর ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নির্গমন হয় প্রায় ১.৩৯ থেকে ১.৫৬ মিলিয়ন টন। সেচে এডব্লিউডি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি ২৫-৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব। এ ছাড়া ১০ লাখ হেক্টর জমিকে এডব্লিউডির আওতায় আনা গেলে বেঁচে যাওয়া পানি দিয়ে আরও প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আনা যাবে।
তবে বৃহত্তর পরিসরে এডব্লিউডি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। ধান বিজ্ঞানী এবং ব্রির সাবেক মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, সবচেয়ে বড় বাধা, সেচ মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা।
পানি ব্যবহার করলে নলকূপ মালিককে পুরো মৌসুমের অর্থই পরিশোধ করতে হয় কৃষককে। সরকারকে এমন একটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে কৃষকরা ব্যবহৃত পানির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে অর্থ দেবেন। এ ছাড়া কৃষকরা প্রায়ই নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হন। এই ক্ষেত্রে সরকারি নীতি সংস্কার দরকার।
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) রিডুসিং এগ্রিকালচারাল মিথেন প্রোগ্রামের অধীনে দেশে এডব্লিউডি কৌশল প্রচারের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশে ইফাদের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ভ্যালানটাইন আচানচো বলেন, মিথেন গ্যাস নির্গমনের অন্যতম প্রধান উৎস দেশের সেচনির্ভর ধান চাষ। ধানক্ষেতে তৈরি হওয়া অক্সিজেনহীন পরিবেশ মিথেন উৎপাদনকারী অণুজীবের জন্য আদর্শ অবস্থা তৈরি করে। এই অবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি করে। তিনি আরও বলেন, রিডিউসিং এগ্রিকালচারাল মিথেন প্রোগ্রাম কর্মসূচির মাধ্যমে ইফাদ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে সচেতনতা বৃদ্ধি, সক্ষমতা উন্নয়ন এবং সরকারের ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের তথ্যপ্রমাণভিত্তিক সহায়তা দেয়। এতে জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি চর্চার গ্রহণযোগ্যতা ত্বরান্বিত করা যায়।