জাতীয় বাজেটে গ্রামীণ নারীর গুরুত্ব কতটুকু
Published: 21st, June 2025 GMT
জাতীয় বাজেট একটি রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের রাজনৈতিক দলিল। এটি কেবল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয়, বরং নাগরিক অধিকারের দিকনির্দেশক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাজেট হওয়া উচিত ন্যায়ভিত্তিক, প্রয়োজননির্ভর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। কিন্তু বাংলাদেশের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৩৫.১ শতাংশ গ্রামীণ নারীর জন্য বরাদ্দ এখনও প্রান্তেই রয়ে গেছে– সংখ্যায়, কাঠামোয় এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বাজেটের এমন পরিস্থিতি নারীদের পদ্ধতিগতভাবে পিছিয়ে রাখার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
গত তিন অর্থবছরে বাজেটে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানোর বিপরীতে নারীর বরাদ্দ পর্যালোচনা করলে বৈষম্যের রেখাচিত্রই উঠে আসে।
* ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় মাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ ছিল ৩৯,৮৮৬ টাকা। সেখানে গ্রামীণ নারীর জন্য মাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫,৫৯৮ টাকা।
* ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল ৪৬,১২৫ টাকা। এ বছর গ্রামীণ নারীর জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০,৮১৪ বাড়ানো হয়। আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫,২১৬ টাকা বেড়েছে।
* ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় মাথাপিছু গড় বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪৭,০৩২ টাকা, অথচ গ্রামীণ নারীর জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ আগের বছরের চেয়ে নাটকীয়ভাবে অনেক বেশি কমে যায়, মাত্র ১,৪৮৬ টাকা– যা জাতীয় মাথাপিছু বাজেটের তুলনায় প্রায় ৯৬.
এই চিত্রে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় বাজেটের সামগ্রিক আকার বাড়লেও গ্রামীণ নারীর জন্য বরাদ্দ তার অনুপাতে একেবারেই বাড়েনি বরং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এক ধাক্কায় তা অনেক নিচে নেমেছে।
গ্রামীণ নারীর জন্য সাধারণত জাতীয় বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সামাজিক সুরক্ষা বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ৮৭৪.৯৪ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় এ বরাদ্দে সামান্য বাড়লেও বাস্তব চাহিদা ও কাঠামোগত বৈষম্য নিরসনের ক্ষেত্রে এটি একেবারেই অপর্যাপ্ত। এই বরাদ্দের মধ্যে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১৮.৫৫ কোটি টাকা, যা বিভিন্ন প্রকল্পভিত্তিক ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত। যেমন– নারী ও শিশু উন্নয়নবিষয়ক গবেষণা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন, আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ, সামাজিক সুরক্ষা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম শহরকেন্দ্রিক ও মধ্যবিত্ত নারীর উপযোগী, গ্রামীণ নারীর কৃষি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও জীবিকা সমস্যাগুলো প্রতিফলিত নয়। বাস্তবে এ বরাদ্দগুলোতেও তিনটি বড় যে বৈষম্য দেখা যায় তা হলো– অপ্রতুল বরাদ্দ, বাস্তবায়নে বৈষম্য এবং অবহেলিত ক্ষেত্র। ফলে গ্রামীণ নারী শ্রম দিলেও বাজেটে তাদের শ্রমের কোনো হিসাব নেই। উন্নয়ন প্রকল্পে তারা উপকারভোগী হিসেবে বিবেচিত হলেও, অধিকারভোগী হিসেবে নয়।
সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের রওশন আরা বেগম, যিনি গরু পালেন ও শাকসবজি চাষ করেন। হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন ‘বাজেটের কথা শুনি, কিন্তু বুঝি না আমাদের জন্য কিছু আছে কিনা। আমাদের গরু-মুরগির জন্য কিছু সহায়তা পেলে বড় ভালো হতো। ভাতা কারা পায়, জানি না। আমরা অনেকেই পাই না। কাজ করি, কষ্ট করি, কিন্তু আমাদের কপালে কিছু নেই।’ রওশন আরার মতো নারীর জীবনে বাজেটের অস্তিত্ব নেই। অথচ তারা প্রতিদিন রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সামনে টেনে নিচ্ছেন।
বাজেটের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ঠিক করে দেয়– কে গুরুত্বপূর্ণ, কার জন্য কী বরাদ্দ থাকবে। গ্রামীণ নারীকে শুধুই ‘উপকারভোগী’ হিসেবে না দেখে ‘অধিকারভোগী নাগরিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের মাথাপিছু বরাদ্দ কমিয়ে নয়– দ্বিগুণ করে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কৃষিতে স্বীকৃতি দিতে হবে। বাজেটে আলাদা লাইন আইটেম রাখতে হবে ‘গ্রামীণ নারী’ নামে। বাজেট হতে হবে এমন এক রূপরেখা, যা প্রান্তিক নারীর শ্রমকে কেন্দ্রের মর্যাদা দেয়, যাতে রওশন আরাদের মতো নারীরা একদিন বলতে পারেন– ‘এই বাজেট আমাদের কথা বলে’।
সানজিদা খান রিপা: প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এএলআরডি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষমত গ র ম ণ ন র র জন য ব জ ট বর দ দ বর দ দ ছ ল র জন য ম আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইবির আইন বিভাগের শিক্ষককে চাকরিচ্যুত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করেছে প্রশাসন।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
রাবি উপ-রেজিস্ট্রারের দাঁড়িতে টান ও উপ-উপাচার্যকে সিঁড়িতে ফেলে দেওয়া হয়
রাবি শিক্ষকদের ওপর হামলায় চবি শিক্ষক সমাজের নিন্দা
প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিভাগে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার এ অনুপস্থিতির বিষয়ে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষাছুটি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৯৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে অফিস স্মারক নং-১২৬/শিক্ষা/হবি-২০২৪/৬৬, তারিখ-০৩/১১/২০২৪ সম্বলিত পত্রে আগামী ১ মাসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু তিনি যোগদান না করে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম কর্মস্থলে যোগদান না করায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৭তম (সাধারণ) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার বিরুদ্ধে কি ধরণের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অপরাধের মাত্রা নির্ধারণপূর্বক শান্তির ধরণ উল্লেখ করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওই তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৭০তম (সাধারণ) সভার ২৪ নম্বর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৩ (জ) ধারা মোতাবেক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৪ (১)(গ) ধারা মোতাবেক গত ২১/০৮/২০২৪ তারিখ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে তাকে অপসারণ করা হলো।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী