জনগণ সরকারের কাছে আইনের শাসন প্রত্যাশা করে: রিজভী
Published: 25th, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষ আইনের শাসন প্রত্যাশা করে। আপনারা দৃষ্টান্ত রেখে যাবেন যাতে করে নির্বাচিত সরকার আসলে আপনাদের ভালো দৃষ্টান্তগুলো চিহ্নিত করে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করে। কেনো এই সময়ে এসে এত খুন ও জখম হবে, কেন এত ডাকাতি, চুরি হত্যাকাণ্ড ঘটবে- এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে।’
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনের পটভূমি রচনার প্রধান নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমরা দেখেছি যখন ছাত্র জনতা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তখন তিনি দলের সকল নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় থাকার জন্য। কখনও তিনি লন্ডন থেকে বক্তব্যের মাধ্যমে কখনও আমাদের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাশে থাকা নির্দেশ দিয়েছেন। এই আন্দোলনে আমাদের ছাত্রদলের অনেক নেতা কর্মী বিএনপির সমর্থক অনেকেই আত্মহুতি দিয়েছেন গণতন্ত্রকে ফেরানোর জন্য।’
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনাগুলো দেখছি, সেখানে আমরা শুনতে ও জানতে পাচ্ছি- যারা তদন্তে আছেন তারা নানা কারণেই গোপনীয়তা রক্ষা করছেন। যদিও তারা বলেছিলেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, হয়তো বিশেষ কারণে নামগুলো এখনও বলছেন না। কিন্তু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় যে হয়েছে, এটা বলছেন তারা। তার মানে পরিকল্পিতভাবে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। হয়তো কারও স্বার্থে, প্রভুদের স্বার্থে অথবা অন্য কোনো স্বার্থে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল তৎকালীন যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে একটি সংবাদ পড়ে একদিকে যেমন বেদনার্ত হয়েছি অন্যদিকে আশাবাদী হয়ে উঠেছি, অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে গুম করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে অনেকেই অস্বীকার করেছেন এবং যারা অস্বীকার করেছেন তাদের নামসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এ ধরনের নথিও পাওয়া গেছে। আর যারা রাজি হয়েছেন তারা তো গুম ও খুন করেছেন। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন তার নৈকট্য লাভের জন্য তারা কাজ করেছেন। এর মধ্যেও কিছু কিছু পুলিশ অফিসার অস্বীকার করেছেন, তাদেরকে ডিপার্টমেন্টের পুরস্কৃত করা উচিত। কারণ তারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও গুম করতে অস্বীকার করেছেন। আমরা যতটুকু জেনেছি তাতেই তো আমাদের রক্ত হিম হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। আর যারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও অন্যায় কাজ করেনি তাদেরকে পুরস্কৃত করা উচিত। এটা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করব।’
রিজভী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে এই পর্যন্ত নানাভাবে নানা কারণে ১৭৭ জন মানুষের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যারাই এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক সরকারের উচিত আইনের মাধ্যমে তাদেরকে বিচার করা।’
আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সভাপতিত্বে জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফউদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মোস্তফা-ই জামান সেলিমসহ অনেকেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র হত য ক ণ ড হত য ক ণ ড র সরক র র র জন য ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ এবং যুক্তরাষ্ট্র
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ইতিহাসে ইরান একটি অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। প্রাচীন সভ্যতা, ঐতিহ্য, এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ইরান যুগে যুগে শত্রু-মিত্রের আক্রমণ সহ্য করেছে এবং প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকার এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। আধুনিক যুগে ইরানের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে গেলে, এটি স্পষ্ট যে দেশটি কেবল রাষ্ট্র নয়, বরং একটি আদর্শ—পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। ইরানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান, বিশেষ করে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, এবং লেবাননের মতো মুসলিম দেশগুলোর প্রতি তাদের অবিচল সমর্থন, ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বের এক অপরিহার্য অংশে পরিণত করেছে।
ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের নির্মম আচরণ নতুন কিছু নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের অধিকার এবং মুসলিম বিশ্বে শান্তির জন্য এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল বারবার আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে দখলদারিত্ব, আক্রমণ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। সম্প্রতি, ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলের চালানো হত্যাযজ্ঞ বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়েছে। মসজিদ, হাসপাতাল, এবং সাধারণ বসতিতে বোমা বর্ষণ ফিলিস্তিনিদের জীবনে এক ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার উপর ইসরায়েলের হামলা এই নৃশংসতার একটি সর্বশেষ উদাহরণ। ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, ইসরায়েল তাদের আক্রমণাত্মক নীতিতে ইরানকে একটি কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করেছে।
ইরানের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্পষ্টভাবে দুটি মেরু সৃষ্টি করেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট এবং অন্যদিকে ইরান ও তার মিত্ররা। পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরে ইরানের প্রভাব সীমিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবরোধ, রাজনৈতিক চাপ এবং সামরিক হুমকি তাদের প্রধান অস্ত্র। কিন্তু এর মধ্যেও ইরান তার নিজস্ব প্রযুক্তিগত এবং সামরিক অগ্রগতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের সামরিক সক্ষমতার অন্যতম উদাহরণ হল তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এবং আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই অগ্রগতি ইসরায়েল ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের উদ্বেগের প্রধান কারণ। ইরানের সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নের ফলে তারা এমন এক শক্তিতে পরিণত হয়েছে যা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক মনোভাবের বিপরীতে ইরানের এই প্রতিরোধমূলক সামরিক নীতি কেবল তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৫ সালের ১৩ জুন ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই আক্রমণে ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু হলেও, ইরান তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইরান পাল্টা হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। পাল্টা আক্রমণের ফলে ইসরায়েলে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানের এই পদক্ষেপ শুধু তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিচায়ক নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। ইরানের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কার্যক্রম সীমিত করে তুলেছে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ২৩ জুন, যখন ইরানের মিত্র কাতার থেকে ইরান পরিচালিত হামলায় ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এই আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধিত হয়, যা তাদের আঞ্চলিক প্রভাবকে আরও দুর্বল করে। ইরানের এই সাহসী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, তারা তাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করবে না।
এই ঘটনার পর, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় যা কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতির এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে সাময়িক স্থিতিশীলতা আনলেও এটি ইরান এবং তাদের মিত্রদের প্রতিরোধের কাছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের এক প্রকার পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ইরানের দৃঢ় প্রতিরোধ এবং পাল্টা আক্রমণ স্পষ্ট করেছে যে, তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসন কেবল ব্যর্থই হবে না বরং আক্রমণকারী পক্ষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এই সংঘাতের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। যদিও এই যুদ্ধবিরতি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থায়ী শান্তি নিয়ে এসেছে, তবে এটি কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।
এই হামলা কোনো উস্কানি ছাড়াই সংঘটিত হয়েছে, যা ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ইসরায়েলের এই আচরণ শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি গুরুতর সংকেত। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সৌদি আরব, কাতার, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের কৌশলগত সম্পর্ক তাদের নিরপেক্ষতা এবং অসহায়ত্বকে স্পষ্ট করেছে।
এই ঘটনার পটভূমিতে ইরানের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ইরান তাদের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারা শুধু প্রতিরোধেই সক্ষম নয়, বরং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সামর্থ্য রাখে। ইরানের এই দৃঢ় অবস্থান আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে। তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়িয়েছে এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইসরায়েলের জন্য একটি প্রধান হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। পশ্চিমা বিশ্বও ইরানের এই পরমাণু উন্নয়নকে তাদের আধিপত্যের জন্য হুমকি মনে করে। দ্বিতীয়ত, ইরানের আঞ্চলিক মিত্রতা—বিশেষত হিজবুল্লাহ এবং সিরিয়ার সরকার–ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তৃতীয়ত, ইরানের অর্থনৈতিক ও সামরিক অগ্রগতি তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা প্রভাব প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এই হামলার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুধুমাত্র ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জ করবে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর নিরবতা তাদের পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি তাদের আনুগত্যকে স্পষ্ট করে তুলেছে। তবে এই নিরবতা দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি তাদের আঞ্চলিক প্রভাব এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলেছে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা তাদের জন্য একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমত, ইরান একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, ইরান আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে। হরমুজ প্রণালীর মতো কৌশলগত স্থানে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে। তৃতীয়ত, ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোকে বিপদে ফেলবে।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা অর্থনৈতিক অবরোধ এবং সামরিক হুমকির মুখে রয়েছে। কিন্তু দেশটি এই প্রতিকূলতাকে তাদের উন্নয়নের পথে বাধা হতে দেয়নি। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং সামরিক ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতি একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের এই অগ্রগতি শুধু দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়তা করেনি, বরং এটি তাদের জনগণের জন্য একটি নতুন আশা এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
ইরানের এই দৃঢ় অবস্থান কেবল তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটেও তাৎপর্যপূর্ণ। ফিলিস্তিন, লেবানন, এবং সিরিয়ার মতো দেশের প্রতি ইরানের সমর্থন তাদের মুসলিম বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতীক। ইরানের এই ভূমিকা মুসলিম বিশ্বের ঐক্য এবং স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে, ইরানকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের পরিকল্পনা শুধু সামরিক বা কৌশলগত নয়। তারা ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক চাপ এবং সামাজিক বিভাজন সৃষ্টি করা। কিন্তু ইরানের জনগণ এবং নেতৃত্ব এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রমাণ করেছে যে, তাদের দৃঢ়তা এবং প্রতিরোধের মন্ত্রে কোনো ফাটল ধরানো সম্ভব নয়।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তিকালে ইরানের মতো একটি দেশের ভূমিকা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পক্ষে তাদের অবস্থান, ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য রক্ষায় তাদের প্রচেষ্টা ইরানকে শুধু একটি দেশ নয়, বরং একটি প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ইরান ও ইসরায়েলের এই সংঘাত শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমা বিশ্বের পরিকল্পনা এবং ইরানের প্রতিরোধের মধ্যে এই সংঘাতের ফলাফল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য নির্ধারণ করবে। ইরানের এই প্রতিরোধের গল্প কেবল তাদের জাতির জন্য নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। ইরানের এই প্রতিরোধ এবং অগ্রগতির মন্ত্র বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
রাজু আলীম: কবি ও লেখক