বাংলাদেশ একটি চক্রের মধ্যে আটকে গেছে: সারজিস আলম
Published: 28th, June 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘দেশের ক্ষমতা বদলালেও একটি চক্রের মধ্যে বাংলাদেশ আটকে গেছে। এই চক্র ভাঙার উপযুক্ত সময় ছিল অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়। কিছু মানুষের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু একটা ব্যাকডোর নেগোসিয়েশনের মধ্য দিয়ে এই চক্রটা কন্টিনিউ হচ্ছে।’
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন সারজিস আলম। আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস–২০২৫ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ন্যাশনাল এসএমই অ্যাসোসিয়েশন।
সরকার পরিবর্তন হলেও কিছু বড় ব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গোপনে সমঝোতা করে ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘এখানে বড় বড় কিছু বিজনেসম্যান আছে, তাদের সঙ্গে যেই রাজনৈতিক দলই আসুক না কেন, সেই রাজনৈতিক দলের একটা সুন্দর নেগোসিয়েশন হয়ে যায়। সেই বিজনেসম্যানরা ধীরে ধীরে বিজনেস মাফিয়া হয়ে উঠতে শুরু করে। তাদের কিছু মিডিয়া হাউস থাকে, তারা মিডিয়া মাফিয়া হয়ে ওঠে। এরপরে তাদের কিছু ব্যাংক হয়, ধীরে ধীরে তারা ব্যাংক মাফিয়া হয়ে ওঠে। অল্প কিছু মানুষের কম্বিনেশনে একটা মাফিয়াদের এম্পায়ার (রাজত্ব) হয়, সেই মাফিয়াদের এম্পায়ারে বিভিন্ন ব্যবসায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রবেশের দরজাটা বন্ধ করে রাখা হয়।’
দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সব খাতে যাঁরা ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে মন্তব্য করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল এসএমই অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, স্বাধীন গণমাধ্যম তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে গণমাধ্যমে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
অনেক বাধার মুখোমুখি হলেও এনসিপি একদিন সরকার গঠন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে বাংলাদেশে বুলেটের রেভল্যুশন হয়েছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্যালটের রেভল্যুশন হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাইফ পাওয়ার টেককে আওয়ামী লীগের অংশ উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে পুরো বন্দরব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা বন্দর ব্যবস্থাপনায় যে একটি স্বাপ্নিক যাত্রা দেখেছিলাম, এখনো তারা কীভাবে বন্দরের দায়িত্বে থাকে? আমরা সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই।’
অনুষ্ঠানে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও ন্যাশনাল এসএমই অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা তাসনিম জারা প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে প্রান্তিক মানুষও উদ্যোগের সুফল ভোগ করতে পারে। কারণ, শুধু সুবিধাজনক স্থানে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গেলে সেটা একটা স্তরে বড় বাধার সম্মুখীন হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর প্রতিষ্ঠাতা শাহির চৌধুরী বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একরকম আশীর্বাদ। কারণ, আগে যেখানে একটি ছোট প্রতিষ্ঠান শুরু করতে বড় পুঁজির প্রয়োজন হতো, এআই এখন সেই কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। কাজেই এমন বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে এআই সম্পর্কে গভীর ধারণা নেওয়ার বিকল্প নেই।
শেয়ারট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাদিয়া হক বলেন, উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রচণ্ড আগ্রহের প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদের জন্য নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য নেই। কারণ, প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে মান রক্ষার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি) পিএলসির পরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন এনস প ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে জুয়ার আসর থেকে গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাসহ ৩৪ জনের জামিন
টাঙ্গাইলে জুয়ার আসর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ৩৪ জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। জুয়া প্রতিরোধ-বিষয়ক আইনটি আরো কঠোর করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এর আগে, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতে শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে অবস্থিত শতাব্দী ক্লাব থেকে জুয়া খেলার সময় গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪১০ টাকা, জুয়া খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও দুইটি খালি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। পরে বুধবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে জুয়ার আসর থেকে বিএনপি নেতাসহ আটক ৩৫
জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চাইছে: তারেক রহমান
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, সাবেক জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম, কালিবাড়ি এলাকার বিধুণ ভূষণের ছেলে রক্ষিত বিশ্বজিৎ, সবুর খান বীর বিক্রমের ছেলে মো. শাহ আলম খান মিঠু, দিঘুলিয়ার জসিম উদ্দিন, বাঘিলের গোলাম মাওলা, থানাপাড়ার শাহিন আহমেদ, আবু জাফর খান, বিশ্বাস বেতকার মো. আব্দুর রশিদ, আকুর টাকুর পাড়ার মঈন খান, করটিয়ার ইসমাইলের ছেলে মোস্তফা কামাল।
এছাড়া আরো আছেন, সাবালিয়া এলাকার বিশ্বনাথ ঘোষ, একে এম মাসুদ, বেতকার শিপন, মহব্বত আলী, বিশ্বাস বেতকার আশিকুর রহমান, রফিক, আখতারুজ্জামান, বেপারী পাড়ার এস এম ফরিদ আমিন, কবির হোসেন, আদালত পাড়ার মোশারফ উদ্দিন, রফিকুল, বিশ্বজিৎ, হাসান আলী, ঘারিন্দা এলাকার হাবিল উদ্দিন, আকুর টাকুর পাড়ার জাহিদ, থানা পাড়ার প্রিন্স খান, সৈয়দ শামসুদ্দোহা, পাড় দিঘলিয়ার সাদেকুর, কাজিপুরের সেলিম, আদালত পাড়ার শাহ আলম, সিরাজুল, আদি টাঙ্গাইলের শফিক, আশেকপুর এলাকার আরমান ও ছয়আনি পুকুর পাড় এলাকার শামসুল হক।
গালা গ্রামের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, “এই জুয়া খেলে অনেক পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। তারপরও দেশ থেকে জুয়া বন্ধ হচ্ছে না। জুয়ার আইনটি আরো কঠোর করার দাবি জানাচ্ছি।”
শহরের সন্তোষের আবু হানিফ বলেন, “এই জুয়া মামলায়ই মনে হয় আদালতে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আসামীরা জামিন পেয়ে যায়। অথচ এই জুয়ায় আসক্ত হয়ে অনেকে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। অপরাধ কমাতে ও অনেক পরিবার রক্ষায় আইনের বিষয়টি সরকারকে ভেবে দেখা উচিৎ।”
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানবীর আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতে সেনাবাহিনী শতাব্দী ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার আসর থেকে বিএনপি নেতাসহ ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।”
টাঙ্গাইল আদালত পরিদর্শক লুৎফর রহমান বলেন, “দুপুর পৌনে ১টার দিকে আসামিদের আদালতে আনা হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।”
ঢাকা/কাওছার/মেহেদী