মেক্সিকোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিনালোয়া রাজ্য থেকে অন্তত ২০টি মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। মরদেহগুলোর কয়েকটির মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছে। সিনালোয়া এলাকাজুড়ে প্রায়ই প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চক্রগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে থাকে।

সোমবার সিনালোয়ার সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, রাজ্যের রাজধানী কুলিয়াকানের কাছাকাছি রাস্তার পাশ থেকে মাথাবিহীন চারটি মরদেহ উদ্ধার হয়। একটি পরিত্যক্ত গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার হয় আরও ১৬টি মরদেহ। একই সঙ্গে একটি ব্যাগের ভেতরে মানুষের পাঁচটি মাথা পাওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, মরদেহগুলোর পাশে চিরকুট ফেলে রাখা হয়েছিল। কোনো একটি মাদক চক্রের পক্ষ থেকে এটি লেখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেই চিরকুটে কী লেখা ছিল, তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

স্থানীয় কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এটি সিনালোয়ার শক্তিশালী মাদক চক্রগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষেরই অংশ। এলাকাটিকে মেক্সিকোর অন্যতম সহিংস অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সিনালোয়া সরকারের মুখপাত্র ফেলিসিয়ানো কাস্ত্রো এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সহিংসতার যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে, তা বিবেচনায় নিয়ে সংগঠিত অপরাধ দমনে সরকারের কৌশল পরীক্ষা করা জরুরি।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২৯ মাদক কারবারিকে তুলে দিল মেক্সিকো২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কাস্ত্রো আরও বলেন, ‘সিনালোয়ায় পুরোপুরি শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সেনা ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে।’

তবে রাজ্যের সাধারণ মানুষ বলছে, প্রশাসন এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

সিনালোয়ায় কয়েক মাস ধরে সহিংসতা চলছে। মাদক উৎপাদন ও পাচারের পথগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে মাদক চক্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে মাঝেমধ্যে।

এই মাদক চক্রগুলোর এক পক্ষ সিনালোয়া কার্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা জোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজমানের অনুসারী। আর অন্য পক্ষ ইসমায়েল ‘এল মায়ো’ জামবাদার অনুসারী।

গত বছরের জুলাইয়ে জামবাদা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সহিংসতা তীব্র মাত্রায় পৌঁছায়। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারাধীন। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী, টেক্সাসের এল পাসোর কাছে একটি বিমানবন্দর থেকে ৭৬ বছর বয়সী জামবাদা এবং ৩৮ বছর বয়সী জোয়াকিন গুজমান লোপেজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লোপেজ হলেন ‘এল চাপো’ গুজমানের ছেলে।

জামবাদার অভিযোগ, গুজমান লোপেজ তাঁকে মেক্সিকো থেকে অপহরণের পর ব্যক্তিগত একটি বিমানের মাধ্যমে জোর করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন।

মাদক পাচারের দায়ে ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন এল চাপো।

আর গুজমান লোপেজ গত জুলাইয়ে শিকাগোর ফেডারেল আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

আরও পড়ুনমেক্সিকোর দুই মাদকসম্রাট যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তারের প্রভাব কী হতে পারে২৯ জুলাই ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র জ মব দ মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ