ফুলেফলে, লতাগুল্মে ছাওয়া সবুজের ডাক
Published: 2nd, July 2025 GMT
আম-কাঁঠালের ভরা মৌসুম চলছে। লাল, হলুদ, কমলা রঙের পাকা আমের সঙ্গে কালো জামও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। তবে বেগুনি রঙের আম, সাদা রঙের জাম আর লাল কোষের কাঁঠাল দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে জাতীয় বৃক্ষমেলায়।
বরাবরের মতোই জাতীয় বৃক্ষমেলা চলছে শেরেবাংলা নগরে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে আগের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে। বন বিভাগের আয়োজনে রাজধানীতে এই স্থানেই জাতীয় বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। জনসাধারণকে বৃক্ষরোপণে আগ্রহী করে তোলা এবং সে জন্য প্রচারের লক্ষ্য নিয়েই বৃক্ষমেলার যাত্রা শুরু। একই স্থানে ক্রেতাদের কাছে ফলদ, বনজ, ঔষধি, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন রকম গাছের চারা ও কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করে তোলাও ছিল মেলার উদ্দেশ্য। বর্ষা মৌসুমেই সাধারণত গাছপালা রোপণের উপযুক্ত সময়। এ জন্য বরাবর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবার পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি ছিল ওই সময়। তাই কিছুদিন পিছিয়ে গত ২৫ জুন থেকে ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’ স্লোগান নিয়ে শুরু হয়েছে এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলা। চলবে আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত।
গত সোমবার বৃক্ষমেলার তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বরত বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা শাকিলা নার্গিস প্রথম আলোকে জানালেন, এবার মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৩। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬টি। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকে। প্রবেশের জন্য কোনো টিকিটের প্রয়োজন নেই, সবার জন্য উন্মুক্ত।
প্রতিদিন মেলায় অনেক বৃক্ষানুরাগীর সমাগম হয়। বছর বছর মেলার বিক্রিও বেড়েছে। মেলার তথ্যকেন্দ্রের দেওয়া হিসাব থেকে দেখা গেল, ২০১৫ সালে যেখানে মোট চারা বিক্রি হয়েছিল ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৯টি, টাকার অঙ্কে বিক্রির পরিমাণ ২ কোটি ৯৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। সেখানে গত বছর চারা বিক্রি হয়েছে ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৩টি; যার দাম ছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এ বছর একটু দেরিতে মেলা শুরু হলেও বেচাকেনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলেই আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী নার্সারি মালিকেরা আশা করছেন।
বিশাল আকারের এই বৃক্ষমেলার পরিবেশটাই এমন যে এখানে এলে মন ভালো হয়ে যায়। ফুলেফলে–লতাগুল্মে যেন এক সাজানো বাগান। প্রতিটি স্টলের ভেতরে, সামনের খোলা মাঠে সারি সারি সাজানো বিচিত্র রকমের গাছগাছালির সমাবেশ। চারদিকে সবুজের নিবিড় সন্নিবেশ। গাছের ডালে ডালে ঝুলছে লাল, হলুদ, সবুজ আম। কাঁঠাল, আমলকী, করমচার মতো দেশি ফল তো আছেই। কম চেনা লঙ্গান, রাম্বুটান, ডুরিয়ান, অ্যাভোকাডোর মতো ফলও আছে।
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নার্সারির মালিক আবদুল জলিল জানালেন, ফল ধরা গাছের দাম সাধারণত নির্ভর করে গাছের বয়স ও জাতের ওপর। শহর এলাকার লোকজনের মূলত আগ্রহ থাকে ছাদবাগান করার উপযোগী গাছের প্রতি। তাঁদের চাহিদা অনুসারে হাইব্রিড জাতের গাছই মেলায় বেশি আনা হয়। এসব জাত প্রধানত থাইল্যান্ড থেকে আসে। বিদেশি আমের মধ্যে আছে চিয়াংমাই, চাকাবাত, ব্রুনেই কিং, ব্যানানা, কাটিমন ইত্যাদি। ফল ধরা বড় গাছের দাম ১০–৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পলিব্যাগের ছোট চারা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
দেশি–বিদেশ ফলের চারা ও বড় গাছের বিপুল সমারোহ দেখা গেল ইউনিক নার্সারি অ্যান্ড প্লাজায়। ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম হাওলাদার জানালেন, তাঁদের নার্সারিতে মিষ্টি ও লাল দুই রকমের তেঁতুল, সাদা জাম ও মিষ্টি জলপাইয়ের চারা আছে। এ ছাড়া সফেদা, ডেউয়া, লটকন, জলপাই, লেবু, জাম্বুরা, আতা, গাব, কাজুবাদাম, করমচা, জামরুল, আমলকী, অড়বড়ই, কাউফলসহ বিভিন্ন দেশি ফলের চারা ও বড় গাছ আছে। বিদেশি ফলের মধ্যে আছে অ্যাভোকাডো, পার্সিমন, রাম্বুটান, লঙ্গান, ডুরিয়ান, মিসরীয় ডুমুর প্রভৃতি।
মেলায় অনেক রকম মসলার চারা দেখা গেল। রাশিদা নার্সারির বিক্রেতা কাইয়ুম হাসান জানালেন, এলাচি, চুইঝাল, গোলমরিচ, দারুচিনি, তেজপাতা এসবের চারা পাওয়া যাবে আকার অনুসারে ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
মুক্তাগাছার বনরূপা নার্সারি এসেছে জাতীয় বৃক্ষমেলায়। তাদের স্টলের সামনে ছাউনি দিয়ে অনেকটা গ্রিনহাউসের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে সাজানো আছে বিচিত্র ধরনের ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট, অর্কিডসহ ঘরে রাখার মতো শোভাবর্ধনকারী লতাগুল্ম। মালিক জুলহাস হোসেন জানালেন, আকার আর জাতভেদে এসবের দাম সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।
অনেক রকমের নারকেলের চারা বিক্রি করতে দেখা গেল এনার্জিপ্যাক এগ্রো লিমিটেডের স্টলে। কাঞ্চনপুরি, মালয়েশিয়ান, শ্রীলঙ্কান, ভিয়েতনামি, কেরালা, মিয়ানমার ও বারি-৪ নারকেলের চারা পাওয়া যাবে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। গাছপালা ছাড়া বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণও আছে অধিকাংশ স্টলে।
ফুলের কথা আলাদা করেই বলতে হবে। গোলাপ, জবা, জুঁই, চামেলি, বেলি, হাসনাহেনা, টগর, রঙ্গনসহ কত রকমের, কত রঙের ফুল যে আছে মেলায় তার ইয়ত্তা নেই! রঙে রূপে সুশোভন করে তুলেছে তারা দৃশ্যপট। মেলায় তাদের সান্নিধ্যে এলে ঘুচে যাবে মনের মলিনতা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রকম র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ দাবিতে খানির কর্মসূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পরপরই অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়া এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক—খানি। সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে আজ সোমবার ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করেছে নেটওয়ার্কটির সদস্য সংগঠনগুলো।
'ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও' স্লোগানে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের স্বার্থরক্ষা এবং রেশনিং ব্যবস্থাসহ একাধিক দাবির কথা তুলে ধরেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ (জুন ২০২৫) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে চালের একক প্রভাব প্রায় ৪০ শতাংশ। অথচ বোরো মৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে কোনো স্বস্তি মিলছে না।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে থানার সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কৃষক জহর আলী বলেন, ‘যে ভাত আমরা ফলাই, তাই আবার চড়া দামে কিন্না খাই। আমাদের দেখার কেউ নাই?’ রিকশাচালক সিকান্দার বললেন, সারাদিনে যা আয় করি, তার অর্ধেক যায় চাল কিনতে। আমরা ৪০ টাকা কেজিতে চাল চাই।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে খানির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ এখন মাছ, মাংস, ডাল বাদ দিয়ে কেবল ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণ করছে। যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সংগঠনটি সংকট উত্তরণে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বৃদ্ধি, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু; ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় বাজার, উৎপাদন ও ভোগক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ; টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা সিন্ডিকেট রোধ ও কার্যকর বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।
বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আয়োজিত মানববন্ধনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, মজুতদারির অপচেষ্টা ও বাজার নজরদারির ঘাটতির কারণে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, আবার ভোক্তা কিনছেন অতিরিক্ত দামে।
তিনি বলেন, খাদ্যে ব্যয় কমিয়ে এনে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পুষ্টিহীনতায় না পড়ে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে চালের বাজার স্থিতিশীল করবে এবং দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।