অবাধ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন (৪৮ লাখ) মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে জাপান। ইউএনডিপির সহায়তায় ইসির নেওয়া ‘ব্যালট’ প্রকল্পের আওতায় এ সহায়তা দেবে দেশটি।

আজ বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলারের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়।

এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যুরোর মহাপরিচালক ইশিজুকি হিদে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৮ জুন ব্যালট প্রকল্পে ২০ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় অস্ট্রেলিয়া।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে অস্ট্রেলিয়া, আজ জাপান থেকে সহায়তা পাওয়ার এ চুক্তি হয়েছে। ইউএনডিপি এটা অর্গানাইজ করে। এর প্রত্যক্ষ বেনিফিশিয়ারি (সুবিধাভোগী) নির্বাচন কমিশন। আজ জাপান ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’

এদিকে ইসি সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ চুক্তির আওতায় নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জাপান ৬৯৫ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার) অনুদান দিয়ে সহায়তা করবে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো, ভোটার ও নাগরিক শিক্ষা জোরদার করা; নারী, যুবসমাজ ও সমাজে প্রতিনিধিত্ব কম—এমন গোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা; সেই সঙ্গে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন জাপানের এ সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই চুক্তি আমাদের কার্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং জনসাধারণের আস্থা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করবে।’

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি বলেন, বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক পথে যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। জাপান বাংলাদেশের নিজস্ব অধিকারকে সম্মান জানায় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন করে। ইউএনডিপির মাধ্যমে জাপানের এ সহায়তা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, ‘উদারতা ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার হিসেবে সহযোগিতা করার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দেশটির সহায়তা বাংলাদেশে জনগণের সত্যিকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়—এমন একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সাহায্য করার আমাদের যৌথ লক্ষ্যে নতুন শক্তি যোগ করেছে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এরই অংশ হিসেবে সংস্থাটির সহায়তায় ‘বাংলাদেশ’স অ্যাডভান্সমেন্ট ফর ক্রেডিবল, ইনক্লুসিভ অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশনস’ (ব্যালট) নামে প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে বলে জানান ইসি সচিব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউএনড প প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে নতুন দিগন্ত: কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষে কৃষকের সাফল্য উদযাপন

বাংলাদেশের কৃষি খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনার সাক্ষী গত ২৯ জুন। আমাল ফাউন্ডেশন ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত LoGIC প্রকল্পের অধীনে, ‘কৃষকের সক্ষমতা উন্নয়ন ও মার্কেট লিংকেজ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন উপলক্ষে এক বিশেষ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় শের-এ- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা এ আয়োজনে দেশের কৃষি খাতে জলবায়ু সহনশীলতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।

গত এক বছরে কুড়িগ্রাম ও বাগেরহাট অঞ্চলের কৃষকদের নিয়ে এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ, পরিকল্পিত চাষাবাদ, উন্নত পরবর্তী সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও বীজ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চালু করা হয়। এর মাধ্যমে কিনোয়া ও চিয়া সিড—এই দুটি উচ্চমূল্যের ও জলবায়ু সহনশীল ‘সুপার-ক্রপ্স’ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। কেবল কুড়িগ্রামেই প্রায় ২৮৬০ কেজি কিনোয়া এবং ১৭৬০ কেজি চিয়া সিড উৎপাদন হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষকেরা ৮.৫ লাখ টাকারও বেশি আয় করেছেন।

অনুষ্ঠানে ‘সোয়িং সাস্টেইনেবল ফিউচার উইথ সুপার-ক্রপ্‌স’ শীর্ষক মূল থিমের ওপর ভিত্তি করে দুইটি প্যানেলে আলোচনা হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করেন সরকারি প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা। প্রথম প্যানেলে আলোচনা হয় ‘কৃষক ও বাজারের মধ্যে সংযোগ শক্তিশালীকরণ: মূল্য শৃঙ্খলা ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ নিয়ে। কৃষকদের বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে পার্টনারশিপ, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়।

দ্বিতীয় প্যানেলে ‘উদ্ভাবন থেকে বাস্তব প্রভাব: জলবায়ু সহনশীল কৃষি-বাজার মডেলের সম্প্রসারণ ও স্থায়িত্ব’ শীর্ষক আলোচনায় কৃষি নীতিমালা, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার মাধ্যমে প্রকল্পটি কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা যায় তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানটির চেয়ারপার্সন হিসেবে শুভ সূচনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের  যুগ্ম সচিব মো. ফজলে আজিম এবং LoGIC প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি ও লজিক প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এ কে এম আজাদ রহমান, শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিনিধি, আমাল ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক সারাহ জাবীন কৃষ্টি এবং বেনেফিশিয়ারি কৃষকেরা, যারা নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সাফল্য তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠান শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও সার্বিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আয়োজন শেষ হয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সঠিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বাজার সংযোগের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাকে টেকসই ও লাভজনক করা সম্ভব। আমাল ফাউন্ডেশন ও ইউএনডিপির এই যৌথ উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্যকর ও অনুকরণীয় মডেল হয়ে থাকবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনে ৪৮ লাখ ডলার দিচ্ছে জাপান
  • বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে একত্রে কাজ করবে জাপান এবং জাতিসংঘ 
  • জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে নতুন দিগন্ত: কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষে কৃষকের সাফল্য উদযাপন