পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে একটি মাছধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের তোড়ে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার গভীর সাগরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার পরে ট্রলারে থাকা সাত জেলে সাগরে ভাসতে থাকেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে ট্রলারটিও অন্য ট্রলারের মাধ্যমে তীরে নিয়ে আসা হয়।

আহত জেলেরা হলেন- হাসান ঘরামি (৩৬), তানিম (২০), মামুন (৩২),  ইসমাইল (৩৩), মাহাবুব (৩১), নাঈম (২২) এবং ওলিউল্লাহ (২০)। তারা সবাই কুয়াকাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

জেলেরা জানান, উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের তোড়ে তাদের ট্রলারটি উল্টে ডুবে যায়। দুর্ঘটনার পরে জেলেরা সাগরে ভাসতে থাকেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর পাঁচ জেলেকে অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করেন। বাকি দুজন ভাসতে ভাসতে তীর এলাকার কাছাকাছি চলে এলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের নজরে আসে বিষয়টি। পরে পর্যটক বহনকারী একটি স্পিডবোট পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।

কুয়াকাটা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিকাশ মন্ডল বলেন, ‘‘আহত জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটিও উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রলারটির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’’

ঢাকা/ইমরান/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ