মিয়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ
Published: 2nd, July 2025 GMT
অবশেষে অপেক্ষার অবসান! মিয়ানমারের মাটিতে লাল-সবুজের কন্যারা লিখে ফেলেছে এক অনন্য গৌরবগাথা। ৭৩ ধাপে এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষ, অতীত পরিসংখ্যানে যারা অনেক এগিয়ে, সেই মিয়ানমারকে তাদেরই ঘরের মাঠে হারিয়ে এএফসি এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন এখন আরও স্পষ্ট বাংলাদেশের সামনে।
এ যেন এক প্রতিশোধের জয়। ২০১৭ সালে ইয়াঙ্গুনে অলিম্পিক বাছাইয়ে মিয়ানমারের মেয়েরা যখন বাংলাদেশের জালে পাঁচ-পাঁচটি গোল দিয়েছিল। তখনও হয়তো কেউ ভাবেনি এই একই শহরে কখনো এমন জয়গাথা লেখা হবে। আজ ঠিক তাই হয়েছে।
ঋতুপর্ণা চাকমা— এই একটি নামই যেন বদলে দিলো ম্যাচের চেহারা। দুই অর্ধে তার দুটি দুর্দান্ত গোল শুধু স্কোরলাইন বদলায়নি, বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস আর সামর্থ্যের সংজ্ঞাও।
আরো পড়ুন:
মন্টেরেইকে হারিয়ে শেষ আটে বরুশিয়া
শেষ নৃত্যের অপেক্ষায় থাকা নেইমার ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে যা জানালেন
ম্যাচের ১৮ মিনিটে তহুরা খাতুনকে ফাউল করার পর বাঁ দিকের কর্নার থেকে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণার নেওয়া প্রথম শট মানবদেয়ালে আটকালেও ফিরতি বল থেকে বা পায়ের অনবদ্য শটে বল জড়িয়ে যায় পোস্টের কোণায়। যা গোলকিপার শুধুই দেখতে পারেন, ঠেকাতে নয়।
ম্যাচে আরও একবার ঋতুপর্ণার বানানো সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ব্যবধান তখনই দ্বিগুণ হতে পারত। কিন্তু জুনিয়র শামসুন্নাহার ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারেননি বলের কাছে। শেষমেশ সেই দ্বিগুণ ব্যবধান আসে ৭১ মিনিটে। বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে ঋতুপর্ণা বাঁ পায়ের চোখজুড়ানো কোনাকুনি শটে করেন নিজের দ্বিতীয় এবং দলের দ্বিতীয় গোলটি। গোলটি যেন নিখুঁত এক শিল্পকর্ম। যেটা শুধু স্কোরবোর্ডে যোগ হয়নি, বসেছে দর্শকদের মনের আয়নায়।
৮৯ মিনিটে অবশ্য কিছুটা দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে আসে। যখন মিয়ানমারের উইন উইন গোল করে ব্যবধান ২-১-এ নামিয়ে আনেন। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ ডিফেন্স আর কোনো ভুল করেনি। শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই উদযাপনের বিস্ফোরণ, ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত!
এই জয়ে গ্রুপ শীর্ষে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তান। যদি এই ম্যাচেও জয় আসে, তাহলে নিশ্চিত হয়ে যাবে একটি ঐতিহাসিক টিকিট। প্রথমবারের মতো নারী ফুটবলে বাংলাদেশ পা রাখতে পারে এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চে; এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নারী ফুটবলে ইতিহাস, এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ
দেশের ফুটবলে লেখা হয়েছে নতুন এক ইতিহাস। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে।
আজ বিকেলে ইয়াঙ্গুনে শক্তিশালী মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সেই জয়েই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশ চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া। অপেক্ষা ছিল ৫ জুলাই শেষ ম্যাচের জন্য।
তবে আজই সন্ধ্যায় একই গ্রুপে (সি গ্রুপ) বাহরাইন-তুর্কমেনিস্তানের ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হওয়ায় এক ম্যাচ হাতে রেখেই গ্রুপসেরা নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের। যাতে নিশ্চিত হয়েছে ২০২৬ এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ।
মিয়ানমারে অনুষ্ঠানরত ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। মিয়ানমার ৩, আর বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের ঝুলিতে ১ পয়েন্ট করে।
৫ জুলাই গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ যদি তুর্কমেনিস্তানের কাছে হারেও, আর মিয়ানমার যদি বাহরাইনকে হারিয়ে মোট ৬ পয়েন্ট পায়—তবুও নিয়ম অনুযায়ী মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ী বাংলাদেশই হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া আসরে জায়গা পাবে বাছাইপর্বের গ্রুপসেরারাই।
বাংলাদেশই বাছাইপর্ব থেকে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠা প্রথম দল। চূড়ান্ত পর্বের ১২ দলের মধ্যে আগেই জায়গা নিশ্চিত ছিল চারটি দলের। স্বাগতিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, আর সর্বশেষ আসরের সেরা তিন দল হিসেবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন। তাদের সঙ্গে যোগ হবে বাছাইয়ের আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একবারই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার কীর্তি আছে। ১৯৮০ সালে কুয়েতে খেলেছিল বাংলাদেশের পুরুষদের জাতীয় দল। এরপর আর কখনো বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দল এশিয়ান কাপে খেলতে পারেনি। বর্তমানে ছেলেরা ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব খেলছে। প্রথম দুই ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে জামাল ভূঁইয়াদের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার পথ এই মুহূর্তে কঠিন।
এমন সময়েই মেয়েদের জাতীয় দল দেখিয়ে দিল, স্বপ্ন শুধু দেখা নয়, ছুঁয়ে ফেলাও যায়।