সংস্কারের আলোচনা থাকলেও বাস্তব প্রতিফলন নেই: জোনায়েদ সাকি
Published: 2nd, July 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার বাস্তব অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, সংস্কারের আলোচনা ও প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে না। এখনও ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এখনও বৈষম্য ও শোষণ-বঞ্চনা চলছেই।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটি আয়োজিত মানববন্ধনে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। ভিসা সমস্যার সমাধান, বেকার ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিতকরণ এবং ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলের ৫ দফা দাবিতে মেরিনারদের এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টাদের কাছে জানতে চাই- এখনও ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের আস্তানা ধ্বংস করতে না পারলে ক্ষমতায় আছেন কেন? এসব অব্যাহত থাকলে তা হবে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত ও তাদের আকাঙ্খার প্রতি অবমাননা। মেরিনারদের পাঁচদফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে অনতিবিলম্বে এসব দাবি পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মানববন্ধনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে দেশের জন্য রেমিটেন্সের পাশাপাশি সম্মানও বয়ে আনেন। দেশের মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে মেরিনারদের দাবি পূরণ করতে পারে।
বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটির মুখ্য সংগঠক ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী প্রীতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, মেরিন ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম জিলানী, ইঞ্জিনিয়ার রইচ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ, চিফ অফিসার কায়কোবাদ, ইঞ্জিনিয়ার বজলুল রহমান প্রমুখ।
মেরিনারদের পাঁচদফা দাবি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বেকার মেরিন ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিত করতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ক্যাডেট ও ফ্রেস রেটিং দ্বিগুণ করা হোক। ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। ভিসা সমস্যার সমাধান ও বিদেশি চাকরির বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে। নাবিক প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবধরনের অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে হবে। ভেনিজুয়েলাতে বন্দি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে অতিদ্রুত মুক্ত করে আনতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেকড়ে ফেরাল ফুটবল, ট্রায়ালের ফলাফল কবে
তারা কেউ তারকা নন। সোমবার গোধূলিলগ্নে জাতীয় স্টেডিয়ামে তাদের নিয়ে দর্শকদের কাড়াকাড়ি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একঝাঁক ফুটবলার নিয়ে কৌতূহলের কমতি নেই ফুটবল অনুরাগীদের। গ্যালারি থেকে সবুজগালিচায় নেমে বিতোশক চাকমা-ইমান আলমদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত তারা। বড় কোনো নামি খেলোয়াড় এখনও হয়ে ওঠেননি ইকরামুল-তোফায়েলরা, তবে বাংলাদেশের মানুষের চোখে তারাই এখন সময়ের সেরা তারকা!
এই ফুটবলারদের নিয়ে বাফুফের ‘নেক্সট গ্লোবাল স্টার’ যেভাবে সাড়া ফেলেছে, তাতে দেশের ফুটবলে যোগ হয়েছে নতুন উন্মাদনা। ইউরোপ-আমেরিকান অঞ্চলের ৪৮ ফুটবলার নিয়ে তিন দিন হয়ে গেল ট্রায়াল। এর শেষটা হয়েছে গতকাল দুটি প্রীতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে। যেখানে দুই ভাগে নিজেদের ফুটবলশৈলী দেখিয়েছেন এই খেলোয়াড়রা। যে ম্যাচে জয়-পরাজয় কোনো মুখ্য ছিল না। তাই ছিল উৎসবের আমেজ।
শুধু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা নন, সঙ্গে এসেছিলেন তাদের আত্মীয়স্বজনও। অনেকের হাতে খেলোয়াড়ের নামসংবলিত ব্যানার। উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা আর ভালোবাসার মুহূর্তগুলো বন্দি করতে ব্যস্ত এই ফুটবলারদের পরিবার। ম্যাচ শেষে সার্টিফিকেট পেয়ে সে কী উচ্ছ্বাস সঞ্জয় করিম-ইজাজ রহমানদের।
যুক্তরাজ্যের মারগেট এফসিতে খেলা ১৯ বছর বয়সী ইমান আলমের কাছে এ মুহূর্তটি সারাজীবন মনে থাকবে, ‘আমি চার-পাঁচ মাস আগে একবার এসেছিলাম বাংলাদেশে। সিলেট আর গুলশানে ট্রেনিং করি। তবে আমার এবারের আসাটা একজন ফুটবলার হিসেবে, যা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। সে জন্যই এখানে আসা।’
তাঁর মতো স্বপ্ন ইকরামুলেরও। ইংল্যান্ড থেকে আসা এ খেলোয়াড় তিন দিনের ট্রায়ালে মুগ্ধ, ‘প্রথম দিন মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। আজকের (সোমবার) দিনটি তো মনে রাখার মতো। যে মানের পারফরম্যান্স করার কথা, সেটি করতে পারিনি। কারণ প্রচণ্ড গরম ছিল। তার পরও আমি আশাবাদী নির্বাচকরা আমাকে বিবেচনা করবেন। আমার পরিবারের স্বপ্ন, আমি যেন বাংলাদেশের হয়ে খেলি।’
ইকরামের মতো স্বপ্ন সবার। তবে সবাইকে যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নেবে না, তা অনুমেয়। প্রথম দু’দিন এই খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও স্কিল দেখেছিলেন ট্রায়ালে নিয়োজিত কোচরা। এ দিন ৪৮ জনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ম্যাচের আয়োজন করে বাফুফে। অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সী ফুটবলারদের দুটি গ্রুপে এবং সিনিয়র পর্যায়ের খেলোয়াড়দের দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। বিকেল ৪টায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রীতি ম্যাচে প্রবাসীরা সবুজ এবং নীল দলে ভাগ হয়ে খেলে। যে ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। যেখানে আলাদাভাবে নজর কাড়েন বিতোশক চাকমা।
যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় সারির ক্লাব ব্রটলিন এফসিতে খেলা বিতোশক দেখিয়েছেন তাঁর পায়ের শৈলী। চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং এবং নিঁখুত ফিনিশিংয়ে সবাইকে মোহিত করা এ প্রবাসী দারুণ একটি গোলও করেছেন। বিশোতক চাকমা হলেন সাবেক ফুটবলার বরুণ বিকাশ দেওয়ানের ভাগ্নে। এরপর সিনিয়র দলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেখানে কোনো দলই গোল করতে পারেনি।
এই একটি ম্যাচেই প্রবাসী ফুটবলারদের মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কারণ ম্যাচ খেললেও তাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা এখনও হয়ে ওঠেনি। যে কারণে কতজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে তা এখনও প্রকাশ করেনি বাফুফে। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু থেকে বাকি কোচিং স্টাফের কেউই তাদের পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমকে জানাননি। তবে যতটুকু জানা গেছে, এসব প্রবাসীর সঙ্গে আলাদা মিটিং করেছেন বাফুফের অফিসিয়ালরা। তাদের সঙ্গে খোলামেলা অনেক কথাই বলেছেন তারা। দু’একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা হয়তো জানিয়ে দেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।