শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বারি উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতির অবদান’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া বারি উদ্ভাবিত বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারের পাশাপাশি টিএসসি প্রাঙ্গণে বারি উদ্ভাবিত বিভিন্ন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বীজ বপন, ফসল কর্তনসহ নানা ধরনের আধুনিক কৃষি যন্ত্রের কার্যকারিতা, সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আরো পড়ুন:

জবিতে রাত ১০টার পর অবস্থান নিষেধ

বাকৃবিতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৭.

৭১ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধি

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কৃষি প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান। তিনি তার উপস্থাপনায় বারি উদ্ভাবিত ৭১টি কৃষি যন্ত্রের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর মধ্যে, ৫৫টি যন্ত্রের উদ্ভাবন সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৬টি যন্ত্র নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে।

বারির ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্ট-হারভেস্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (এফএমপিই) বিভাগের অর্থায়নে ‘কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে অধিকতর লাভজনক করা’ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য বলেন, “বাংলাদেশের কৃষিতে ড্রোন প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে দেশের কৃষি প্রকৌশলীদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”

তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই শেকৃবিতে কৃষি প্রকৌশল অনুষদ চালু হতে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে যুগোপযোগী দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আশাবুল হক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আরফান আলী।

সেমিনারে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বারির এফএমপিই বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল আমিন।

ঢাকা/মামুন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাগমারার শহিদুল ইসলামকে অভিবাদন

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ-বান্দাইখাঁড়া সড়কের পাশে প্রায় ১ হাজার ৪০০ তালগাছ লাগিয়ে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন শহিদুল ইসলাম নামের একটি স্কুলের ল্যাব কর্মচারী। সামান্য বেতনের মানুষটি ১৫ বছর ধরে সন্তানের মতো পরিচর্যা করে যে সবুজের দেয়াল তৈরি করেছেন, তা আমাদের সমাজের দায়িত্ববোধ এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার এক বিরল উদাহরণ।

শহিদুল ইসলাম কোনো সরকারি প্রকল্প বা বড় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে এই কাজ করেননি; বরং তিনি নিজের পকেটের টাকায় তালের বীজ সংগ্রহ করেছেন, যা স্থানীয়দের কাছে একসময় ‘পাগলামি’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তাঁর ভাষায় ‘কিছু পাওয়ার জন্য’ এ কাজ করেননি তিনি; বরং সড়কের ক্ষতি ঠেকানো, বজ্রপাত থেকে রক্ষা, সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং দুর্ঘটনা রোধ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।

বজ্রপাতের ঝুঁকি মোকাবিলায় তালগাছের সারি যে কার্যকর ভূমিকা রাখে, তা আজ প্রমাণিত। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও মাটির ক্ষয়রোধেও এর জুড়ি মেলা ভার। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সরকারি উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে খুব কমই দেখা যায়। শহিদুলের স্ত্রী যখন বলেন, ‘ওই সড়ক দিইয়্যা কোনটেও যাবার লাগলে তালগাছ দেইখ্যা বুক ভরে যায়,’ তখন বোঝা যায়, এই গাছগুলো কেবল পরিবেশ নয়, এটি একটি পরিবারের গর্ব ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

শহিদুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বড় বাজেট নয়, দরকার আন্তরিকতা এবং অধ্যবসায়। তাঁর মতো আরও অনেকে নীরবে এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উচিত তাঁদের যথাযোগ্য স্বীকৃতি দেওয়া। শহিদুলের লাগানো এই ১ হাজার ৪০০ তালগাছের সারির যেন কেউ ক্ষতি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষার এমন মহৎ উদ্যোগগুলো যেন কেবল একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সামর্থ্যের ওপর নির্ভর না করে, তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

শহিদুল ইসলামের তালগাছের সারি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃত দেশপ্রেম কেবল বড় বড় কথার মধ্যে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবনকে জড়িয়ে দেওয়ার সাধারণ অঙ্গীকারের মধ্যে নিহিত। তাঁর এই উদ্যোগ কেবল বাগমারাকে সবুজ করেনি, বরং দেশজুড়ে হাজারো মানুষের জন্য এক নতুন পথের দিশা দিয়েছে। শহিদুল ইসলামরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। পরিবেশসচেতন এমন মহৎপ্রাণ ব্যক্তিকে আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ