আদিবাসী তরুণদের জন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ
Published: 2nd, July 2025 GMT
আদিবাসী তরুণদের জন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিন দিনব্যাপী আবাসিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার থেকে মঙ্গলবার কক্সবাজারের রামাদা হোটেলে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। ইউনেস্কো ঢাকা অফিস ও এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিয়ন (ক্রিহ্যাপ) এ কর্মশালার আয়োজন করে। সহায়তায় ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংগঠন ‘জাবারাং কল্যাণ সমিতি’। এতে চাকমা, ত্রিপুরা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের ২০ জন তরুণ-তরুণী অংশ নেন।
কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্যে ইউনেস্কো বাংলাদেশের প্রধান সুসান ভাইজ বলেন, তরুণরা শুধু ভবিষ্যৎ নয়, বর্তমানের পরিবর্তনেরও অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এই কর্মশালাটি আদিবাসী তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যেখানে তারা কমিউনিটিভিত্তিক ইনভেন্টরি পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার সুযোগ পাবে।
কর্মশালাটি পরিচালনায় ছিলেন ইউনেস্কো স্বীকৃত আইসিএইচ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ শুভা চৌধুরী এবং লেখক ও গবেষক রিফাত মুনিম। অংশগ্রহণকারীরা এই সময়কালজুড়ে তাত্ত্বিক আলোচনা, দলীয় কার্যক্রম এবং মাঠ পর্যায়ে বাস্তব চর্চার সমন্বয়ে একটি নিবিড়ভাবে শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
ভার্চুয়াল বক্তব্যে ক্রিহ্যাপ প্রতিনিধি বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের তরুণরা জীবন্ত ঐতিহ্য বোঝার এবং এর ইনভেন্টরি তৈরির সঠিক পদ্ধতি শিখবে। এর মাধ্যমে তারা তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যিক উপাদানগুলো শনাক্ত করতে পারবে এবং যোগাযোগ ও নথিভুক্তকরণ দক্ষতা আরও উন্নত করতে পারবে। ঐতিহ্যিক
কর্মশালার সমাপনী দিনে অংশগ্রহণকারী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ লাম্প্রা ত্রিপুরা এই কর্মশালায় শিখেছি কীভাবে আমাদের সংস্কৃতির মূল্যবান অংশগুলো সংরক্ষণ করতে হয়। পদ্ধতিগুলো শিখে খুবই আনন্দিত।
রাখাইন তরুণ ম্রাঙয়েউ বলেন, ঐতিহ্যকে কেবল উৎসব বা শিল্প নয়, বরং অস্তিত্ব রক্ষার অংশ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছি এই কর্মশালায়।
চাকমা তরুণী হেমা চাকমা বলেন, গান-নাচ ছাড়াও লোকশিল্প, কারুশিল্প, এমনকি সামাজিক প্রথাগুলোকেও যে চর্চা ও সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে—সেটা এবার পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আদ ব স
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ দাবিতে খানির কর্মসূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পরপরই অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়া এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক—খানি। সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে আজ সোমবার ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করেছে নেটওয়ার্কটির সদস্য সংগঠনগুলো।
'ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও' স্লোগানে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের স্বার্থরক্ষা এবং রেশনিং ব্যবস্থাসহ একাধিক দাবির কথা তুলে ধরেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ (জুন ২০২৫) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে চালের একক প্রভাব প্রায় ৪০ শতাংশ। অথচ বোরো মৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে কোনো স্বস্তি মিলছে না।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে থানার সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কৃষক জহর আলী বলেন, ‘যে ভাত আমরা ফলাই, তাই আবার চড়া দামে কিন্না খাই। আমাদের দেখার কেউ নাই?’ রিকশাচালক সিকান্দার বললেন, সারাদিনে যা আয় করি, তার অর্ধেক যায় চাল কিনতে। আমরা ৪০ টাকা কেজিতে চাল চাই।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে খানির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ এখন মাছ, মাংস, ডাল বাদ দিয়ে কেবল ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণ করছে। যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সংগঠনটি সংকট উত্তরণে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বৃদ্ধি, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু; ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় বাজার, উৎপাদন ও ভোগক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ; টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা সিন্ডিকেট রোধ ও কার্যকর বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।
বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আয়োজিত মানববন্ধনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, মজুতদারির অপচেষ্টা ও বাজার নজরদারির ঘাটতির কারণে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, আবার ভোক্তা কিনছেন অতিরিক্ত দামে।
তিনি বলেন, খাদ্যে ব্যয় কমিয়ে এনে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পুষ্টিহীনতায় না পড়ে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে চালের বাজার স্থিতিশীল করবে এবং দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।