চিত্রনায়ক নিরব। র্যাম্প থেকে বিজ্ঞাপন, সেখানে থেকে নাটকের পর রূপালি পর্দা। সিনেমায় হিসাবের তালিকা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে। কখনো রোমান্টিক, আবার কখনো অ্যাকশন হিরোর ভূমিকায় অভিনয় নিয়ে দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছেন। আজ এই নায়কের জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে জন্মদিন, সিনেমাসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।

সমকাল পরিবারের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
আমার পক্ষ থেকে সমকাল ও সবাইকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা।

বিশেষ এই দিনটিতে প্রথম উইশ কে করল?
প্রথমে উইশ করেছে আমার স্ত্রী। রাতে সে কেক নিয়ে এসে সেলিব্রেট করেছে। এরপর কাছের বন্ধু-বান্ধবরা। আর আমাকে যারা ভালোবাসেন তারা তো বিভিন্নভাবে উইশ করছেই।

এই দিনে কাকে বেশি মিস করেন?
এই দিন এলেই আমার মা-বাবার কথা বেশে মনে পরে। তাদের কথা ভীষণভাবে উপলব্ধি করি। তারা না থাকলে হয়তো আমার এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ছিল না।

ছোটবেলা এবং এখনকার জন্মদিনের মধ্যে পার্থক্য?
ছোটবেলায় এই দিনটা ঘিরে একটা এক্সাইডমেন্ট কাজ করতো। দিনটার জন্য হয়তো কয়েক আগে থেকে অপেক্ষা করতাম। এখন তেমন না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো পাল্টে গেছি। জন্মদিন কখন আসে বোঝাই দায়। মনে হয় জন্মদিন আসলে কিছুই না, এটা অন্য ৩৬৪ দিনের মতোই।

জন্মদিনে বিশেষ উপহার?
আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি এটাই আমার বড় উপহার। যেটা দিয়েছেন আমার মা-বাবা। এর থেকে বড় উপহার আমি কিছু মনে করি না।

এই দিনে ভাক্তদের থেকে মেনে রাখার মতো কিছু?
অসখ্য বার। এখন তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুগ। বিভিন্ন জায়গা থেকে গিফট আসে। দেখা যায় এই দিনটা আমি ভুলে গেলেও তারা ভুল করেন না। এটা আমার কাছে অন্যরকম এটা পাওয়া। এই অনুভূতি কখনো বোঝানো যাবে না।

নতুন কাজের খবর?
‘শিরোনাম’ সিনেমা ঈদে মুক্তির পরিকল্পনা ছিল। কিছু কারণে ঈদে মুক্তি পায়নি। এছাড়া এই সিনেমা কাজ অল্পকিছু বাকি আছে। সেটা করছি। এই সিনেমার কাজ শেষ না করে ‘গোলাপ’ সিনেমার শুটিং করছে পারছি না। কারণ, এই দুই সিনেমায় চুল-দাঁড়ির ব্যাপারটা ভিন্ন ভিন্ন। তাই এই মাসে ‘শিরোনাম’ শোষ করে ‘গোলাপ’-এর শুটিং শুরু করবো।

‘গোলাপ’ সিনেমায় পরীমণির সঙ্গে প্রথম কাজ, সব মিলিয়ে প্রস্তুতি কেমন?
হ্যাঁ, এই সিনেমা দিয়ে প্রথমবার পরীমণির সঙ্গে আমি পর্দায় আসছি। সবচেয়ে বড় কথা সিনেমার গল্পটা দারুণ। ফার্স্টলুক প্রকাশের পর থেকে দর্শকের যে ভালোলাগা তৈরি হয়েছে সেটা মাথায় রেখেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। দুই/একদিন পর পর আমরা স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসছি। আলোচনা করছি। কীভাবে ভালো একটা কাজ উপহার দেওয়া যায় সেই ভাবনা নিয়ে প্রত্যেকে এগিয়ে যাচ্ছি।

বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?
ইন্ডাস্ট্রি তো ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটার প্রমাণ তো সবাই কয়েকবছর থেকে দেখছে। এখন সিনেমার বানানোর আগে আমরা প্রথম দর্শকের কথা চিন্তা করি। পরিচালক-প্রযোজকরাও এখন সেটাই করছে। কারণ, এখন দর্শক হলমুখী হচ্ছে। সুতরাং এই দর্শগুলো যেন হারিয়ে না যায়। এজন্য দরকার কম কাজ হলেও যেন কাজটা দর্শক পছন্দ করে পরবর্তীতে সিনেমা হলে আসে।

ভালো সিনেমা হলেও ঈদ ছাড়া সফলতার মুখ দেখে না, এটা নিয়ে কি বলবেন?
আমাদের সিনেমা এখন ঈদ কেন্দ্রিক। ঈদের ছাড়াও আমাদের সিনেমা নিয়ে আসা দরকার। ঈদ ছাড়া সিনেমা না চলার কারণ হিসেবে আমি মনে করি প্রচার-প্রচারণা। এটা ভালোভাবে না থাকলে একটি ভালো সিনেমাও অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে। আমি মনে করি সিনেমায় ভালো প্রচারণা থাকলে ঈদ ছাড়াও আমাদের সিনেমা চলবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন রব এই দ ন আম দ র উপহ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েদের পায়ে লুটাল ইতিহাস

মুহূর্তটি বাংলাদেশ নারী ফুটবলের জন্য স্মরণীয়। চোখধাঁধানো সেই মুহূর্তটি আসে ম্যাচের ৭২ মিনিটে। প্রতিপক্ষ এক ডিফেন্ডারের সামনে থেকে বাঁ পায়ে নিখুঁত শট নেন ঋতুপর্ণা চাকমা। হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বলটি মিয়ানমার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে চলে যায় জালে। তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর এই গোলেই কার্যত ম্যাচের গল্পটি লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের নামে। লেখা হয়ে যায় নতুন ইতিহাসের।

বুধবার ইয়াঙ্গুনে এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্বপ্নের দোরগোড়ায় চলে যায় পিটার বাটলারের দল।

কিন্তু গতকালই যে স্বপ্নটা ধরা দেবে, তা কল্পনা করেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যকার দিনের অপর ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হওয়ায় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের এশিয়ান কাপে খেলা। ১৯৮০ সালে প্রথমবার এশিয়ান কাপে খেলেছিল বাংলাদেশ পুরুষ দল। ৪৫ বছর পর তাদের কাতারে যোগ হলো মনিকা চাকমা-মারিয়া মান্দাদের নাম। দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা এখন এশিয়াডে। ২০২৬ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে মেয়েদের এশিয়ান কাপ।

নতুন এই ইতিহাস গড়ায় নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, এই অর্জন শুধু নারী ফুটবলের নয়, গোটা জাতির জন্য গর্বের। এটি আমাদের সম্ভাবনা, প্রতিভা ও অদম্য চেতনার একটি অনন্য উদাহরণ।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইন, ৭৩ ধাপ ওপরে থাকা মিয়ানমারকে হারানোর পর ৫ জুলাই তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে ভাবনা শুরু করেন কোচ পিটার বাটলার। ম্যাচের ছক কষার আগেই তাঁর জন্য স্বস্তি হয়ে এলো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিটপ্রাপ্তিতে। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘সি’তে দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ। সমান ম্যাচে মিয়ানমারের পয়েন্ট ৩। ১ পয়েন্ট করে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের। গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ যদি তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরে যায় আর মিয়ানমার জিতে যায় বাহরাইনের বিপক্ষে, তখন সমান ৬ পয়েন্ট হবে বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের। তাতেও সমস্যা নেই বাংলাদেশের। হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে বইছে বসন্তের হাওয়া। এশিয়ান পর্যায়ে লাল-সবুজের দলটি। অথচ ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর অলিম্পিক বাছাইয়ে এই মিয়ানমারের কাছে ৫-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। সাত বছরের ব্যবধানে এই বাংলাদেশ আরও পরিণত ও পরিপক্ব হয়েছে। ভারত, নেপালের মতো দলকে পেছনে ফেলে দু’বার নারী সাফের শিরোপা জিতেছে। তার পরও ম্যাচটি মিয়ানমারের মাঠে বলে ভয় ছিল বেশি। তবে মূল পর্বে এক টিকিটের দুই দাবিদার লড়াইয়ে শুরু থেকে দেখা যায় দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। বাংলাদেশের খেলায় ফুটে ওঠে পরিকল্পনার ছাপ। রক্ষণভাগ অটুট রেখে কাউন্টার অ্যাটাকে বেশ কয়েকবারই বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের মেয়েরা। তারই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ১৮ মিনিটে লিড নেয় লাল-সবুজের দলটি। বক্সের খুব কাছে শামসুন্নাহার জুনিয়রকে ফেলে দেন মিয়ানমারের ডিফেন্ডার খিন মুয়ো থান্ডার তুন।

রেফারি ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান। ঋতুপর্ণা চাকমার সেট পিস মিয়ানমারের রক্ষণ দেয়ালে লেগে ফিরে আসে। এ ফরোয়ার্ডের নেওয়া ফিরতি শট চলে যায় স্বাগতিকদের জালে। স্তব্ধ হয়ে যায় গ্যালারি। যে গ্যালারি থেকে একটু আগেও ‘মিয়ানমার, মিয়ানমার’ বলে স্লোগান উঠছিল। ২৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণার ক্রসে ছোট বক্সের ভেতরে শামসুন্নাহার জুনিয়র বলে পা লাগালেও তা ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হয়। দারুণ সুযোগ নষ্ট হওয়ায় হতাশায় মুখ লুকান শামসুন্নাহার। 

বিরতির পর বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকে মিয়ানমার। এই অর্ধে কৌশলী ফুটবল খেলে পিটার বাটলারের দল। রক্ষণভাগ আগলে রেখে কাউন্টার অ্যাটাকের পরিকল্পনায় খেলতে থাকেন মেয়েরা। তার ফল আসে ম্যাচের ৭২ মিনিটে। ঋতুপর্ণার সেই চোখধাঁধানো গোলে আত্মবিশ্বাসও যেন ভর করে পুরো দলে। বাহরাইনের বিপক্ষে ম্যাচেও বাঁ পায়ে চোখধাঁধানো গোল করেন ঋতুপর্ণা। ৮৯ মিনিটে এক গোল পরিশোধ করে মিয়ানমার। সান থাউয়ের ক্রসে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান উইন উইন। জমে ওঠে লড়াই। রেফারি অতিরিক্ত চার মিনিট দিলে মিয়ানমার প্রবল চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তবে কৌশলী বাটলার এই সময় খেলোয়াড় পরিবর্তন করে সময় ক্ষেপণ করেন। একটু পর রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই ঐতিহাসিক জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ শিবির।

সম্পর্কিত নিবন্ধ