বৌলতলী সেতু পাল্টে দিচ্ছে ২০ গ্রামের চিত্র
Published: 2nd, July 2025 GMT
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের ওপর নির্মিত বৌলতলী সেতু। ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন শুরু হয়েছে। বছরের পর বছর যাতায়াতের সীমাহীন কষ্ট, সময়ের অপচয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির অবসান ঘটিয়ে এখন এই সেতুটি হয়ে উঠেছে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাইলফলক।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী, সাতপাড়, সাহাপুর ও করপাড়া ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের ওপর যেন সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু না থাকায় প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়তে হতো এসব গ্রামের কয়েক লাখ মানুষকে। নদী পারাপারে প্রতিদিনের ভোগান্তি, রোগী পরিবহনে দেরি, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়েতে নৌকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের ওপর ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের বৌলতলী সেতু নির্মাণ করে।
আরো পড়ুন:
মামলার উপাদান থাকা সত্ত্বেও এফআরটি দিয়ে অভিযুক্তদের নিষ্পত্তি
কুড়িগ্রামে সেতুর পাটাতন দেবে আটকে গেল ট্রাক, যান চলাচল বন্ধ
গোপালগঞ্জ এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের ১২ জুলাই শুরু হয় সেতুটির নির্মাণকাজ। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে, পশ্চিম পাড়ের এপ্রোচ নির্মাণের জন্য গ্রামবাসীর জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজের সময় বাড়াতে হয় কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত আরো ৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় ২০টি গ্রামের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তাবায়ন হয়েছে। নদী পারাপারে প্রতিদিনের ভোগান্তি, রোগী পরিবহনে দেরি, শিক্ষার্থীদের কষ্টের যাত্রা সবই এখন অতীত। এখন আর কাউকে খেয়াঘাটে মাঝির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। নৌকায় করে রোগী এনে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা না করে সরাসরি গাড়িতে চড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারছে। এই পরিবর্তন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব।
বৌলতলী সেতুটি চালু হওয়ার পর এলাকাবাসী সহজেই কম সময়ে কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া, ঘোনাপাড়া, ফুকরা, রাজপাট, ওড়াকান্দি এলাকায় যাতায়াত করতে পারছেন। ব্যবসায়ী, কৃষক ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সময় ও অর্থ দুই সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষকরা দ্রুত তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারছে এবং ভালো দাম পাচ্ছেন। জেলেরা স্বল্প খরচে মাছ বাজারে নিতে পারছেন, যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। সেতুটি সমগ্র এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র
বদলে দিয়েছে।
গ্রামবাসী জানান, জমির দাম বেড়েছে। কৃষিপণ্য ও মাছ দ্রুত বাজারজাত হওয়ায় লাভ করতে পারছেন জেলে-কৃষকরা। কাজের সুযোগ তৈরি হওয়ায় কমেছে বেকারত্ব। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের হার বেড়েছে, ফলে সামাজিক উন্নয়নও ঘটছে।
বৌলতলী গ্রামের বাসিন্দা হাফিজ শিকদার বলেন, “আগে শহরে যেতে আমাদের মধুমতি নদী পার হতে হতো। ঘাটে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। ফলে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হতো অন্য দিয়ে বেশি টাকা খরচ হতো। এখন সেতুটি হওয়ায় সহজেই আমরা শহরে যেতে পারছি। আমাদের সময় ও টাকার খরচ কমেছে অনেক।”
কৃষক রফিক মুন্সী বলেন, “সেতু না থাকায় আগে আমাদের কৃষিপণ্য শহরের নিতে অনকে সমস্যায় পড়তে হতো। আমরা এখন এই সেতুটি দিয়ে
খুব সহজেই যানবাহনে নিজেদের উৎপাদিত সবজি ও চাল বাজারে নিতে পারছি। সময়মতো বাজারে পৌঁছানোয় কৃষিপণ্য যেমন নষ্টের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে, তেমনি দামও ভালো পাচ্ছি।”
বৌলতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “আগে নদীর দুই পাড়ে থাকা অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ যাতায়াতে সীমাহীন হয়রানির শিকার হতেন। নদীর পাড়ে নৌকার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হতো। সেতু নির্মাণ হওয়ায় এখন এই অঞ্চলের মানুষ গ্রামে থেকেও শহরের মতো সুবিধা পাচ্ছেন। যা শুধু আর্থিক নয়, মানসিক শান্তিও দিয়েছে। এলাকার অর্থ-সামজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই সেতু।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, “নতুন রাস্তা বা সেতু এলাকার মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বৌলতলী সেতুও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০টি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি পরিবর্তন এসেছে সেতুর কারণে। যা আর্থিক, সামাজিক ও মানবিক সবদিক থেকেই ইতিবাচক।”
তিনি বলেন, “মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের ওপর বৌলতলী সেতুটি কেবল একখণ্ড কংক্রিটের সেতু নয়, এটি এই এলাকার মানুষের আশা, স্বপ্ন ও উন্নয়নের প্রতীক। এলাকার মানুষ এখন দ্রুত যাতায়াত করতে পারছেন। তাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং উন্নত ব্যবসায়িক সুযোগ পাচ্ছেন এলাকাবাসী এই সেতু ব্যবহারের মাধ্যমে।”
ঢাকা/নূর/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ র জন য এল ক র এই স ত র সময় ব লতল হওয় য়
এছাড়াও পড়ুন:
ইভিএম কেনায় তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
বাজারমূল্যের চেয়ে দশ গুণ বেশি দামে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। দেড় লক্ষ নিম্নমানের ইভিএম কেনায় সরকারের প্রায় ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকা ক্ষতি বা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
বুধবার যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারা হলেন– নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. ফরহাদ হোসেন, সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট ফারজানা আখতার। এ ছাড়া আরও তিন কর্মকর্তাকে ডাকা হলেও গতকাল হাজির হননি। তারা হলেন– নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপপ্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী, সহকারী প্রধান মো. মাহফুজুল হক ও আইটি সিস্টেম কনসালট্যান্ট এ এইচ এম আব্দুর রহিম খান।
কে এম নূরুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, সরকারি আর্থিক বিধিবিধান লঙ্ঘন, কোনো সমীক্ষা ও টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ইভিএম মেশিন ক্রয়ের অভিযোগ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনে গুণগত মানসম্পন্ন ইভিএম সরবরাহ করা হয়েছে কিনা এবং প্রতিটি ইভিএমের মূল্য সঠিক ছিল কিনা– দুদক এ-সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ বের করে প্রতিবেদন তৈরি করবে। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ টিম এই অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গতকাল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিন কর্মকর্তা ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে অভিযোগ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে ইসি ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।