ঋতুপর্ণার গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করল বাংলাদেশ
Published: 2nd, July 2025 GMT
ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। মিয়ানমারের ঘরের মাঠ বলে কথা! প্রথম ১৫ মিনিট স্বাগতিক দর্শকদের গর্জনে প্রকম্পিত থাকে গ্যালারি। মাঠেও দুই দল সমানতালে লড়ে যায়। ততক্ষণ পর্যন্ত গোলমুখে কেউই সুবিধা করতে পারেনি।
শেষমেশ ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ পেয়ে যায় সুযোগ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুরো থুউন্না স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দেন ঋতুপর্ণা চাকমা, বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। বিরতিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্কোরলাইন সমান করার অনেক চেষ্টা করেও পারেনি মিয়ানমার।
ম্যাচের ১১ ও ১২ মিনিটে দুই দুবার বাংলাদেশের রক্ষণ দেয়াল ফাঁকি দিয়ে আক্রমণ শানায় মিয়ানমার। দুটি আক্রমণই পোস্ট ছেড়ে এসে রুখে দেন বাংলাদেশের গোলকিপার রুপনা চাকমা। ১৭ মিনিটে ড্রিবল করে ডি বক্সে ঢোকার পথে ফাউলের শিকার হন শামসুন্নাহার জুনিয়র। তাতে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ।
১৮ মিনিটে সেই ফ্রি-কিক থেকে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে মিয়ানমারের জালে বল জড়ান ঋতুপর্ণা। প্রথম দফায় ঋতুপর্ণার শট প্রতিপক্ষের রক্ষণ লেগে ফিরে আসে। ফিরতি শটে পোস্টের কোনাকুনি দিয়ে বল জালে পাঠান এই ফরোয়ার্ড।
২৩ মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠার পর ঋতুপর্ণার ক্রসে শট নিলেও বল পোস্টে রাখতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। ৩৫ মিনিটে মিয়ানমার বল জালে জড়ালেও অফসাইডে সেই গোল কাটা পড়ে। এর এক মিনিট পর আরও একবার বাংলাদেশের ছেঁড়া রক্ষণের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকেরা। ৪২ মিনিটে ফ্রি কিক পাওয়া মিয়ানমার তিন-তিনবার বাংলাদেশের গোলমুখে শট নিয়েও লক্ষ্যে বল পৌঁছাতে পারেনি।
এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সেই দিনই মিয়ানমার ৮–০ গোলে হারায় তুর্কমেনিস্তানকে। ‘সি’ গ্রুপে থাকা দুই দলের পয়েন্ট সমান তিন হওয়ায় আজকের ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ধারেভারে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে মিয়ানমার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান এখন ৫৫। আর বাংলাদেশ আছে ১২৮ নম্বরে। দুই দলের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের তফাৎটা ৭৩।
এই ম্যাচের আগে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলেছে একবার; ২০১৮ সালে অলিম্পিক বাছাইয়ে। সেই ম্যাচে মিয়ানমারের মাটিতে ৫-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ মেয়েরা। এশিয়ান বাছাইয়ে বাংলাদেশর অতীতও সুখকর ছিল না। এবারের আগে ২০২২ ও ২০১৪ আসরে পাঁচ ম্যাচে একটিও জয় পায়নি। উল্টো হজম করে ২৫ গোল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)