বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর নিয়েও ছুটে এসেছেন কবিতা পাতাং (৭৩)। চোখে-মুখে বিস্ময় ছড়িয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন একটি নলকূপের দিকে। তাঁর ভাষ্য, এত গভীর নলকূপ এলাকাটিতে এর আগে ছিল না। শুধু কবিতা নন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপারটি হচ্ছে—লাল রঙের নয়, নলকূপটি থেকে বের হচ্ছে স্বচ্ছ সুপেয় পানি। অথচ প্রান্তিক জনপদের এসব মানুষ যুগ যুগ ধরে পানির জন্য কষ্ট করেছেন।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের ঘিলাগড়া গ্রামবাসীর জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে সম্প্রতি প্রথমবারের মতো সুপেয় পানির গভীর নলকূপটি স্থাপন করা হয়েছে। বাসিন্দারা আশা করছেন, এর মাধ্যমে পানির জন্য নিজেদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কবিতার ভাষ্য, ‘আমরা কুয়া খুঁইড়া পানি খাই। কল (টিউবওয়েল) দিলে লাল পানি বাইর অয়, খাওন যায় না। হের লাইগ্যা কেউ কল করত না। অহন এই ডিপকল (গভীর নলকূপ) হইছে, মনে অয় পানির কষ্ট কিছুডা দূর অইব।’

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাসনাগিরী এলাকার বিপরীত অংশে ঘিলাগড়া গ্রামের অবস্থান। ময়মনসিংহ শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামে প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস। সীমান্তবর্তী এ গ্রামের মাটির গভীরে খুঁড়লেই বের হয় নুড়িপাথর। এ কারণে নলকূপ স্থাপন করা যায় না। ফলে যুগ যুগ ধরে গ্রামটির মানুষের ভরসা ছিল ছড়া, কুয়া ও বৃষ্টির পানি। বাসিন্দাদের কষ্ট লাঘব করতে ঘিলাগড়া গ্রামে পাঞ্জেখানার পাশে গভীর নলকূপটি স্থাপন করে দিয়েছেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সালমান ওমর। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও কিছু গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হলে গ্রামের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন—এমনটাই আশা তাঁর।

প্রায় দুই মাস সময় নিয়ে ৪০০ ফুট গভীরে স্থাপিত হয়েছে সাবমার্সিবলটি। সেখান থেকে সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে ৫০টি পরিবারে সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামটির সব মানুষ এখান থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারবেন।

গ্রামটি কোথাও টিউবওয়েল নেই জানিয়ে কৃষক আবদুস সালাম বলেন, এ গ্রামে বাসিন্দা আছে প্রায় ৪ হাজার। সবাই নদী, ছড়া, কুয়া ও বৃষ্টির পানি খায়। বিশুদ্ধ পানির জন্য গ্রামে প্রথম গভীর নলকূপ হয়েছে।

সীমান্ত এলাকার মানুষের সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক স্ত্রীকে খুনের পর মেয়েকে দলিল বুঝিয়ে দিয়ে আত্মহনন

ময়মনসিংহ নগরীতে প্রাক্তন স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রাকিবুল করিম (৫০) নামে এক ব্যক্তি। আত্মহত্যার আগে তিনি জমিজমার দলিলপত্র তার মেয়েকে বুঝিয়ে দেন বলে জানান ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ আল মামুন। 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভোরে নগরের গুলকীবাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়। মরদেহ দুইটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত রওশন আক্তার (৪২) গুলকীবাড়ি এলাকার ওই বাসায় মেয়েকে নিয়ে সাবলেট থাকতেন। তার বাবার বাড়ি নেত্রোকোণা সদরের রাজুর বাজার এলাকায়।  রাকিবুল করিম (৫০) ময়মনসিংহ নগরের সেনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওমান প্রবাসী ছিলেন।  

আরো পড়ুন:

জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ গঠন: প্রধান উপদেষ্টা

শৌচাগারে মিলল গৃহবধূর বস্তাবন্দি লাশ

পুলিশ জানায়, রাকিবুল ও রওশন দম্পতির দুই মেয়ে। তাদের বড় মেয়ে ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ছোট মেয়ে ময়মনসিংহ নগরের ক্যান্টনমেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। রওশন গুলকীবাড়ি এলাকার একটি বাসায় ছোট মেয়েকে নিয়ে সাবলেট থাকতেন। পারিবারিক কলহের জেরে মাস তিনেক আগে রাকিবুল ও রওশন আক্তারের ডির্ভোস হয়। 

আজ মঙ্গলবার ভোরে রওশন আক্তার যে বাসায় ভাড়া থাকেন সে বাসায় প্রবেশ করেন রাবিবুল। তিনি রওশন আক্তারকে ছুরিকাঘাত করেন। মাকে ছুরিকাঘাত করতে দেখে ছোট মেয়ে রোজা আক্তার ভয়ে অন্য একটি কক্ষে আশ্রয় নেয়। রওশন আক্তারকে হত্যার পর রাকিবুল নিজে বাসার অপর একটি কক্ষে গিয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ দুইটি মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত রওশন আক্তারের ভাতিজা ইকবাল হোসেন শাওন বলেন, ‍“পারিবারিক কলহের জেরে দুইজনের ডিভোর্স হয়েছিল। সকালে রওশন আক্তারের ভাড়া বাসায় ঢুকে রাকিবুল তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। পরে তিনি মেয়েকে বেঁধে রেখে অন্য একটি রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে নেত্রকোণা থেকে এসে মরদেহ দেখতে পাই।”

বাড়িটির দায়িত্বে থাকা রকিবুল ইসলাম লিটন বলেন, “১০-১২ বছর আগে বাসাটি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন রওশন আক্তার ও তার মেয়েরা। তার বড় মেয়ে ঢাকায় থাকত। তাদের চালচলন ভালোই ছিল। হঠাৎ এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি।”

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “গত ২৪ জুন ওমান থেকে দেশে আসেন রাকিবুল করিম। তিনমাস আগে স্ত্রী কর্তৃক তিনি তালাকপ্রাপ্ত হন। আজ বাসায় ঢুকে প্রথমে স্ত্রীকে হত্যা করেন রাবিবুল। এরপর নিজের জমিজমার দলিলপত্র মেয়েকে বুঝিয়ে দিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেন।”

তিনি আরো বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না আমরা খতিয়ে দেখছি।”

ঢাকা/মিলন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাদের বাড়িতে কেবলই কান্না
  • ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ডুবে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • ঘরে ঢুকে প্রাক্তন স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, পরে আত্মহত্যা
  • নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর সাবেক স্বামীর আত্মহত্যা
  • সাবেক স্ত্রীকে খুনের পর মেয়েকে দলিল বুঝিয়ে দিয়ে আত্মহনন
  • পাকুন্দিয়ায় নৌকা ডুবি, নিহত ১ নিখোঁজ ২
  • ঈশ্বরগঞ্জে কমিটি গঠন
  • ঢাকা ও ময়মনসিংহে চালু হচ্ছে সব ধরনের অনলাইন জিডি
  • ঢাকা-ময়মনসিংহে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি