ফেলে আসা ইতিহাসকে নতুন আলোয় দেখতে হবে: মোরশেদ শফিউল হাসান
Published: 2nd, July 2025 GMT
ইতিহাসের সঙ্গে আবেগের প্রশ্ন জড়িত থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আবেগ কমে যায়। ইতিহাসকে তখন বিচার করতে হয় তথ্য ও যুক্তির কষ্টিপাথরে। তাই ফেলে আসা ইতিহাসকে নতুন আলোয় দেখতে হবে। কথাগুলো বলেছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ডের অষ্টম একক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
‘ইতিহাসের ফাঁকফোকর এবং সরল বা একপার্শ্বিক বয়ান’ শিরোনামে এই বক্তৃতা দেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। এ সময় এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। একক বক্তৃতায় ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, যুক্তবঙ্গ প্রস্তাব, পাকিস্তানের ভাষা নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, নিজস্ব মতাদর্শিক অবস্থান থেকে ইতিহাসকে নানাভাবে ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে, সেটাকে ইতিহাসের পাতা থেকে একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতিহাসের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, একটির সঙ্গে অন্যটির যোগসূত্র রয়েছে। আগের ঘটনা পরের ঘটনাকে প্রভাবিত করে।
মোরশেদ শফিউল হাসান তাঁর বক্তৃতায় ইতিহাসের বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। এর মধ্যে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন বলে আলোচনা রয়েছে, তা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এই বিতর্কিত বিষয়টির পেছনে রাজনৈতিক বা অন্যবিধ উদ্দেশ্য কাজ করে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে পক্ষে বা বিপক্ষে রবীন্দ্রনাথের অন্তত প্রকাশ্য অবস্থানের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কেও আলোকপাত করেন। ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে নির্যাতন করে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বস্তুতপক্ষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর তরফে এটি ছিল ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে এবং পরবর্তীকালেও বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অধিকার রক্ষায় তাঁর (ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত) দৃঢ়, একনিষ্ঠ ও অকুতোভয় ভূমিকার প্রতিশোধ।’ তবে এরপরও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদানকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না বলে হতাশা প্রকাশ করেন মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, ‘এটাও আমাদের খণ্ডিত ইতিহাসচর্চার একটি নমুনা।’
বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, দলটি তাদের শ্রেণিসংগ্রামের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জাতীয় মুক্তির বিষয়টিকে সঠিক গুরুত্ব দেয়নি। এ সময় মাস্টারদা সূর্য সেনসহ তাঁর সহযোদ্ধাদের স্মরণ করেন তিনি। বক্তৃতার শেষে নিজের লেখা ‘কিংবদন্তি’ নামে একটি কবিতা পড়ে শোনান মোরশেদ শফিউল হাসান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ডের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বক ত ত
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে
ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আবারও দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) দেশে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, স্বয়ং সরদার বল্লভভাই প্যাটেল সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।
খাড়গে বলেছেন, বিজেপি সরকার ২০২৪ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাই ওই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করতে হবে।
আজ শুক্রবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে খাড়গে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি আরএসএসের আদর্শকে ‘বিষের’ সঙ্গে তুলনা করেন।
খাড়গে বলেন, সরদার প্যাটেল বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকাকালে আরএসএসের জন্য কাজ করা উচিত নয়।’ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘তিনি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএস এবং জামাত-ই-ইসলামীর কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। মোদি সরকার গত বছরের ৯ জুলাই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আমরা দাবি করছি, এই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করা হোক।’
বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকী। ভারতে এবার বিজেপি সরকার দিনটিকে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করছে।
খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু উদ্যাপন করেছিল, এমন কথা সরদার প্যাটেল একটি চিঠিতে লিখেছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে এই কট্টর হিন্দুবাদী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যুক্তি দেন।
মল্লিকার্জুন খাড়গে জোর দিয়ে বলেন, সরদার প্যাটেল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্বাস করতেন, সরদার প্যাটেলের অবদান ছিল অপরিমেয়। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আরএসএস সম্পর্কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আরএসএস গান্ধীজির মৃত্যু উদ্যাপন করেছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এরপর সরকারের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’
খাড়গে বলেন, প্যাটেলের কাছে পৌঁছানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার মতাদর্শের কারণে দেশে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেটাই গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল।
বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের এই দাবির সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, কংগ্রেস এত দিন ধরে প্যাটেলের অবদানকে ‘উপেক্ষা’ করে এখন আরএসএসকে আক্রমণ করার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার করছে।
খাড়গের নিজ রাজ্য কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের র্যালিতে অংশ নেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে রাজ্য সরকার বিবাদে জড়িয়েছিল।