ইতিহাসের সঙ্গে আবেগের প্রশ্ন জড়িত থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আবেগ কমে যায়। ইতিহাসকে তখন বিচার করতে হয় তথ্য ও যুক্তির কষ্টিপাথরে। তাই ফেলে আসা ইতিহাসকে নতুন আলোয় দেখতে হবে। কথাগুলো বলেছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ডের অষ্টম একক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

‘ইতিহাসের ফাঁকফোকর এবং সরল বা একপার্শ্বিক বয়ান’ শিরোনামে এই বক্তৃতা দেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। এ সময় এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। একক বক্তৃতায় ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, যুক্তবঙ্গ প্রস্তাব, পাকিস্তানের ভাষা নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, নিজস্ব মতাদর্শিক অবস্থান থেকে ইতিহাসকে নানাভাবে ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে, সেটাকে ইতিহাসের পাতা থেকে একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতিহাসের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, একটির সঙ্গে অন্যটির যোগসূত্র রয়েছে। আগের ঘটনা পরের ঘটনাকে প্রভাবিত করে।

মোরশেদ শফিউল হাসান তাঁর বক্তৃতায় ইতিহাসের বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। এর মধ্যে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন বলে আলোচনা রয়েছে, তা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এই বিতর্কিত বিষয়টির পেছনে রাজনৈতিক বা অন্যবিধ উদ্দেশ্য কাজ করে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে পক্ষে বা বিপক্ষে রবীন্দ্রনাথের অন্তত প্রকাশ্য অবস্থানের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কেও আলোকপাত করেন। ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে নির্যাতন করে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বস্তুতপক্ষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর তরফে এটি ছিল ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে এবং পরবর্তীকালেও বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অধিকার রক্ষায় তাঁর (ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত) দৃঢ়, একনিষ্ঠ ও অকুতোভয় ভূমিকার প্রতিশোধ।’ তবে এরপরও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদানকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না বলে হতাশা প্রকাশ করেন মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, ‘এটাও আমাদের খণ্ডিত ইতিহাসচর্চার একটি নমুনা।’

বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, দলটি তাদের শ্রেণিসংগ্রামের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জাতীয় মুক্তির বিষয়টিকে সঠিক গুরুত্ব দেয়নি। এ সময় মাস্টারদা সূর্য সেনসহ তাঁর সহযোদ্ধাদের স্মরণ করেন তিনি। বক্তৃতার শেষে নিজের লেখা ‘কিংবদন্তি’ নামে একটি কবিতা পড়ে শোনান মোরশেদ শফিউল হাসান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ডের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো.

আব্দুর রহিম। সমাপনী বক্তব্য দেন ট্রাস্টের সদস্য ও বক্তৃতা আয়োজনের সভাপতি ফোরকান উদ্দিন আহমেদ। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আটটি বক্তৃতার আয়োজন করল মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ড।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বক ত ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফেলে আসা ইতিহাসকে নতুন আলোয় দেখতে হবে: মোরশেদ শফিউল হাসান

ইতিহাসের সঙ্গে আবেগের প্রশ্ন জড়িত থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আবেগ কমে যায়। ইতিহাসকে তখন বিচার করতে হয় তথ্য ও যুক্তির কষ্টিপাথরে। তাই ফেলে আসা ইতিহাসকে নতুন আলোয় দেখতে হবে। কথাগুলো বলেছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ডের অষ্টম একক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

‘ইতিহাসের ফাঁকফোকর এবং সরল বা একপার্শ্বিক বয়ান’ শিরোনামে এই বক্তৃতা দেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। এ সময় এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। একক বক্তৃতায় ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, যুক্তবঙ্গ প্রস্তাব, পাকিস্তানের ভাষা নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, নিজস্ব মতাদর্শিক অবস্থান থেকে ইতিহাসকে নানাভাবে ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে, সেটাকে ইতিহাসের পাতা থেকে একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতিহাসের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, একটির সঙ্গে অন্যটির যোগসূত্র রয়েছে। আগের ঘটনা পরের ঘটনাকে প্রভাবিত করে।

মোরশেদ শফিউল হাসান তাঁর বক্তৃতায় ইতিহাসের বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। এর মধ্যে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন বলে আলোচনা রয়েছে, তা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এই বিতর্কিত বিষয়টির পেছনে রাজনৈতিক বা অন্যবিধ উদ্দেশ্য কাজ করে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে পক্ষে বা বিপক্ষে রবীন্দ্রনাথের অন্তত প্রকাশ্য অবস্থানের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কেও আলোকপাত করেন। ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে নির্যাতন করে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বস্তুতপক্ষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর তরফে এটি ছিল ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে এবং পরবর্তীকালেও বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অধিকার রক্ষায় তাঁর (ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত) দৃঢ়, একনিষ্ঠ ও অকুতোভয় ভূমিকার প্রতিশোধ।’ তবে এরপরও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদানকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না বলে হতাশা প্রকাশ করেন মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, ‘এটাও আমাদের খণ্ডিত ইতিহাসচর্চার একটি নমুনা।’

বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, দলটি তাদের শ্রেণিসংগ্রামের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জাতীয় মুক্তির বিষয়টিকে সঠিক গুরুত্ব দেয়নি। এ সময় মাস্টারদা সূর্য সেনসহ তাঁর সহযোদ্ধাদের স্মরণ করেন তিনি। বক্তৃতার শেষে নিজের লেখা ‘কিংবদন্তি’ নামে একটি কবিতা পড়ে শোনান মোরশেদ শফিউল হাসান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ডের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আব্দুর রহিম। সমাপনী বক্তব্য দেন ট্রাস্টের সদস্য ও বক্তৃতা আয়োজনের সভাপতি ফোরকান উদ্দিন আহমেদ। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আটটি বক্তৃতার আয়োজন করল মাস্টারদা সূর্য সেন ট্রাস্ট ফান্ড।

সম্পর্কিত নিবন্ধ