গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি আলোচনা ব্যর্থ হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের
Published: 9th, July 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান মানবিক সংকটের নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধ শেষ করতে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে না পারলে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নিতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে বক্তৃতাকালে ল্যামি গাজায় ত্রাণ বিতরণের নতুন ব্যবস্থারও সমালোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু জিএইচএফের কয়েকটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার ঘটনার পর সংগঠনটির তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু জিএইচএফের কয়েকটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার ঘটনার পর সংগঠনটির তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।মঙ্গলবার ল্যামি বলেন, ‘আমরা খুবই স্পষ্ট করে বলছি, ত্রাণ বিতরণের জন্য গঠিত এ সহায়তা ফাউন্ডেশনকে আমরা সমর্থন করি না। এটি ভালোভাবে কাজ করছে না। অসংখ্য মানুষ প্রায় অনাহারে থাকছেন। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। (গাজায়) ত্রাণ বিতরণের জন্য গঠিত এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বৈশ্বিকভাবে নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে আমরা সামনের সারিতে রয়েছি।’
গত কয়েক সপ্তাহে জিএইচএফের সহায়তা নিতে গিয়ে প্রায় ৭৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলি মন্ত্রী স্মোট্রিচ ও বেন-গভিরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাজ্য১০ জুন ২০২৫পার্লামেন্টের একজন সদস্য এদিন ল্যামিকে প্রশ্ন করেন, গাজায় যদি এ অসহনীয় পরিস্থিতি চলতেই থাকে, তবে যুক্তরাজ্যের সরকার কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে? জবাবে ল্যামি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা নেব।’
যুক্তরাজ্য গত মাসে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের ওপর সে দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে তাঁদের কোনো সম্পদ থাকলে, তা জব্দ করা হবে বলেও জানায়। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে এই উগ্রবাদী দুই ইহুদি নেতার বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে ইসরায়েলি দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি, দুই ইসরায়েলি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাঁচ দেশের নিষেধাজ্ঞা১১ জুন ২০২৫ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে না, কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি অনাহারে রয়েছেন, ছোট্ট ভূখণ্ডটিতে যেকোনো সময় দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে। অবরোধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে। গত বছর লন্ডন ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র রপ্তানিও বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে পারি, আপনি জি-৭–এর আর কোনো অংশীদার বা ইউরোপজুড়ে আর কোনো মিত্র খুঁজে পাবেন না, যারা এ ব্যাপারে এই সরকারের চেয়ে বেশি কিছু করেছে।ডেভিড ল্যামি, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীঅনেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এসব পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের সমর্থক কয়েকজন এসব পদক্ষেপকে প্রতীকী হিসেবে সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইসরায়েলের ওপর কার্যকর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ব ব্যর্থ হয়েছে।
মঙ্গলবার ল্যামি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ও অবৈধভাবে বসতির সম্প্রসারণের নিন্দাও করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
আরও পড়ুনগাজায় বিতর্কিত সংস্থার ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ৩ ফিলিস্তিনি নিহত, আহত ৪৬২৮ মে ২০২৫যুক্তরাজ্যের চাপে ইসরায়েল সরকার তার আচরণে কোনো পরিবর্তন এনেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ল্যামি স্বীকার করেন, ‘পরিবর্তন যথেষ্ট নয়।’
তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লন্ডনের বর্তমান অবস্থানকে সমর্থন করে বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে পারি, আপনি জি-৭–এর আর কোনো অংশীদার বা ইউরোপজুড়ে আর কোনো মিত্র খুঁজে পাবেন না, যারা এ ব্যাপারে এই সরকারের চেয়ে বেশি কিছু করেছে।’
মঙ্গলবার ল্যামি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ও অবৈধভাবে বসতির সম্প্রসারণের নিন্দাও করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন।তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাজ্য কেবল ‘একটি পক্ষ মাত্র’ বলেও স্বীকার করে নেন ডেভিড ল্যামি।
যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। পাশাপাশি, দেশটি ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বন্দীদের অবস্থান শনাক্ত করতে সহায়তার অংশ হিসেবে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্স শত শত নজরদারি অভিযান চালিয়েছে।
আরও পড়ুনমার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে প্রাণ গেছে ৭৪৩ ফিলিস্তিনির০৬ জুলাই ২০২৫যুক্তরাজ্য নিজ দেশেও ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সম্প্রতি তারা ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের একটি অধিকার সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে এবং এর বেশ কয়েকজন সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান লেবার সরকার এখনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। গত এক বছরে কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ল্যামি বলেন, লন্ডন চায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি যেন শুধু প্রতীকী না হয়ে বরং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে একটি বাস্তব অগ্রগতির অংশ হয়।
ল্যামি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্য এমন এক সময়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চায়, যা বসতি সম্প্রসারণ, সহিংসতা এবং গাজায় যে ভয়াবহতা আমরা দেখছি, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায্য আকাঙ্ক্ষার পক্ষে পরিবেশ বদলে দিতে সহায়ক হবে।’
আরও পড়ুনগাজায় বিতরণ করা বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফের ত্রাণের বাক্সে কী আছে৩১ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ব র দ ধ য ক তর জ য র প ত র ণ ব তরণ জ এইচএফ র র পরর ষ ট ব যবস থ আর ক ন মন ত র বল ছ ন সরক র র ওপর সমর থ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, এটা কি গাজায় যুদ্ধ থামাতে পারবে
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গটি কিছুদিন ধরে আবারও জোরালোভাবে সামনে এসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি হয়েছে এবং আলোচকেরা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের পথ বের করতে আলোচনায় বসতে পারেন।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। আর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের কিছু দাবি ‘অগ্রহণযোগ্য’। তবে এরপরও তিনি কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছেন।
আজ সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সাক্ষাৎ করার কথা আছে। বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প চাইছেন যেন একটি চুক্তি হয়।
গত শনিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আগামী সপ্তাহেই গাজার ব্যাপারে একটি চুক্তি হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, হামাস পাল্টা কী প্রস্তাব দিয়েছে, সে ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি জানেন না। তবে তাদের সাড়া দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।
হামাস কী চাইছে?
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হামাসের মূল দাবি তিনটি। এর একটি হলো, গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) কার্যক্রম বন্ধ করা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে কমপক্ষে ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জুনের শেষ দিকে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানোর জন্য ইসরায়েলি সেনাদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। মানবিক সহায়তাকর্মীরা বারবার বলছেন, তাঁরা গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণে সক্ষম। তাঁরা জিএইচএফের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, জিএইচএফ ইসরায়েলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত প্রস্তাবে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসের হাতে আটক থাকা ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি ও ১৮ জন জিম্মির মরদেহ ধাপে ধাপে হস্তান্তর করা হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।গত মে মাসে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, ‘এটি (জিএইচএফ) ত্রাণকে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য পূরণের শর্তে পরিণত করেছে। এটি অনাহারকে দর-কষাকষির অস্ত্রে পরিণত করে। এটি একধরনের ঠগবাজি…সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতি আড়াল করার পর্দামাত্র।’
হামাসের মূল তিন দাবির আরেকটি হলো, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা। হামাস চায়, গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে অবস্থানে ছিল, সেখানেই যেন তারা ফিরে যায়।
গত মে মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় নতুন করে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করে। তারা শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে এবং গাজা উপত্যকার বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ইতিমধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী নেতজারিম করিডর তৈরি করেছে, যা গাজা উপত্যকাকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করেছে। এরপর গত এপ্রিল মাসে নেতানিয়াহু দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজায় মোরাগ করিডর তৈরির ঘোষণা দেন।
তৃতীয় দাবিটি হলো, আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চ মাসে ইসরায়েল একতরফাভাবে সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। অথচ ফিলিস্তিনি পক্ষ যুদ্ধবিরতির সব শর্ত মেনে চলছিল। এ কারণে এবার হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চাইছে যে ভবিষ্যতে এমনটা আর ঘটবে না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাস চায়, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করুক, যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে গেলেও যদি স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ না-ও হয়, তবু ইসরায়েল যেন আর বোমা হামলা বা স্থল অভিযান চালাতে না পারে। এসব হামলায় ইতিমধ্যে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাস চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়তা দিক যে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া ছাড়াই যদি যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তবু যেন ইসরায়েল আবার বিমান হামলা বা স্থল অভিযান শুরু না করে।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মূল প্রস্তাবে কী আছে
যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত প্রস্তাবে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসের হাতে আটক থাকা ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি ও ১৮ জন জিম্মির মরদেহ ধাপে ধাপে হস্তান্তর করা হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
এখনো ৫০ জন জিম্মি গাজায় আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ত্রাণ বিতরণ নিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহের কাজে সহায়তা করবে।
সবশেষ প্রস্তাবে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে গাজার কিছু অংশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ইসরায়েল কী বলছে
বিভিন্ন সংবাদসূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মূল প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। তবে হামাস যে সংশোধনী দিয়েছে, তাকে তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, সব জিম্মি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং হামাস পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করার লক্ষ্য বাস্তবে অসম্ভব এবং এটি নেতানিয়াহুর একটি রাজনৈতিক কৌশল, যাতে তিনি নিজের স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে পারেন।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য ইসরায়েলিদের অনেকে তাঁকেই দায়ী করে থাকেন। ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সুবিধার আওতায় মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া এবং ইসরায়েলের ক্ষমতায় টেকার মতো জনসমর্থন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান।
নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির প্রতি তাঁর কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীদের, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের জোরালো সমর্থন আছে। তাঁরা চান, ইসরায়েলি সেনা অভিযান আরও জোরদার হোক, আরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হোক এবং গাজায় অবরুদ্ধ ও ক্ষুধার্ত মানুষকে কোনো ত্রাণ না দেওয়া হোক।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য ইসরায়েলিদের অনেকে তাঁকেই দায়ী করে থাকেন। ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।ফিলিস্তিনিদের হত্যা, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া চলছেই
ইসরায়েল এখনো গাজায় প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
পশ্চিম তীরের মানুষেরা বারবার ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁদের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে এবং জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে কঠিন বাধা তৈরি করা হচ্ছে।
চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা
ট্রাম্পকে চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। আর গাজার ফিলিস্তিনিরা মরিয়াভাবে চাইছেন, যেন ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়। তবে এখনো একটি বড় বাধা থেকে গেছে।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আদনান হায়াজনে আল–জাজিরাকে বলেন ‘যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েল এবং নেতানিয়াহুর আগ্রহ নেই।’
আদনানের মতে, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা খুবই কম।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের উদ্দেশ্য স্পষ্ট...তারা চায়, জনমানবহীন একটি ভূখণ্ড। তাই ফিলিস্তিনিদের সামনে তিনটি পথ খোলা রাখা হয়েছে—অনাহারে মারা যাওয়া, নিহত হওয়া, কিংবা এই ভূমি ছেড়ে চলে যাওয়া। তবে ফিলিস্তিনিরা এখন পর্যন্ত প্রমাণ করেছেন, যা কিছুই হোক না কেন, তাঁরা এই ভূমি ছাড়বেন না।’