শীত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
Published: 10th, January 2025 GMT
‘দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে চার হয়। এ দুটি সংখ্যা গুণ করলেও চার হয়। অন্যদিকে ছয়ের সঙ্গে ছয় যোগ করলে ১২ হয়। কিন্তু দুটি সংখ্যা গুণ করলে ৩৬ হয় কেন?’ এ প্রশ্ন খুদে শিক্ষার্থী ফাহমিদা ইয়াসমিনের। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালির সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিত গণিত উৎসবে যোগ দিয়ে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ফাহমিদা। এমন আরও মজার প্রশ্ন উঠে আসে এ উৎসবের প্রশ্নোত্তর পর্বে।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গণিত উৎসবের এ আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।
এবারের গণিত উৎসবে অংশ নিতে কনকনে শীতের মধ্যেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাজির হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৭৮ শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামের বাইরে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয় উৎসবে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার সনেট ফ্রান্সিস রোজারিও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ফারজানা আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহসভাপতি রুমিলা বড়ুয়া।
উদ্বোধনের পর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন হয়। এ পর্বে শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শিক্ষকদের।
গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক রাজীব কর্মকার, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মিনহাজ হোসাইন, চট্টগ্রামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী দাশ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক দিদারুল আলম মজুমদার।
ফাহমিদার ওই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষকেরা বলেন, গুণ হয় যোগের মাধ্যমে। ভাগ হয় বিয়োগের মাধ্যমে। ছয়টা ছয় যোগ করে ৩৬ পাওয়া গেছে। আবার দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করে চার পাওয়া গেছে। ফলে হিসাবটা সহজ।
উৎসবের উদ্বোধন করে সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার সনেট ফ্রান্সিস রোজারিও সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, গণিত উৎসবে অংশ নেওয়া সবার জন্য আনন্দের। অনেকেই গণিতে ভয় পায়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এ ভয় দূর করতে হবে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ২০১৮ সালে ওই পদক এসেছিল। আমরা আশা করব, চট্টগ্রাম আবার জ্বলে উঠবে। আমরা আবার স্বর্ণপদক পাব।’
পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের নানা পরামর্শ দেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী। গতকাল কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইইউবিএটিতে ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যালে নানা আয়োজন
তরুণ প্রজন্মের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে যেতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’।
গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) আইইউবিএটির ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী উৎসবে দেশের প্রথম সারির করপোরেট গ্রুপ, ব্যাংকিং খাত, টেলিকম, ই-কমার্স, আইটি, হেলথকেয়ার, ম্যানুফ্যাকচারিং, হসপিটালিটি, এনজিও, অ্যাগ্রিবিজনেসসহ বিভিন্ন খাতের প্রায় ১৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
এবারের উৎসবে আন্তর্জাতিক কোম্পানি, মাল্টিন্যাশনাল ফার্ম এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান–সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানও ক্যাম্পাস-আধুনিক করপোরেট পরিবেশে উপস্থিত ছিল। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের বুথে ভিড় জমান হাজারো শিক্ষার্থী, গ্র্যাজুয়েট ও তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীরা।
মোট ১ হাজার ২০০-এর বেশি শূন্য পদ নিয়ে উৎসবে অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। দিনব্যাপী তারা উপস্থিত সিভি সংগ্রহ, প্রাথমিক স্ক্রিনিং, লিখিত পরীক্ষা, গ্রুপ ডিসকাশন এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানের এইচআর প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সিভি উন্নয়ন, ইন্টারভিউ প্রস্তুতি, জব রোল নির্বাচন ও করপোরেট সংস্কৃতি সম্পর্কে বাস্তবধর্মী পরামর্শ দেন।
দিনব্যাপী উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ১০টি ক্যারিয়ার সেশন, যেখানে দেশের অভিজ্ঞ মানবসম্পদ পেশাজীবীরা শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন। সেশনগুলোতে ভবিষ্যতের চাকরি–বাজারে কোন দক্ষতার চাহিদা বাড়ছে, ইন্টার্নশিপের গুরুত্ব, সিভি ও কভার লেটার প্রস্তুতি, ইন্টারভিউতে আত্মবিশ্বাস, করপোরেট আচরণ ও যোগাযোগদক্ষতা, নেতৃত্ব ও টিমওয়ার্ক, ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের কৌশল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যুগে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়।
দিনের শেষে অনুষ্ঠিত প্যানেল ডিসকাশনে বাংলাদেশের শীর্ষ করপোরেট নেতা, সফল উদ্যোক্তা ও খ্যাতনামা এইচআর পেশাজীবীরা অংশ নেন।
আয়োজন প্রসঙ্গে আইইউবিএটির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস বলেন, করপোরেট বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সরাসরি যোগাযোগ ও কর্মসংস্থান তৈরি এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইইউবিএটি সেই সুযোগই তৈরি করে চলেছে। এ ধরনের উৎসব তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, দক্ষতা উন্নত করে এবং তাদের কর্মজীবনের প্রকৃত দরজায় পৌঁছে দেয়।