‘দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে চার হয়। এ দুটি সংখ্যা গুণ করলেও চার হয়। অন্যদিকে ছয়ের সঙ্গে ছয় যোগ করলে ১২ হয়। কিন্তু দুটি সংখ্যা গুণ করলে ৩৬ হয় কেন?’ এ প্রশ্ন খুদে শিক্ষার্থী ফাহমিদা ইয়াসমিনের। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালির সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিত গণিত উৎসবে যোগ দিয়ে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ফাহমিদা। এমন আরও মজার প্রশ্ন উঠে আসে এ উৎসবের প্রশ্নোত্তর পর্বে।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গণিত উৎসবের এ আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।

এবারের গণিত উৎসবে অংশ নিতে কনকনে শীতের মধ্যেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাজির হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৭৮ শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামের বাইরে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয় উৎসবে।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার সনেট ফ্রান্সিস রোজারিও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ফারজানা আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহসভাপতি রুমিলা বড়ুয়া।

উদ্বোধনের পর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন হয়। এ পর্বে শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শিক্ষকদের।

গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক রাজীব কর্মকার, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মিনহাজ হোসাইন, চট্টগ্রামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী দাশ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক দিদারুল আলম মজুমদার।

ফাহমিদার ওই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষকেরা বলেন, গুণ হয় যোগের মাধ্যমে। ভাগ হয় বিয়োগের মাধ্যমে। ছয়টা ছয় যোগ করে ৩৬ পাওয়া গেছে। আবার দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করে চার পাওয়া গেছে। ফলে হিসাবটা সহজ।

উৎসবের উদ্বোধন করে সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার সনেট ফ্রান্সিস রোজারিও সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, গণিত উৎসবে অংশ নেওয়া সবার জন্য আনন্দের। অনেকেই গণিতে ভয় পায়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এ ভয় দূর করতে হবে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ২০১৮ সালে ওই পদক এসেছিল। আমরা আশা করব, চট্টগ্রাম আবার জ্বলে উঠবে। আমরা আবার স্বর্ণপদক পাব।’

পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের নানা পরামর্শ দেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী। গতকাল কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মেলায় ১০০ কেজির বাগাইড় মাছের দাম উঠল সাড়ে ৩ লাখ টাকা

পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ মাছের মেলা কুশিয়ারা নদীর তীরে মৌলভীবাজারের শেরপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একদিনের এ মেলাকে ঘিরে সিলেট বিভাগের ৪টি উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষের মাঝে উৎসব আমেজ বিরাজ করে।

গত রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলায় অন্তত সাড়ে ৪ কোটি টাকার মাছসহ বিভিন্ন তৈজসসামগ্রী কেনা-বেচা হয়েছে। এবারের মেলায় ১০০ কেজির একটি বাগাইড় মাছের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হেঁকেছেন বিক্রেতা।

জানা যায়, ২০০ বছর আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তিকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের মনুমুখ বাজারে মাছের মেলার আয়োজন করতেন মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন। দিন বদলের হাওয়ায় মেলা থেকে সম্প্রদায়গত বিভক্তি মুছে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

এক পর্যায়ে সংক্রান্তির সঙ্গে নবান্ন উৎসব যুক্ত হয়। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে মনুমুখ অস্থিত্ব সংকটে জৌলুস হারায়। ৭০ দশকে মেলাস্থল পরিবর্তন করে মৌলভীবাজারের শেরপুর মৌজার কুশিয়ারা তীরে আনা হয়। এরপর থেকে এই স্থানেই চলছে প্রতি বছর মেলার আয়োজন।

চাঁনপুর মৎস্য আড়তের মালিক ইকবাল হোসেন জানান, পদ্মা নদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাওর-বিল, নদী থেকে ৬০-৬৫ লাখ টাকার মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৫ কেজি ওজনের একটি বাগাইড় মাছ কেটে কেজি দরে এক লাখ ৬০ হাজার বিক্রি করেছেন।

ঢাকার যাত্রাবাড়ির সজীব দাস জানান, পদ্মানদীতে ধরা ১০-১২ লাখ টাকার রুই, কাতল, আইড়, বাগাইড় মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। 

মেঘনা মৎস্য আড়তের মালিক মিজানুর রহমান জানান, ১৯টি আড়তে অন্তত দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার পাইকারি মাছ বিক্রি হয়েছে। এ মাছ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া খুচরা বাজারে আরও প্রচুর মাছ বিক্রি হয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ছনকাপন গ্রামের সমর মিয়া, মাশকান্দি গ্রামের আরবেশ মিয়া, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘরব্রাহ্মণ গ্রামের ইয়াছিন মিয়াসহ অন্তত চার শতাধিক মেলায় খুচরা দোকানে মাছ বিক্রি করেছেন। আরবেশ মিয়া হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জে অংশে কুশিয়ারা নদীতে ধরা পড়া ৮০ ও একশ কেজি ওজনের দুটি বাগাইড় মাছসহ দেশীয় প্রজাতির বোয়াল, রুই, কাতলা, আইড় মাছের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করেন। তিনি একটি বাগাইড় মাছের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হাঁকছিলেন।

মাছ বিক্রেতা ইয়াছিন জানান, দেশীয় বড় রুই-কাতল, আইড়, বোয়াল হাজার-বারো'শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তিনি একটি ২০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ৩৫ হাজার হেঁকেছিলেন।

শেরপুর গ্রামের ক্রেতা গৌরাঙ্গ দাস জানান, সাড়ে ৮ কেজি ওজনের একটি মাশুর (গ্রাসকার্প জাতীয়) মাছ ৩২'শ টাকায় কিনেছেন।

মেলায় আসা কবি ইয়াছিন সেলিম জানান, দুই শতাধিক বছরের পুরানো মেলাটি স্থান সংকটের কারণে জৌলুস হারাচ্ছে। আগ্রহ নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে মাছ দেখেছি এবং পছন্দসই মাছ কিনেছি।

মেলা আয়োজক কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হোসেন জানান, সিলেট বিভাগের সব হাওর-বিলের বড় আকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শেরপুরের মাছের মেলায় সমাগম ঘটান বিক্রেতারা। এ মেলায় সারা দেশের হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার আগমন ঘটে। মেলায় মাছের পাশাপাশি খই, তিলুয়া, বাতাসা, খেলনা সামগ্রী, ইমিটেশনের দোকান, ফার্নিচার, সবজি, পোষক, পরিচ্ছদসহ ঘর-গৃহস্থালির সব তৈজসপত্রের দোকানিরা পসরা বসিয়ে বিক্রি করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমার কাজ কখনোই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না: রুনা খান
  • রাজশাহী কলেজে তারুণ্যের উৎসব শুরু
  • টাঙ্গাইলে ৩ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব শুরু
  • সিরাজগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের পৌষ উৎসব উদযাপন
  • বেনু ভিটায় চন্দ্রোৎসব
  • পইলের মাছের মেলায় মানুষের ঢল
  • ঢাকা উৎসবে ‘শরতের জবা’, আরও যেসব সিনেমা দেখতে পারেন
  • ইবিতে শিবিরের ৫ দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব শুরু
  • মৌলভীবাজারের শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা
  • মেলায় ১০০ কেজির বাগাইড় মাছের দাম উঠল সাড়ে ৩ লাখ টাকা