হাতের নখ ওপড়ানো। শরীরজুড়ে সিগারেট ও মশার কয়েলের ছ্যাঁকা দেওয়া। না খাইয়ে শরীর করা হয়েছে কঙ্কালসার। অপহরণের পর ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এভাবেই শিশুটিকে তৈরি করা হয়। শিশুটিকে দিয়ে দিনে করানো হতো ভিক্ষা, রাতভর চালানো হতো নির্যাতন।

সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ছয় বছর বয়সী এমনই এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পাবনা জেলা পুলিশ। অসুস্থ শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রফিকুল ইসলাম (৩০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি পাবনা সদর উপজেলার সানির দিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী শিশুটি সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় ছেলেটি মায়ের কাছে থাকত। গত বছরের ২ অক্টোবর বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে শিশুটিকে রফিকুল অপহরণ করেন বলে অভিযোগ। এরপর শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর শিশুটির মা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে পুলিশ। প্রায় ছয় মাস পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত রফিকুলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ১৮ এপ্রিল খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকায় ভিক্ষারত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি অভিযুক্ত রফিকুলকে আটক করা হয়। এরপর শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতনের তথ্য বেরিয়ে আসে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অর্থোপেডিক বিভাগের একটি শয্যায় শুয়ে আছে শিশুটি। পাশে অসহায়ের মতো ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন মা। শিশুটির শরীরের হাড় যেন বেরিয়ে আসছে। বিছানার সঙ্গে মিশে গেছে শরীর। নখের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নার্সরা। কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়।

অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয়েছিল। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন। শিশুটির সুস্থ হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।

ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, অপহরণের পর রফিকুল খাবার বন্ধ করে দেন। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করলেও সহজে খেতে দিত না, মারধর করত। সিগারেট ও জ্বলন্ত কয়েল দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দিত। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের নখ তুলে দেয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন থেকে ভিক্ষা করানো শুরু করে। সারা দিন বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ভিক্ষা করাত, রাতে নিয়ে এসে একটি কক্ষে আটকে রাখত।

শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত রফিকুল তাঁদের পূর্বপরিচিত। পরে তিনি অপহরণের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করতে পারেননি। তিনি বলেন, উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় তিনি ছেলেকে চিনতেই পারেননি। তাঁর ছেলে স্বাস্থ্যবান ছিল, মাথাভর্তি চুল ছিল। সেই ছেলেকে মাত্র ছয় মাসে কঙ্কালসার করা হয়েছে। দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।

পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এস এম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত রফিকুল সব কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার

আট বছর ধরে গাড়ি চালানোর পেশায় আছেন মো. শাহীন। প্রথমে চালাতেন ট্রাক, এখন যাত্রীবাহী বাস। তবে এটা তার মূল কারবারের আড়াল মাত্র। বাস চালানোর আড়ালে তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনেন ইয়াবার বড় চালান। প্রতি চালানে ১০–২০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে। এগুলো পৌঁছানোর বিনিময়ে তিনি পান মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি চালান এনে তিনি অন্তত ছয় লাখ টাকা পান। ফলে লাভজনক এ কারবারে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকা থেকে বাসচালক শাহীন ও সুপারভাইজার সঞ্জিত রাজবংশীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ওই সময় বাসটিতে তল্লাশি চালিয়ে ১৫ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। এই চালানটি ঢাকার গাবতলী এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ জানান, আন্তঃজেলা বাসের চালক–হেলপারদের একটি অংশ মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন রুটের পরিবহনকর্মীদের মাদকসংশ্লিষ্টতার তথ্য পেতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস পূর্ব রামপুরার মোল্লা টাওয়ারের সামনে থামানো হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে চালক ও সুপারভাইজার স্বীকার করেন, তাদের কাছে মাদকদ্রব্য আছে। এরপর তাদের দেখানো অনুযায়ী চালকের আসনের নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন ডিএনসি ধানমন্ডি সার্কেলের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, শাহীনের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর ধরে তিনি বাসে মাদক পরিবহনের কাজ করেন। এর আগে ট্রাক চালানোর সময় অন্য চালকদের মাধ্যমে এ কারবারের বিষয়ে জানতে পারেন। পরে টেকনাফের মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি প্রতি ১০ হাজার পিস ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আনুমানিক এক লাখ টাকা করে পান। এবারের চালানের জন্য পেতেন দেড় লাখের কিছু বেশি। তবে পৌঁছানোর আগেই তিনি ও তার সহযোগী ধরা পড়েন।

অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইয়াবার চালানের প্রেরক ও প্রাপকসহ আরও কয়েকজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • আগারগাঁওয়ে সেনা অভিযানে অপহৃত ৪ কিশোর উদ্ধার
  • গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক
  • অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় যুবককে গুলি করে হত্যা, আটক ৩
  • অপহৃতকে ছেড়ে দিয়ে পালানোর সময় অস্ত্র ও গুলিসহ অপহরণকারী আটক
  • ছাড়া পেলেন অপহৃত কৃষক, এক অপহরণকারী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার