অপহৃত শিশুকে ভিক্ষা করাতে নির্যাতন, শরীরজুড়ে দেওয়া হয় সিগারেটের ছ্যাঁকা
Published: 22nd, April 2025 GMT
হাতের নখ ওপড়ানো। শরীরজুড়ে সিগারেট ও মশার কয়েলের ছ্যাঁকা দেওয়া। না খাইয়ে শরীর করা হয়েছে কঙ্কালসার। অপহরণের পর ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এভাবেই শিশুটিকে তৈরি করা হয়। শিশুটিকে দিয়ে দিনে করানো হতো ভিক্ষা, রাতভর চালানো হতো নির্যাতন।
সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ছয় বছর বয়সী এমনই এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পাবনা জেলা পুলিশ। অসুস্থ শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রফিকুল ইসলাম (৩০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি পাবনা সদর উপজেলার সানির দিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী শিশুটি সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় ছেলেটি মায়ের কাছে থাকত। গত বছরের ২ অক্টোবর বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে শিশুটিকে রফিকুল অপহরণ করেন বলে অভিযোগ। এরপর শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর শিশুটির মা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে পুলিশ। প্রায় ছয় মাস পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত রফিকুলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ১৮ এপ্রিল খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকায় ভিক্ষারত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি অভিযুক্ত রফিকুলকে আটক করা হয়। এরপর শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতনের তথ্য বেরিয়ে আসে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অর্থোপেডিক বিভাগের একটি শয্যায় শুয়ে আছে শিশুটি। পাশে অসহায়ের মতো ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন মা। শিশুটির শরীরের হাড় যেন বেরিয়ে আসছে। বিছানার সঙ্গে মিশে গেছে শরীর। নখের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নার্সরা। কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়।
অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয়েছিল। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন। শিশুটির সুস্থ হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।
ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, অপহরণের পর রফিকুল খাবার বন্ধ করে দেন। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করলেও সহজে খেতে দিত না, মারধর করত। সিগারেট ও জ্বলন্ত কয়েল দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দিত। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের নখ তুলে দেয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন থেকে ভিক্ষা করানো শুরু করে। সারা দিন বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ভিক্ষা করাত, রাতে নিয়ে এসে একটি কক্ষে আটকে রাখত।
শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত রফিকুল তাঁদের পূর্বপরিচিত। পরে তিনি অপহরণের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করতে পারেননি। তিনি বলেন, উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় তিনি ছেলেকে চিনতেই পারেননি। তাঁর ছেলে স্বাস্থ্যবান ছিল, মাথাভর্তি চুল ছিল। সেই ছেলেকে মাত্র ছয় মাসে কঙ্কালসার করা হয়েছে। দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এস এম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত রফিকুল সব কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’