ট্রাম্প কেন ঠান্ডা মাথায় মার্কিন প্রতিরক্ষা দুর্বল করে দিচ্ছেন
Published: 2nd, May 2025 GMT
১৯৩৩ সালে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি জোসেফ স্তালিনকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, মস্কোকে প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্রে চালানো গোপন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
ঠিক তেমনি ১৯৮০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান যখন স্নায়ুযুদ্ধকালীন উত্তেজনা কমাতে চেয়েছিলেন, তখন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ শুলৎজ সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে জানিয়েছিলেন, রুশ গোয়েন্দারা যেন মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করেন (যেমন এইডস নাকি যুক্তরাষ্ট্রের জীবাণু গবেষণার ফল!)।
এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আগের প্রেসিডেন্টদের মতো শর্ত দেওয়ার বদলে ট্রাম্প বরং নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছেন। তিনি একতরফাভাবে ছাড় দিচ্ছেন, বিনিময়ে কিছু না চেয়ে।
ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন এমন বহু সংস্থা দুর্বল করেছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করত।
উদাহরণস্বরূপ এফবিআই থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সেই কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছে, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এতে সংস্থাটি বহু অভিজ্ঞ এজেন্ট হারিয়েছে। এমনকি এফবিআইয়ের জাতীয় নিরাপত্তা ইউনিট ও গোয়েন্দা বিভাগ থেকেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণ বা অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামো সুরক্ষা সংস্থা (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি) থেকে অন্তত ১৭ জন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের দায়িত্ব ছিল নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভুল তথ্য বা গুজবের বিরুদ্ধে কাজ করা। অথচ বরখাস্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সংস্থাটিকে আবার ‘প্রকৃত অবকাঠামো রক্ষা’য় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে (যদিও নির্বাচনব্যবস্থাও সেই অবকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত)।
অর্থাৎ ট্রাম্প রাশিয়ার মতো দেশের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবি তোলার বদলে বরং এমন সংস্থাগুলোকেই দুর্বল করে দিচ্ছেন, যেগুলো এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নিয়োজিত।
একই রকম বাজেট কাটা হয়েছে সিআইএ এবং এনএসএ থেকেও। এনএসএর পরিচালক ও উপপরিচালককে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে লরা লুমার নামের একজন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারক ছিলেন।
এসবের সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল মিডিয়া এজেন্সির তহবিল কমিয়ে দেওয়া হয়। এই সংস্থাই মূলত রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি, রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং ভয়েস অব আমেরিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমগুলোকে চালায়।
এ ধরনের বাজেট কাটছাঁটের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এফবিআই দুর্বল হয়ে যাওয়ায় তারা বিদেশি ষড়যন্ত্র বা হস্তক্ষেপ তদন্ত করতে পারছে না। আর যাঁরা মার্কিন নির্বাচনের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করতেন, তাঁদের বরখাস্ত করার ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছে। শত্রুরা নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়িয়ে দিতে পারছে। এর ফলে নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও মানুষ সন্দেহ করতে শুরু করেছে।
আমরা ইতিমধ্যেই এ ধরনের খারাপ প্রভাব দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। এখন এই সমস্যা আরও খারাপ হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোয় যেভাবে হঠাৎ করে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার ফলে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়েছেন এবং তাঁরা অসন্তুষ্ট বোধ করছেন।
প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও রোনাল্ড রিগ্যানের সময় এ ধরনের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আলোচনা হতো। রুজভেল্টের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র শর্ত দিয়েছিল—যেমন সোভিয়েতরা যেন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে গোপনে কোনো ষড়যন্ত্র চালাতে না পারে।এ অবস্থায় তাঁরা বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহজ লক্ষ্য হয়ে উঠতে পারেন। এখনই দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া ও চীন সক্রিয়ভাবে সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে চাইছে। তাঁদের নিয়োগ দিতে চাইছে এমন কিছু রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে, যেগুলো তাঁদের প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখছে।
আরেকটি বড় ক্ষতি হচ্ছে রেডিও ফ্রি ইউরোপ বা ভয়েস অব আমেরিকার মতো যেসব বিদেশে সম্প্রচারিত গণমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের কোমল শক্তি (সফট পাওয়ার) হিসেবে কাজ করত, সেগুলো বন্ধ করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সেই কূটনৈতিক প্রভাব হারাচ্ছে। অথচ এখন রাশিয়া ও চীন নিজেদের ‘সফট পাওয়ার’ বা কৌশলগত প্রচার কার্যক্রম আরও বাড়াচ্ছে। এ সময় এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।
‘আ মেজার শর্ট অব ওয়ার: আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব গ্রেট পাওয়ার সাবভার্সন’ শিরোনামে আমরা সম্প্রতি একটি বই লিখেছি। এ বইয়ে বিশ্বের ইতিহাসজুড়ে ‘চুপিসারে শত্রু দুর্বল করার কৌশল’ নিয়ে আলোচনা করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণ সত্যিই অস্বাভাবিক।
আমরা প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বহু উদাহরণ বিশ্লেষণ করেছি, যেখানে বড় শক্তিগুলো অন্য দেশের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে বা মোকাবিলা করতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এমন একটি ঘটনাও দেখিনি, যেখানে কোনো দেশ নিজের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিজে থেকেই ভেঙে দিয়েছে। তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন আসলে কী করছে?
বিশ্বরাজনীতিতে অন্য দেশের নীতিকে দুর্বল বা পরিবর্তন করার চেষ্টা নতুন কিছু নয়। এটা রাষ্ট্র পরিচালনার শুরু থেকেই হয়ে আসছে। অবশ্যই প্রতিটি মার্কিন প্রশাসনের আইনের আওতায় থেকে নিজের আমলাতন্ত্র (ব্যুরোক্রেসি) গুছিয়ে নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু ট্রাম্প যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে সবকিছু ছাঁটাই করছেন, তা গত দুই হাজার বছরের ইতিহাসে দেখা বড় শক্তিগুলোর প্রতিরক্ষা, প্রতিরোধ আর কূটনৈতিক ভারসাম্যের সব নীতি লঙ্ঘন করছে।
একটি দেশ বিদেশি হস্তক্ষেপ ঠেকায় কীভাবে
প্রথমত, দেশের মানুষকে সচেতন করে এবং নিজেকে শক্তিশালী করে (যেমন স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া)।
দ্বিতীয়ত, শত্রুদের ভয় দেখিয়ে তাদের নিরুৎসাহিত করে (যেমন যদি তারা খুব বাড়াবাড়ি করে, তাহলে পাল্টা কড়া জবাব দেওয়া হবে—এমন বার্তা দেওয়া বা শত্রুদেশের ভেতরে সত্য কথা প্রচার করে জনগণকে সচেতন করা)।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৮ সালের মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় ইউএস সাইবার কমান্ড রাশিয়ার ‘ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি’ নামের একটি প্রচারণা ইউনিটকে সরাসরি বন্ধ করে দেয়।
তৃতীয়ত, কূটনৈতিক চাপ ও সুবিধা দিয়ে শত্রুকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নিয়ম আছে। যেমন যদি শত্রু কিছু ক্ষতিকর কাজ কমায়, তাহলে আমরাও কিছু ছাড় দিই।
কিন্তু এই পদ্ধতি তখনই কাজ করে, যদি দুপক্ষের মধ্যে ‘তুমি কিছু দিলে আমি কিছু দেব’—এই লেনদেন বজায় থাকে।
‘কিছু দিলাম, কিছু চাইলাম না’—এভাবে চললে তা কৌশলগতভাবে ভুল হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প প্রশাসন কি গোপনে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো সমঝোতার চেষ্টা করছে?
যদি না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা দুর্বলতা সত্যিই নজিরবিহীন।
শত্রুরা যখন চুপিসারে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের সঙ্গে কড়া খেলায় না গিয়ে বরং নিজের প্রতিরক্ষা ভেঙে ফেলা—এটা কৌশলগতভাবে একেবারেই অযৌক্তিক।
ভোটে হস্তক্ষেপ, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং এ রকম অন্যান্য শত্রুতামূলক কার্যকলাপ ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সুরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলোকে একতরফাভাবে তুলে নেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।
প্রশ্ন হলো, এসব ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার পেছনে কি কোনো গোপন কৌশলগত যুক্তি আছে, যা আমরা বুঝতে পারছি না? নাকি ট্রাম্প শুধু রাশিয়ার সঙ্গে নিজের প্রথম মেয়াদের সম্পর্ক নিয়ে তদন্তের রাগ থেকেই এসব করছেন?
যেভাবেই হোক, যেহেতু ট্রাম্প প্রশাসন এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা নিজ দেশেরই ক্ষতি করছে বলে মনে হচ্ছে, তাই সাধারণ আমেরিকানদের এ প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার আছে।
হ্যাঁ, কিছু কৌশল হয়তো গোপন রাখা লাগতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক কৌশল ও লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কাছে স্বচ্ছ থাকা উচিত। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক দেশ।
প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও রোনাল্ড রিগ্যানের সময় এ ধরনের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আলোচনা হতো। রুজভেল্টের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র শর্ত দিয়েছিল—যেমন সোভিয়েতরা যেন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে গোপনে কোনো ষড়যন্ত্র চালাতে না পারে।
রিগ্যানের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাকটিভ মেজার্স ওয়ার্কিং গ্রুপ নামে একটি দল গঠিত হয়েছিল। দলটি বিশ্বের নানা দেশের সাংবাদিক ও কূটনীতিকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছিল, যাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ছড়ানো মিথ্যা প্রচারণা বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করা যায়।
কিন্তু আজকের দিনে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তাতে শত্রুরা আরও সহজে আঘাত হানতে পারবে।
যদি ট্রাম্প সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চান, তাহলে তাঁকে জনগণকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে বোঝাতে হবে যে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে তিনি দুর্বল করছেন না। তাঁকে দেখাতে হবে, কেন তিনি এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
জিল ক্যাস্টনার লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো এবং উইলিয়াম সি উলফোর্থ ডার্টমাউথ কলেজে গভর্নমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র স ভ য় ত ইউন ষড়যন ত র ক টন ত ক বরখ স ত ন র সময় এ ধরন র ক জ কর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও প্রতিবেদন বাতিলের দাবি
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন এবং জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বাতিলের দাবি জানিয়েছে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন। একই সঙ্গে পুরুষের অধিকার রক্ষায় পুরুষ সুরক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। এতে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা নারীবিষয়ক কমিশন বাতিল চেয়ে বক্তব্য দেন।
সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ এবং পুরুষ অধিকারকর্মীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। পাশাপাশি অবিলম্বে পুরুষ সুরক্ষা কমিশনও গঠন করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল কারীম আবরার বলেন, ‘এই কমিশন গুটিকয় মানুষের ব্যক্তিগত মতবাদ এ দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে এ কমিশন বাতিল করতে হবে।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কোনো কমিশন গঠিত হলে তা যেন এ দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগকে গুরুত্ব দেয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যালবার্ট পি কস্টা বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শুধু ইসলাম ধর্মবিরোধী নয়, একই সঙ্গে এটি খ্রিষ্টান ধর্মসহ যেকোনো ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবে।
অ্যালবার্ট পি কস্টা বলেন, যেকোনো ধর্মের মানুষের পারিবারিক রীতিনীতি তার নিজ ধর্মের নিয়ম অনুসারে হবে, এটাই স্বাভাবিক। শত শত বছর থেকে তা হয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ এসে এই নিয়ম বদলে সিভিল ল করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, এই কমিশনের প্রতিবেদনে পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল বলেন, ‘নারীর কাঁধে বন্দুক রেখে এরা (নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন) মূলত এ দেশের মানুষকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কমিশনের প্রতিবেদনে হিন্দু সম্প্রদায়ের আইনের পরিবর্তে সিভিল ল তৈরির প্রস্তাব করেছে। আমরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।’
কমিশনের উদ্দেশে প্রদীপ কুমার পাল আরও বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক আইন কেমন হবে, তা এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ঠিক করবে। আপনাদের এটা ঠিক করার কোনো এখতিয়ার নেই।’
এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, ‘আমরা মনে করি, মূলত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ধর্মবিদ্বেষী, পুরুষবিদ্বেষী ও পশ্চিমাদের অন্ধ অনুসারী নারীবাদী শ্রোণিদের নিয়ে গঠিত। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ ও পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
সভাপতির বক্তব্যে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের আইন উপদেষ্টা কাউসার হোসাইন বলেন, এই প্রতিবেদন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তো বটেই, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ও নৈতিকতার সঙ্গেও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
আরও পড়ুননারীবিষয়ক কমিশন বাতিলসহ সব দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি হেফাজতের৪ ঘণ্টা আগে