গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৮ মাসে দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত
Published: 4th, May 2025 GMT
ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে এই সময়ে ফিলিস্তিনের গাজায় বহু সাংবাদিককে সরাসরি নিশানা করে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এ তথ্য জানিয়েছে।
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ২০২৫ সালের বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচক প্রকাশ করেছে আরএসএফ। সংস্থাটি সেখানে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শুরুর দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রথম ১৮ মাসেই ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে দুই শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এসব সাংবাদিকদের মধ্যে অন্তত ৪২ জনকে হত্যা করা হয়েছে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়।
প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজা উপত্যকায় আটকে পড়া সাংবাদিকেরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। খাদ্য, পানিসহ সবকিছুরই চরম সংকটে রয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া দখলকৃত পশ্চিম তীরে সাংবাদিকেরা নিয়মিত ইসরায়েলি বাহিনী এবং সেখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারীদের হাতে হয়রানি ও হামলার শিকার হচ্ছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
শুধু ইসরায়েলি বাহিনী নয়, গাজার সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ও ইসলামিক জিহাদও সেখানে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে আরএসএফ। সংস্থাটি বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের বাধা দিচ্ছে তারা। পাশাপাশি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের করা সাইবার অপরাধ আইনও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
আরএসএফের করা এবারের গণমাধ্যম স্বাধীনতার সূচকে ফিলিস্তিনের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৩তম। এই সূচকে ২০২৪ সালের তুলনায় ছয় ধাপ অবনমন ঘটেছে ফিলিস্তিনের। সংস্থাটি বলছে, এবার তালিকায় থাকা ১৮০টি দেশের মধ্যে ১১২টি দেশেই গণমাধ্যম স্বাধীনতায় অবনতি ঘটেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গড় নম্বর কমেছে ৫৫ পয়েন্ট, যা সূচকটি প্রকাশ করার পর থেকে সর্বনিম্ন।
গাজায় সাংবাদিক হত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) দ্বারস্থ হয়েছে আরএসএফ। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজায় সাংবাদিকদের ওপর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক এই আদালতে একাধিক অভিযোগ দাখিল করেছে সংস্থাটি।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় সাংবাদিক নিহতের পৃথক একটি হিসাব দিয়েছে ফিলিস্তিন সরকারের গণমাধ্যম ব্যুরো। সংস্থাটি বলেছে, গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শুধু ২০২৪ সালেই দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ