পেশায় গ্রামপুলিশ, কনটেন্ট বানিয়ে এখন আয় লাখ টাকা
Published: 4th, May 2025 GMT
জায়গাটার নাম বাঁকড়াবাজার। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট খালটা গিয়ে মিশেছে কপোতাক্ষ নদে। ২০২১ সালের বর্ষায় এই সংযোগ খালটিতে বাঁধ দেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বাজারের মসজিদে পানি ঢুকে পড়ে। স্থানীয় জনগণের অনুরোধে মোবাইলে সেই পানির ভিডিও ধারণ করে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেন লোকমান হোসেন নামের স্থানীয় এক গ্রামপুলিশ।
যশোর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের এই ঘটনার ভিডিও মুহূর্তেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনেরও নজর এড়ায় না, ফলে দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আর লোকমান হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর কনটেন্ট নির্মাতা। বাঁকড়া জনপদে কৃষিবিষয়ক ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন তিনি। ফেসবুকে ‘কৃষি তথ্য’ নামের একটি পেজ আর ইউটিউবে ‘আওয়ার অ্যারাউন্ড’ নামের চ্যানেলে দিতে থাকেন একের পর এক ভিডিও। বর্তমানে তাঁর ফেসবুক পেজে ১৮ লাখ ফলোয়ার। ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার।
আরও পড়ুনসবাই বলেছিল, ‘কোথাও চাকরি পাবে না,’ ছয়বারের চেষ্টায় সহকারী জজ হয়েছেন তিনি০২ জুন ২০২৪লোকমান জানান, তিনি মূলত খুলনা বিভাগের বিভিন্ন কৃষিবিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করেন। ফল, ধান, পাট, সবজি, মাছ চাষসহ নানা বিষয়ে কনটেন্ট বানিয়েছেন। সপ্তাহে তিন দিন ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন। বাকি চার দিন ভিডিও তৈরির পেছনে দেন।
আমার ভিডিও দেখে অনেকে হাসাহাসি করত। আমার মন খারাপ হতো। কিন্তু আমি ভাবতাম, মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না।লোকমান হোসেনলোকমান বলেন, ‘ফেসবুক পেজ থেকে যে আয় করা যায়, জানতাম না। এলাকার এক ভাইয়ের মাধ্যমে একটি ফেসবুক পেজ খুলে ভিডিও ছাড়তে থাকি। তবে ফেসবুকের গাইডলাইন না জানার কারণে প্রথম পেজটা নষ্ট হয়ে যায়। ওই পেজ নষ্ট হওয়ার কারণে অনেক কিছু শিখেছি, যা নতুন পেজে প্রয়োগ করে সফল হয়েছি।’
কটাক্ষও সহ্য করতে হয়েছে। লোকমান বলেন, ‘আমার ভিডিও দেখে অনেকে হাসাহাসি করত। আমার মন খারাপ হতো। কিন্তু আমি ভাবতাম, মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না। কারও কথায় কান না দিয়ে কাজ করে গেছি। এখন সবাই বাহবা দেয়।’
আরও পড়ুননাসা, অ্যাপলের চাকরি ছেড়ে কেন তিনি ইউটিউবার হলেন৩০ এপ্রিল ২০২৩পেশায় গ্রামপুলিশ লোকমানের মাসিক বেতন সাড়ে ছয় হাজার টাকা, ছিল টানাটানির সংসার। এখন এই কনটেন্ট বানিয়েই মাসে আয় করছেন লাখ টাকার বেশি। নিজের বাড়ি বানিয়েছেন, কিনেছেন গাড়ি। কনটেন্ট বানিয়ে মাসে যা আয় করছেন, তাতে এখন বেশ সচ্ছল জীবনযাপন করছেন তিনি। ছোট ভাইকেও কনটেন্ট বানানো শেখাচ্ছেন। লোকমানকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অন্তত অর্ধশতাধিক তরুণ কৃষিবিষয়ক ভিডিও তৈরি শুরু করেছেন। লোকমান বলেন, ‘আমার কাছে এসব তরুণেরা এলে সাধ্যমতো সহায়তা করার চেষ্টা করি। আমি চাই আমার দেখাদেখি আরও তরুণেরা ভিডিও তৈরি করে সফল হোক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কনট ন ট ব ন য় ল কম ন ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
অপরিকল্পিত উন্নয়নের বাঁধে ডুবছে খুলনা
খুলনা নগরীর লবণচরা, বান্দাবাজার, মতিয়াখালী, শিপইয়ার্ড ও টুটপাড়ার একাংশের পানি নিষ্কাশন হয় লবণচরা, ক্ষেত্রখালী ও মতিয়াখালী খাল দিয়ে। গত এক বছর ধরে খাল তিনটির মুখে বাঁধ দিয়ে সেতু ও স্লুইসগেট নির্মাণ করছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। গত সোমবার শুরু হওয়া বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নিষ্কাশন হতে পারেনি। ফলে বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
নগরী নিরালা ও প্রান্তিক আবাসিক এলাকাসহ আশপাশের পানি নিষ্কাশন হয় নিরালা খাল দিয়ে। প্রায় এক বছর ধরে ওই খালে বাঁধ দিয়ে সেতু নির্মাণ করছে কেডিএ। ভরাট অংশের ভেতরে বেশ কয়েকটি পাইপ দেওয়া হলেও সেই পাইপ দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হয় না।
শুধু এই তিনটি খাল নয়; নগরীর ভেতরে সেতু, স্লুইসগেট, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে আরও ১০টি ড্রেন। নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খানজাহান আলী রোডের ৪ নম্বর ড্রেনের এক কিলোমিটারে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তিনটি। অস্থায়ীভাবে তৈরি এসব বাঁধ সময়মতো অপসারণ না করায় বৃষ্টির পানি নামতে পারেনি। ফলে গত তিন দিনের বৃষ্টিতে ডুবছে নগরীর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা। বুধবার তুলনামূলক কম বৃষ্টি হলেও বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে ছিল।
নগরীর ডাকবাংলো, রয়েল ও পিটিআই মোড়সহ আশপাশ এলাকার পানি খানজাহান আলী সড়কের পাশে ৪ নম্বর ড্রেন দিয়ে রূপসা নদীতে গিয়ে পড়ে। ওই ড্রেনটি পুনর্নির্মাণ করছে কেসিসি। কংক্রিটের ঢালাই সম্পন্ন করতে ড্রেনের মাঝে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়। কাজ শেষে বাঁধ অপসারণের নির্দেশনা ছিল। ঠিকাদার ওই নির্দেশ মানেননি।
মঙ্গলবার বিকেলে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৪ নম্বর ড্রেনের পিটিআই মোড়, টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের মোড় এবং কবরখানার সামনে এক কিলোমিটারের ভেতরে তিনটি বাঁধ রয়েছে। এতে পিটিআই, রয়েল মোড়, ডাকবাংলো মোড়ে পানি আটকে গেছে। পরে বাঁধগুলো অপসারণ করে কেসিসি। একই অবস্থা দেখা গেছে মোংলাবন্দর আবাসিক এলাকার ভেতরে বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন ড্রেনে। এসব ড্রেনের বাঁধ অপসারণ করা হয়নি।
কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে তৈরি বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি নামতে দেরি হয়েছে। বুধবার দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে মতিয়াখালী ও ক্ষেত্রখালী খালের পেড়িমাটি ও বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কাটা ও পানি নিষ্কাশনে প্রকৌশল বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করছে।
কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, নগরীর ভেতরে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ কিছু খাল ও ড্রেন বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কেডিএ। ফলে বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বুধবার পাঁচটি খাল থেকে বাঁধ অপসারণের জন্য কেডিএকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে হয়বরল অবস্থা
পানি নিষ্কাশন, খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের দায়িত্ব কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের। এ বিভাগটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রায় সবক’টি পদই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর থেকে পদটি শূন্য। এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোহিনুর জাহানকে। প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন।
অবশ্য কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধান পদ ফাঁকা থাকায় কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এই বিভাগে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সবাই অভিজ্ঞ। বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনার কাজ এগিয়ে নিতে আমরা ৩টি মোবাইল টিম গঠন করেছি।