জায়গাটার নাম বাঁকড়াবাজার। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট খালটা গিয়ে মিশেছে কপোতাক্ষ নদে। ২০২১ সালের বর্ষায় এই সংযোগ খালটিতে বাঁধ দেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বাজারের মসজিদে পানি ঢুকে পড়ে। স্থানীয় জনগণের অনুরোধে মোবাইলে সেই পানির ভিডিও ধারণ করে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেন লোকমান হোসেন নামের স্থানীয় এক গ্রামপুলিশ।

যশোর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের এই ঘটনার ভিডিও মুহূর্তেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনেরও নজর এড়ায় না, ফলে দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আর লোকমান হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর কনটেন্ট নির্মাতা। বাঁকড়া জনপদে কৃষিবিষয়ক ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন তিনি। ফেসবুকে ‘কৃষি তথ্য’ নামের একটি পেজ আর ইউটিউবে ‘আওয়ার অ্যারাউন্ড’ নামের চ্যানেলে দিতে থাকেন একের পর এক ভিডিও। বর্তমানে তাঁর ফেসবুক পেজে ১৮ লাখ ফলোয়ার। ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার।

আরও পড়ুনসবাই বলেছিল, ‘কোথাও চাকরি পাবে না,’ ছয়বারের চেষ্টায় সহকারী জজ হয়েছেন তিনি০২ জুন ২০২৪

লোকমান জানান, তিনি মূলত খুলনা বিভাগের বিভিন্ন কৃষিবিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করেন। ফল, ধান, পাট, সবজি, মাছ চাষসহ নানা বিষয়ে কনটেন্ট বানিয়েছেন। সপ্তাহে তিন দিন ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন। বাকি চার দিন ভিডিও তৈরির পেছনে দেন।

আমার ভিডিও দেখে অনেকে হাসাহাসি করত। আমার মন খারাপ হতো। কিন্তু আমি ভাবতাম, মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না।লোকমান হোসেন

লোকমান বলেন, ‘ফেসবুক পেজ থেকে যে আয় করা যায়, জানতাম না। এলাকার এক ভাইয়ের মাধ্যমে একটি ফেসবুক পেজ খুলে ভিডিও ছাড়তে থাকি। তবে ফেসবুকের গাইডলাইন না জানার কারণে প্রথম পেজটা নষ্ট হয়ে যায়। ওই পেজ নষ্ট হওয়ার কারণে অনেক কিছু শিখেছি, যা নতুন পেজে প্রয়োগ করে সফল হয়েছি।’

কটাক্ষও সহ্য করতে হয়েছে। লোকমান বলেন, ‘আমার ভিডিও দেখে অনেকে হাসাহাসি করত। আমার মন খারাপ হতো। কিন্তু আমি ভাবতাম, মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না। কারও কথায় কান না দিয়ে কাজ করে গেছি। এখন সবাই বাহবা দেয়।’

আরও পড়ুননাসা, অ্যাপলের চাকরি ছেড়ে কেন তিনি ইউটিউবার হলেন৩০ এপ্রিল ২০২৩

পেশায় গ্রামপুলিশ লোকমানের মাসিক বেতন সাড়ে ছয় হাজার টাকা, ছিল টানাটানির সংসার। এখন এই কনটেন্ট বানিয়েই মাসে আয় করছেন লাখ টাকার বেশি। নিজের বাড়ি বানিয়েছেন, কিনেছেন গাড়ি। কনটেন্ট বানিয়ে মাসে যা আয় করছেন, তাতে এখন বেশ সচ্ছল জীবনযাপন করছেন তিনি। ছোট ভাইকেও কনটেন্ট বানানো শেখাচ্ছেন। লোকমানকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অন্তত অর্ধশতাধিক তরুণ কৃষিবিষয়ক ভিডিও তৈরি শুরু করেছেন। লোকমান বলেন, ‘আমার কাছে এসব তরুণেরা এলে সাধ্যমতো সহায়তা করার চেষ্টা করি। আমি চাই আমার দেখাদেখি আরও তরুণেরা ভিডিও তৈরি করে সফল হোক।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কনট ন ট ব ন য় ল কম ন ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’

লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।

রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।

সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ