বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নিশ্চিত’ করার ঘোষণার পর তাঁদের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে ব্যাপক প্রত্যাশা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিনিধিত্বের বিষয় বিবেচনা এবং একই সঙ্গে প্রবাসী ভোটিংয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও সরকারের কাছে জমাকৃত প্রতিবেদনে একটি আলাদা অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে যত দ্রুত সম্ভব ভোটার তালিকায় নিবন্ধন ও তাঁদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সুপারিশ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী ভোটিং শুরু করার জন্য কাজ করছে।

দেশের প্রধান নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২–এর ২৭(১) ধারার মাধ্যমে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটারদেরকে ডাকযোগে ব্যালটে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে ২০০৮ সালে উক্ত আইনি অধিকার দেওয়ার বছরেও প্রবাসীদের জন্য কখনোই পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থায় ভোট গ্রহণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ২০০৮-২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো প্রবাসী ভোটার ভোট দিতে পারেননি।

২০০৮ সালে আইনি বিধান করার আগে দুজন নির্বাচন কমিশনার অনাবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাজ্য সফর করেন। ওই আলোচনায় বেশির ভাগ অনাবাসী বাংলাদেশি দূতাবাসে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করে ব্যক্তিগতভাবে ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া চালু করার পরামর্শ দেন। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে এ প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নূরুল হুদা কমিশন সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণে একটি সেমিনার আয়োজন করে। এ সেমিনারের সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। ২০২০–এর নভেম্বর মাসে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।

প্রবাসী ভোটিং নিশ্চিত করতে নাসির কমিশন ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেসব দেশে অবস্থান করছেন, সেসব দেশের বাস্তবতা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ওই সব দেশের সময়ের ব্যবধান বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে প্রক্সি ভোটিং, পোস্টাল ভোটিং ও অনলাইন ভোটিং নিয়ে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মতামত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুটি দল ব্যতীত সব দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই প্রবাসী ভোটিং চালু করার পক্ষে। যদিও কোন পদ্ধতিতে এটি নিশ্চিত করা হবে, সে বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। আমার জানামতে, কমিশন বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শক্রমে সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে।

প্রবাসী ভোটিং খুব সহজ নয়। এর প্রতিটি পদক্ষেপেই চ্যালেঞ্জ আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভোটার নিবন্ধনপ্রক্রিয়া থেকেই চ্যালেঞ্জ শুরু হয়। ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএর (২০২১-২২) এক জরিপ থেকে দেখা যায়, জরিপ করা ৮৭ শতাংশ দেশে প্রবাসী ভোটার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সক্রিয় নয়। ফলে অনেক ভোটারের ছবি তোলা বা বায়োমেট্রিক দেওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে যেতে চান না। আবার নির্বাচন কমিশন কত সময়ের জন্য প্রবাসী হিসেবে নিবন্ধন দেবে, সেটা আরেক জটিলতা। কারণ, একজন প্রবাসী ভোটার নির্বাচনের অব্যবহিত আগে নিবন্ধিত হয়ে নির্বাচনের পরই স্থায়ীভাবে ওই দেশ ত্যাগ করতে পারেন। যে কারণে অনেক দেশ শুধু একটি নির্বাচনের জন্য, আবার কোনো কোনো দেশ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রবাসীদের নিবন্ধন দিয়ে থাকে। এসব জটিলতার কারণে উল্লিখিত জরিপ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রবাসী ভোটারদের গড় নিবন্ধন হার মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

শুধু নিবন্ধন নয়, প্রবাসী ভোটিংয়ের যে কয়টি পদ্ধতি আছে, তার প্রতিটির দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জ আছে। তারপরও কোনো কোনো দেশে প্রবাসীদের ভোট প্রদানের হার উল্লেখ করার মতো। ওই জরিপ অনুযায়ী এ রকম দেশের সংখ্যা মাত্র ২০ শতাংশ।

উদাহরণ হিসেবে স্লোভাকিয়া ও রাশিয়ার কথা বলা যেতে পারে। স্লোভাকিয়ায় ২০২০ সালের সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৪১৪ জন এবং সার্বিক ভোট প্রদানের হার ছিল ৬৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। ওই সময় দেশটির প্রবাসী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১১৬ জন এবং ভোট প্রদান করেছিল ৩ হাজার ৮৬১ জন ভোটার (৯৩.

৮০%)।

প্রবাসী ভোটার সংখ্যা কম থাকায় এবং তাদের অবস্থান অল্প কয়েকটি দেশে থাকায় সফলতার সঙ্গে দেশটি প্রবাসী ভোটিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছিল। অন্যদিকে রাশিয়ার ২০১৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১০ কোটি ৯০ লাখ ৮ হাজার ৪২৮ জন ও সার্বিক ভোট প্রদানের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ওই সময় দেশটির প্রবাসী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫৭ জন এবং ভোট প্রদান করেছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৩৬৬ জন ভোটার (৯৮.০২%)। বলা বাহুল্য, রাশিয়ার ওই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে প্রবাসী ভোটিং পাইলটিং করার উদ্যোগের জন্য আমি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা, যেসব দেশ সফলভাবে সম্পাদন করতে পেরেছে এবং যেসব দেশ এখনো সফল হতে পারেনি, সেসব দেশের বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে আশা করি।

অন্যদিকে যেসব দেশে প্রবাসীদের ভোট প্রদানের হার ২০ শতাংশের কম, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গুয়াতেমালা (১.১৫%), পর্তুগাল (১.৮৮%), আর্জেন্টিনা (২.৭৯%), আলজেরিয়া (৪.৬৮%) এবং ইউক্রেন (৭.২৭%)। ভোটার নিবন্ধন ও ভোট প্রদান প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জের কারণে ভোট প্রদানের হার এত কম।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবাসী ভোট গ্রহণকারী দেশ ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন। ভারত ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে, মালয়েশিয়া পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে, সিঙ্গাপুর ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে কিংবা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে, ইন্দোনেশিয়া ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে কিংবা ব্যালটের মাধ্যমে কিংবা মোবাইল ব্যালটের মাধ্যমে, থাইল্যান্ড ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে প্রধানত আগাম ভোটিংয়ের মাধ্যমে এবং ফিলিপাইন ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে কিংবা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে কিংবা সীমিত ইন্টারনেট ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোট প্রদান করে। এসব দেশে প্রবাসী ভোট প্রদানের হার আলাদাভাবে ৩৫ শতাংশের বেশি নয়।

উদাহরণ হিসেবে এশিয়ার দুটি দেশ নিয়ে আলোচনা করা হলো। ভারত ২০১০ সাল থেকে প্রবাসী ভোটিং চালু করে। ২০২৪ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ভারতের অনাবাসী জনসংখ্যা প্রায় ৩৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ১১ হাজার ৮৪৬ জন প্রবাসী ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছিল এবং তাদের ক্ষুদ্র একটা অংশ ভোট দিয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯৯ হাজার ৮৪৪ এবং ২৫ হাজার ৬০৬ জন। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৪ ও ২ হাজার ৯৫৮ জন (২.৪%)। দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা থেকে দেখা যায়, ভোটাররা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দূতাবাসে গিয়ে ভোট প্রদানে উৎসাহ দেখান না।

২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় সশস্ত্র বাহিনী, সরকারি কর্মচারী ও ছাত্রদের জন্য প্রবাসী ভোটিং চালু ছিল। ২০১১ সালে সংসদের সিলেক্ট কমিটি বিদেশে বসবাসকারী সব মালয়েশিয়ানের জন্য প্রবাসী ভোট চালু করার পরামর্শ দিলে আইন সংশোধন করা হয়।

নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রবাসী ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাসে ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়। বর্তমানে দেশটি অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন ও পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়ায় প্রবাসী ভোট নিশ্চিত করে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রবাসী ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছিল ৫৪ হাজার জন।

সারা বিশ্বে বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাঁদের বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে উত্তর আমেরিকায় আনুমানিক ১৩ লাখ ৮২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যে ৭৯ লাখ, ইউরোপে ১৮ লাখ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৭ লাখ, আফ্রিকায় তিন লাখ, ওশেনিয়ায় ১ লাখ ৩০ হাজার, দক্ষিণ এশিয়ায় এক লাখ, পূর্ব এশিয়ায় ৭৮ হাজার এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ২ হাজার ৫০০ জন বসবাস করেন। বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতির কারণে আগামী নির্বাচনে কোনোভাবেই সব দেশে প্রবাসী ভোটিং চালু করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য যে নির্বাচন কমিশন ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯টি দেশে প্রবাসী ভোটারদের জন্য নিবন্ধন চালু করতে পেরেছে। জানামতে, আরও সাতটি দেশে শিগগিরই নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারের মতো প্রবাসী ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশ ইতিমধ্যে ভোটার তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, বিশেষ করে যাঁরা ২০০৮ সালের পর প্রবাসী হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন।

প্রবাসী ভোটিং চালু করতে গেলে আইন সংশোধন, একটি নিবন্ধন প্ল্যাটফর্ম তৈরি, ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি, ভোটার নিবন্ধন ও ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণাসহ ব্যাপকভিত্তিক এবং সময়সাপেক্ষ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। এত ব্যাপকতা ও জটিলতার কারণে অ্যাঙ্গোলা ১৯৯২ প্রবাসী ভোটিংবিষয়ক আইন প্রণয়ন করে ২৯ বছর পর ২০২১ সালে আইনে সংশোধন এনে ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী ভোটিং চালু করতে সমর্থ হয়। তা সত্ত্বেও দেশটির ৪ লাখ প্রবাসীর মধ্যে মাত্র ২২ হাজার মানুষ ওই নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন করে।

আগেই বলেছি, প্রবাসী ভোটিংয়ের প্রতিটি পদ্ধতির দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে পোস্টাল ভোটিং করলে খরচ হবে ভোটারপ্রতি ৭০০ টাকা। কুরিয়ারের মাধ্যমে এই ব্যয় পাঁচ হাজার টাকার মতো। খরচের কারণে অনেক দেশ প্রবাসী ভোটারদের কাছ থেকে এই ব্যয় সংকুলান করে। এ ছাড়া পোস্টাল ব্যালটে বিশ্বব্যাপী গড় সিস্টেম লস ২৪ শতাংশ। শেষ মুহূর্তে কোনো আসনের প্রার্থিতায় পরিবর্তন এলে পোস্টাল ভোটিং অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

প্রক্সি ভোটিংয়ের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে ভোটারের ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটার সম্ভাবনা এবং অন্তত একজনের কাছে ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারা। তবে প্রক্সি ভোটিং সবচেয়ে সহজ এবং ব্যয়ও কম। অন্যদিকে দূতাবাসে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করে ব্যক্তিগতভাবে ভোট আয়োজনে অনেক দেশই অনুমোদন দেবে না।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে প্রবাসী ভোটিং পাইলটিং করার উদ্যোগের জন্য আমি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা, যেসব দেশ সফলভাবে সম্পাদন করতে পেরেছে এবং যেসব দেশ এখনো সফল হতে পারেনি, সেসব দেশের বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে আশা করি।

আমরা যেন প্রবাসী ভোটিং চালু করতে গিয়ে হোঁচট না খাই ও তাড়াহুড়া না করি। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর অনেক দেশ বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার পর পাইলটিং শুরু করেছে।

ড. মো. আব্দুল আলীম নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। সদ্য সাবেক নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চনব যবস থ ন শ চ ত কর প রব স দ র সব দ শ র ন প রব স হ জ র হয় অন ক দ শ য সব দ শ প রক র য় ব যবস থ দ শট র উল ল খ ব শ বব অন য য় ন করত বসব স দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ক্রিকেটারের বিপিএলের নিলাম থেকে বাদ পড়ার ৩ কারণ

অবশেষে জল্পনাকল্পনা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে এবারের বিপিএল। বিসিবির দুর্নীতি দমন পরামর্শক অ্যালেক্স মার্শালের করা অধিকতর তদন্তের পর গত বিপিএলে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার সন্দেহে ৯ ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে কাল নিলামের জন্য চূড়ান্ত খেলোয়াড় তালিকা প্রকাশ করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। আজ বিকেলে র‌্যাডিসন হোটেলে হবে দ্বাদশ বিপিএলের নিলাম।

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মির্জা হুসাইন হায়দারের নেতৃত্বে বিসিবির তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ৯ জন স্থানীয় ও ১ জন বিদেশি ক্রিকেটারকে গত বিপিএলে ফিক্সিংয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সন্দেহভাজনদের তালিকায় নাম আছে ৬–৭ জন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা, একজন কোচ ও একজন মিডিয়া ম্যানেজারের। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. খালেদ এইচ চৌধুরী এবং সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাসেম।

চূড়ান্ত নিলাম তালিকায় না থাকা অভিযুক্ত ৯ ক্রিকেটারের মধ্যে প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন ৮ জন। তাঁরা হলেন দুর্দান্ত রাজশাহীর এনামুল হক, শফিউল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান, ঢাকা ক্যাপিটালসের মোসাদ্দেক হোসেন ও আলাউদ্দিন বাবু এবং সিলেট স্ট্রাইকার্সের আরিফুল হক ও নিহাদুজ্জামান।

আরিফুল প্রথমে প্রাথমিক তালিকায় না থাকলেও পরে তাঁকে ঢোকানো হয়েছিল। এনামুল, মোসাদ্দেক, শফিউল, সানজামুল ও আরিফুল জাতীয় দলে খেলেছেন। জাতীয় দলে খেলা আরেক অভিযুক্ত সিলেট স্ট্রাইকার্সের আল–আমিন হোসেন প্রাথমিক তালিকাতে ছিলেন না, নেই চূড়ান্ত তালিকাতেও।

সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের মধ্যে আরও ছিলেন দুর্দান্ত রাজশাহীর সোহাগ গাজী ও ঢাকা ক্যাপিটালসে খেলা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার থিসারা পেরেরা। তবে অ্যালেক্স মার্শালের তদন্তে ‘নিষ্কৃতি’ পাওয়ায় তাঁরা দুজনই চূড়ান্ত নিলাম তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত হিসেবে এই ১১ ক্রিকেটারের নাম আসার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। এই ১১ ক্রিকেটার এবং কোচ–কর্মকর্তাসহ অভিযোগ আনা হয়েছে মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুনবিপিএল নিলামের আগে সরাসরি চুক্তি করেছেন যাঁরা১১ ঘণ্টা আগে

সূত্র জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে একই ফ্র্যাঞ্চাইজির দুজন আইসিসির ‘রেড ফ্ল্যাগ’ধারী। অর্থাৎ আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের তালিকাতেও তাঁরা সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত।

আইসিসির ‘রেড ফ্ল্যাগ’ধারী ক্রিকেটারটি শুধু গত বিপিএলেই নয়, তার আগের বিপিএলেও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড করেছেন। যদিও তদন্ত কমিটিকে ওই ক্রিকেটার বলেছেন, তাঁকে আইসিসি কেন সন্দেহ করে, সেটা নাকি তিনি জানেন না। তিনিসহ সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মূলত তিন ধরনের—খেলায় সুনির্দিষ্ট ঘটনা ঘটিয়ে সরাসরি ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকা, ফিক্সিংয়ে সহায়তা করা বা প্রস্তাব দেওয়া ও তথ্য গোপন করা।

‘রেড ফ্ল্যাগ’ধারী দুই কর্মকর্তাসহ আরও চারজন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা, একজন কোচ, একজন মিডিয়া ম্যানেজার ও বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের এক কর্মকর্তার নামও আছে স্বাধীন তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে। তবে সবার বিরুদ্ধে সরাসরি ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ করেনি কমিটি।

আরও পড়ুনব্যাট–প্যাড কিনতে পেছাচ্ছে বিপিএল২৭ নভেম্বর ২০২৫

একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগ সঠিকভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি চালাতে না পারার। তাঁর দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলোয়াড় ও অন্য কর্মকর্তারা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন বলে মনে করে কমিটি।

সন্দেভাজন মিডিয়া ম্যানেজারের বিরুদ্ধেও সরাসরি ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবু তাঁকে নিয়ে সন্দেহের অন্যতম কারণ, প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে তাঁর অনভিপ্রেত যাতায়াত। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে গত বিপিএলের সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য কাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা কিছু খেলোয়াড়–কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে তাদের ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। পরে অ্যালেক্স মার্শালের তদন্তের ভিত্তিতে বিসিবি কিছু ক্রিকেটারকে চূড়ান্ত নিলাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।’

আরও পড়ুনপ্রমাণ ছাড়াই কি ৭ ক্রিকেটারকে বিপিএল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কী বলছে বিসিবি১২ ঘণ্টা আগে

চূড়ান্ত নিলাম তালিকায় প্রাথমিক তালিকার কিছু ক্রিকেটারকে না রাখার ব্যাখ্যা দিয়ে বিসিবিও কাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কয়েকজন খেলোয়াড়সহ কিছু ব্যক্তিকে এবারের বিপিএলে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে অন্যান্য ঘরোয়া ক্রিকেটে আপাতত তাঁদের খেলতে বাধা নেই।

খেলোয়াড়দের বাইরে সন্দেহভাজনদের তালিকায় কারা আছেন, তা প্রকাশ না করলেও এবারের আসরে তাঁদের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করতে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জানিয়ে দিয়েছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।

কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইফতেখার রহমান কাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা রেড ফ্ল্যাগড (সন্দেহভাজন) আছে, তারা দলের সঙ্গে থাকতে পারবে না। না মাঠে থাকতে পারবে, না ড্রেসিংরুমে থাকতে পারবে, না বাসে চড়তে পারবে, না হোটেলে থাকতে পারবে। এটাই নিয়ম, সারা বিশ্বে এইভাবেই ইন্টিগ্রিটি ইউনিট চলে।’

অভিযুক্তরা কী বলেন

অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের দাবি, অভিযোগ প্রমাণের আগে নিলামের চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাঁদের ‘মানহানি’ করা হয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এনামুল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘একটা প্রতিবেদন দিল আর বাদ দিয়ে দিল! দোষী না, কিন্তু বিপিএল খেলতে দেবে না—এটা কী হলো? কথা শুনে হাস্যকর মনে হচ্ছে।’

শফিউল বলেন, ‘আমি যদি অভিযুক্ত হই আমাকে প্রমাণ দেখাক। মানুষের সামনে প্রমাণ নিয়ে আসুক।’

সানজামুলের কথা, ‘বিসিবির কথা হচ্ছে দোষীও না, আবার দোষী। কী প্রমাণ করল সেটা বুঝলাম না। বলছে সব জায়গায় খেলতে পারব আবার বিপিএল খেলতে পারব না। যতটুকু জানি, যারা সাজাপ্রাপ্ত, তারা সব সময় নিষিদ্ধ থাকে।’

নিহাদুজ্জামান বলেছেন, ‘খুবই অপ্রত্যাশিত এটা। কখনো কল্পনা করিনি।’ নিলাম তালিকা থেকে বাদ পড়া মানতে পারছেন না মিজানুরও, ‘কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। কী পদক্ষেপ নেব বা কী করব, সেটাও বুঝতে পারছি না।’

মোসাদ্দেক, বাবু, সোহাগ, আল–আমিন ও আরিফুলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়ার জবাবে গভর্নিং কাউন্সিল সদস্যসচিব ইফতেখারের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘রেড ফ্ল্যাগড খেলোয়াড়দের আমরা নিলামের তালিকায় রাখব না, এটা সম্পূর্ণ আমাদের সিদ্ধান্ত। এটার এখতিয়ার আমাদের আছে। আমরা বিপিএল পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই।’

আরও পড়ুনবিপিএল নিলামে জায়গা না পাওয়া অভিযুক্ত ক্রিকেটাররা কে কী বলছেন১০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাধ্যমিকে কর্মবিরতি, বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি
  • ইমরান খানকে কি ভুট্টোর পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে
  • তারেক রহমান না এলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এমন নয়: তৌহিদ হোসেন
  • কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হলো বুক অলিম্পিয়াড
  • কেমন ছিলেন সাহাবি যুগের নারীরা
  • ‘সালাতুল হাজাত’ নামাজে যে দোয়া পড়বেন
  • মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কর্মবিরতি, রোগী ভোগান্তি চরমে
  • সাখাওয়াত স্যার, আপনার কাছে জাতির যত ঋণ
  • ঘাম ঝরে একজনের, নম্বর জোটে সবার
  • ৯ ক্রিকেটারের বিপিএলের নিলাম থেকে বাদ পড়ার ৩ কারণ