গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সুস্থ থাকার গাইডলাইন
Published: 4th, May 2025 GMT
গরমে ঘরে-কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। এই সময়ে পানিশূন্যতা তৈরির ঝুঁকি বেশি। তাই অতিরিক্ত গরম আবহাওয় এবং পানিশূন্যতা দুইই অন্তঃসত্ত্বা নারীর সুস্থতার জন্য বড় বাধা। হবু মায়েরা তাই কী কী সতর্কতা মেনে চলবেন, সেই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ জেনে নিন।
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ হবু মায়েদের উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। পানির ঘাটতি পূরনের জন্য পরিমাণ মতো পানি মেপে পান করতে পারেন। বেশি পানি পান করতে হবে তার অর্থ এই নয় যে অতিরিক্ত পানি পান করবেন। অতিরিক্ত পানি পান করলে উল্টো শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে। দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করুন। যাদের শারীরিক পরিশ্রম বেশি হয় তারা আরেকটু বেশি পানি পান করতে পারেন।’’
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিয়ে এর প্রভাব ভ্রুণের ওপরও পড়ে। মায়ের শরীরের অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড কমে যেতে থাকে। ফলে সময়ের আগেই সন্তান জন্মের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়াও সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে হবু মায়ের বমি ভাব, ক্লান্তি, মাথাযন্ত্রণা এবং পেশিতে টান ধরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। হতে পারে খিঁচুনির মতো সমস্যাও। দেখা দিতে পারে বদহজমের সমস্যা। পানির ঘাটতি থেকে একজন হবু মা মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখার মতো সমস্যায় পড়তে পারেন।’’
আরো পড়ুন:
ফিট থাকতে সকালে নাস্তা গ্রহণের আগে-পরে পাঁচটি কাজ করতে পারেন
যে ভুলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করা সম্ভব না
করণীয় কী
এক.
দুই. লেবু, চিনি ও পানি সহযোগে শরবত তৈরি করে পান করতে পারেন।
তিন. পানিতে শসার টুকরো, আদাকুচি ও পুদিনা পাতা এক ঘণ্টার জন্য ভিজিয়ে রেখে ওই পানি পান করতে পারেন।
চার. খেতে পারেন শসার শরবত।
পাঁচ. মৌসুমী ফল তরমুজ বা তরমুজের শরবতও খেতে পারেন।
ছয়. নিয়মিত খাবারে যোগ করতে পারেন পাতলা ডাল, সবজির ঝোল, কম মশলা দেওয়া মাছের ঝোল, সবজি দিয়ে চিকেন স্ট্যু।
উল্লেখ্য, ক্ষুধা না পেলে জোর করে খাবেন না। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একবারে অনেক খাবার না খেয়ে সারা দিন অল্প অল্প করে খেতে পারেন। চা-কফি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আরও বিস্তারিত জানতে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন করত প ন কর সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ