১১ সন্তানের কেউ চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষক: পেছনে এক মায়ের লড়াই
Published: 4th, May 2025 GMT
প্রত্যন্ত গ্রামের একজন সাধারণ গৃহবধূ চেমন আরা বেগম (৭৮)। ১১ সন্তানের মা তিনি। স্বামী মো. আবদুল্লাহ ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালটির কর সংগ্রাহক। টানাটানির সংসারে নিত্যচাহিদা পূরণই যেখানে অনেক কঠিন, সেখানে ১১ সন্তানকে লেখাপড়া করানো অনেকের কাছে কল্পনা মনে হতে পারে; কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না চেমন আরা। নিজে উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পেলেও কঠোর শাসন আর নিয়মানুবর্তিতার জোরে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। নিজের জীবনের অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিতে হয়েছে সে কারণে।
মানুষ গড়ার কারিগর এই মা পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘অদম্য নারী’। বেসরকারি বহু সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন থেকে রত্নগর্ভা, জাতীয় পর্যায়ের রত্নগর্ভাসহ একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন এই নারী।
চেমন আরার আট ছেলে ও তিন মেয়ের সবাই উচ্চশিক্ষার গণ্ডি পেরিয়েছেন। তাঁরা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত। তাঁর তিন মেয়ের দুজন আছেন শিক্ষকতা পেশায়; আর আট ছেলের সবাই প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ছায়াঘেরা নিভৃত গ্রাম নাইখাইনে চেমন আরার বাড়ি। পাকা সড়ক ধরে ওই বাড়িতে যাওয়ার পথে রয়েছে সবুজে ঘেরা ঝোপঝাড় আর ফসলি জমি। সেখানে গিয়ে জানা গেল চেমন আরার সংগ্রামের গল্প। সে কথা জানার আগে জেনে নেওয়া যাক তাঁর সন্তানেরা কে কোথায় আছেন।
১১ সন্তান কে কোথায়
চেমন আরার ১১ সন্তানের মধ্যে প্রথমজন মোহাম্মদ শহীদ উদ্দিন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক পরিচালক। সম্প্রতি অবসরে গেছেন। শহীদ উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর এবং এলএলবি ডিগ্রি নিয়েছেন। দ্বিতীয় সন্তান মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সাতকানিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। স্নাতকোত্তর করেছেন হিসাববিজ্ঞান থেকে। তৃতীয় সন্তান মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে এমএসএস করেছেন। এরপর পড়েছেন এলএলবি।
চতুর্থ সন্তান পারভীন আকতার, স্নাতক পাস করে নারী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। পঞ্চম সন্তান মোহাম্মদ আলমগীর, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার (পরিবেশ ও বন) পদে কর্মরত। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বন ও পরিবেশবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। ষষ্ঠ সন্তান সেলিনা আকতার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন।
সপ্তম সন্তান মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন শিশুরোগবিশেষজ্ঞ। তিনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে চট্টগ্রামের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কর্মরত। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে শিশুস্বাস্থ্যে এমডি করেছেন। অষ্টম সন্তান অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ পটিয়া সরকারি কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর।
নবম সন্তান আবু সাদাৎ মুহাম্মদ সায়েম চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তিনি চুয়েট থেকে যন্ত্রকৌশলে বিএসসি পাস করে জাপানের মনবসু বৃত্তির আওতায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। দশম সন্তান রেজিনা আকতার চট্টগ্রামের হোসাইন আহমদ সিটি করপোরেশন স্কুল ও কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ করেছেন। পাশাপাশি এলএলবিও করেছেন। একাদশ সন্তান মোহাম্মদ ওমর কাইয়ুম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইইডিসিআরের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার অ্যান্ড রেসিডেন্ট অ্যাডভাইজার পদে কর্মরত। তিনি ঢাকার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ইন এপিডেমিওলজি ডিগ্রি অর্জন করেন।
চেমন আরা বেগম.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোরিয়ায় নাচবেন প্রিয়াঙ্কা
মডেল ও অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা জামান দক্ষিণ কোরিয়ায় পারফর্ম করতে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সাত বছর পর গ্ল্যামারজগতের এই তারকা পুনরায় কোরিয়া যাচ্ছেন পারফর্ম করতে।
প্রিয়াঙ্কা জানান, আগামী ৫ মে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনসন গ্র্যান্ড পার্কে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ উৎসব ও বৈশাখী মেলা ২০২৫’। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে তিনি শুধু পারফর্মই করবেন না, অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করবেন।
এ প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “বিদেশে স্টেজ শো করার যাত্রা শুরু হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া থেকেই। এরপর মালয়েশিয়া, দুবাই, ব্যাংকক, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীনে পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছি। তবে সবসময় মনে মনে চেয়েছি, আবার যেন কোরিয়ায় পারফর্ম করতে পারি। সেই ইচ্ছাটাই এবার পূরণ হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এবারের আয়োজনটা আমার জন্য একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ উপস্থাপনার পাশাপাশি স্টেজ পারফর্মও করতে হবে। তাই গত কয়েক দিন উপস্থাপনার প্রস্তুতিতেই সময় কেটেছে। আশা করছি, সব কিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারব।”
৫ মে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ৭ মে দেশে ফিরবেন প্রিয়াঙ্কা। এরপর ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন শুটিং ও অন্যান্য কাজ নিয়ে।
ঢাকা/রাহাত